শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ০৪:০৬ সকাল
আপডেট : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ০৪:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যে জনতা নয়ন বন্ডের বিচার চেয়েছিলো, সেই জনতা নয়ন বন্ডের চেয়ে আরও নিকৃষ্ট ক্রাইমে জড়িয়ে গেলো

মোজাফ্ফর হোসেন : নয়ন বন্ড কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে জনসম্মুখে কুপিয়ে হত্যা করছে একজন যুবককে। যুবক হয়তো জানে কেন তাকে মারা হচ্ছে, সে হয়তো আশ্বস্ত হয় জনগণ সামনে আছে দেখে, তাকে বাঁচানো হবে, কিন্তু কেউ এগিয়ে যায় না। আমরা ভাবি, অন্ধকারে কেউ মারতে এলে আমরা আলোতে ছুটে যাবো, একা ঘরে কেউ মারতে এলে কোনোভাবে পালিয়ে রাস্তায় দাঁড়াবো, কিন্তু আমরা জেনে যাই আমাদের যখন হত্যা করা হবে ঘরে কিংবা বাইরে তখন আমাদের আর পালানোর প্রয়োজন হবে না। জনগণ আমাকে খুন হতে দেখলে আমাকে বাঁচাবে এ মিথ্যা আসা এখন দূর হয়েছে।

অন্যদিকে চার বছরের মেয়েকে ঘরে রেখে স্কুলের খোঁজ নিতে গিয়েছিলো তাসলিমা। তাসলিমাকেও পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে জনসম্মুখে। হত্যাকারী বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা দল নয়, এবার আমজনতা নয়ন বন্ডের ভূমিকায়। প্রকাশ্যে একা এক নারীকে পিটিয়ে মারছে সম্মিলিত জনতা। তাসলিমা কি জানে তার অপরাধ? আমরা কি জানি তসলিমার অপরাধ? পেটাতে থাকা জনগণ কি জানে তসলিমার অপরাধ? তারা জানে না। অনুমান করেছে। যে জনতা নয়ন বন্ডের বিচার চেয়েছিলো সেই জনতা নয়ন বন্ডের চেয়ে আরও নিকৃষ্ট ক্রাইমে জড়িয়ে গেলো। যে জনতা চোখের সামনে একজনকে খুন হতে দেখে বাঁচায়নি, সেই জনতা একজনকে বাঁচাবে ধরে নিয়ে অন্যজনকে পিটিয়ে মারল। একবার ভেবে দেখুন, আপনাকে একটা ঘরে কয়জন খুনি হত্যা করছে; আপনাকে হত্যা করছে জনগণের মাঝে কয়েকজন মাত্র খুনি; আপনাকে হত্যা করছে সাধারণ মানুষ, যারা চিহ্নিত খুনি না। কোনো হিসাব মেলাতে পারছেন? একটা দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, খাতাকলমে প্রমাণিত। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই বলে দিনের পর দিন রাতের পর রাত পথে দাঁড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করেছি। দেশে দেশপ্রেমিক মানুষের অভাব নেই তার সদ্য প্রমাণ, প্রিয়া সাহা ট্রাম্পের কাছে দেশের ‘বদনাম’ করেছেন বলে দেশের মানুষ তাকে চিবিয়ে খাচ্ছে, কেউ কেউ তাকে পেলে প্রকাশ্যে ধর্ষণ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে, এমন ‘সাংঘাতিক’ দেশপ্রেম আমাদের।

ধর্মপ্রেমে আরও এগিয়ে। শামীম ওসমানের মতো রাজনীতিবিদও যখন ঘোষণা দেন, ‘ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করা হলে ছাড় দেওয়া হবে না’, তখন দেশে রাতারাতি তার কোটি কোটি ভক্ত জুটে যায়। নাস্তিককে খুন করে এদেশে একজন ধর্ষকও বেহেশতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এই যে এতো এতো দেশপ্রেমিক, এই যে এতো এতো ধার্মিক, এরা কোথায় থাকে? নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে কি এদের কেউ দাঁড়িয়ে ছিলো? তাসলিমাকে যখন পিটিয়ে মারা হচ্ছিল সন্দেহবশে, খুনি জনতার মধ্যে কি কেউ ছিলো? আমি একটা কথা বলি, একাত্তরে একটি ভূখ-ের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করেছি, কিন্তু সমাজ বদলের যুদ্ধে আমরা এখনো পরাজিত। পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশটা আলাদা করতে চেয়েছি, কিন্তু পাকিস্তানি জানোয়ারদের চেয়ে ভালো মানুষ হতে চাইনি; চেয়েছি কি? যে চার বছরের শিশুটার মাকে জনগণ পিটিয়ে মারলো বিনা কারণে সেই শিশুটা বড় হয়ে কোনো চেতনার কথা শুনবে? এই খুনি জনগণ কি তাকে শেখাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলিয়ান হতে? ধর্মীয় চেতনায় উন্নত হতে? শিশুটা বড় হয়ে কাকে দোষ দেবে? এই দেশটাকে কি একটি মুহূর্তের জন্য সে ভালোবাসতে পারবে? বলবেন দেশের কি দোষ; মানুষ ছাড়া কি পৃথিবীর কোনো দেশ হয়? বাংলাদেশে কি কোনো প্রকৃত মানুষ আছে? যদি না থাকে তাহলে এটা দেশ হলো কেমন করে? যদি থাকে তো প্রমাণ দেখান। তারা কই যায়, কোথায় থাকে, আমাদেরও জানা দরকার, তাহলে কেউ খুন করতে এলে বুকে আশা নিয়ে সেদিকে দৌড় দেবো। সংক্ষেপ। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়