শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১১:২১ দুপুর
আপডেট : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১১:২১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ধীরে, বানভাসি ৫৩ লাখ প্রাণহানি ৬০

মাজহারুল ইসলাম : চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ লাখ ২ হাজার ৬৯৮ জন। অন্যদিকে ২০ জুলাই পর্যন্ত বন্যায় মোট ৬০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় গঠিত নিডস অ্যাসেসমেন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।  বণিক বার্তা

প্রতিবেদনে ২১ জুলাই পর্যন্ত বন্যায় সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, এবারের বন্যায় দেশের ১৩৪টি উপজেলার ৮৬৯টি ইউনিয়ন আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৪৫। সব মিলিয়ে বন্যায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট হওয়া ঘরবাড়ির সংখ্যা ২৭ হাজার ১৭০। আংশিক বিনষ্ট হয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৬টি। এছাড়া আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৭২। সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০টি স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, উত্তরবঙ্গের দুই প্রধান নদী ব্যবস্থায় (যমুনা ও তিস্তা) পানির স্তর এবার ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী ব্যবস্থায় পানির স্তর ২৫ জুলাই পর্যন্ত একটানা কমবে। কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হয়ে পরবর্তী পাঁচদিনে তা স্থিতিশীল থাকবে। এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরো সাতদিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এবারের বন্যায় ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র প্রতিবেদনে উঠে আসে। এতে দেখা যায়, গত ১২ দিনের বন্যায় ২৪ হাজার ৩৮৮ দশমিক ৮৮ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়েছে। আংশিক বিনষ্ট হয়েছে ৮১ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমির ফসল।

ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের সিংহভাগই আমন ধান বলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়। এছাড়া ফসলের মতো গবাদিপশু, মত্স্যসম্পদ ও পোলট্রি খাতও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৫৩টি নদ-নদীতে পানি কমতে দেখা যাচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। যদিও এর সঙ্গে দুর্ভোগও বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও নাজুক অবস্থানে থাকা অন্যদের মধ্যে এ দুর্ভোগের মাত্রা তুলনামূলক বেশি। এ চিত্র দেখা গেছে বণিক বার্তার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরেও। এসব খবরে অন্যান্য অঞ্চল থেকে বন্যার পানি কমার খবর এলেও সিলেট ও লালমনিরহাটে পরিস্থিতির ফের অবনতি ঘটার তথ্য উঠে এসেছে।

কুড়িগ্রাম: নদ-নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এখনো বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তলিয়ে আছে চর, দ্বীপ ও নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি। বিভিন্ন বাঁধ, পাকা সড়ক ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো অনেকে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলোর তুলনামূলক উঁচু স্থানের বাসিন্দাদের অনেকেই নিজ ঘরে ফিরে গেছে। অন্যদিকে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় এখনো ঘরে ফিরতে পারছে না তারা।

এদিকে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় বর্তমানে ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাদুর্গতদের। হাতে কাজ না থাকার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা না পাওয়ায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বাসিন্দা আবেদ আলী বলেন, আমি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। বন্যার কারণে কোথাও কাজ নেই। ঘরে খাবারও নেই। ত্রাণের ১০ কেজি চালও শেষ হয়ে গেছে। সন্তানদের নিয়ে খুবই কষ্টে দিন পার করছি। বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলায় ১১ শিশুসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার আট লক্ষাধিক বন্যাকবলিত মানুষের জন্য এখন পর্যন্ত ৮০০ টন চাল, সাত হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

জামালপুর: জেলায় বন্যার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও বাড়ছে বানভাসিদের ভোগান্তি। গতকাল সকালে যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপত্সীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় নদীটির পানি কমেছে ৩৯ সেন্টিমিটার। এখন পর্যন্ত জেলার ৬২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় মোট ৪৪ কোটি টাকার মাছ ও খামার এবং ২৪ হাজার হেক্টর ফসলের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার ১ হাজার ১০৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

জেলায় এখন পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দেয়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ সুপেয় পানি ও গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পরিবারের শিশু ও পালিত গবাদিপশু নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে বন্যাকবলিতরা। এখন পর্যন্ত জেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় মোট ৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানভাসিদের জন্য ১ হাজার ৩৩০ টন চাল ও ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

রাজবাড়ী: জেলায় পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, জেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে নদীটির পানি বিপত্সীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় নদীটির পানি কমেছে নয় সেন্টিমিটার। এখনো জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার তিনটি, রাজবাড়ী সদর উপজেলার দুটি, কালুখালী উপজেলার দুটি, পাংশা উপজেলার দুটিসহ মোট নয়টি ইউনিয়নে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।

বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও পশুখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাবও। এছাড়া বানভাসি মানুষের ত্রাণসহায়তাও এখানে অপ্রতুল। এখন পর্যন্ত জেলায় শুধু বরাট ইউনিয়নের ২০৬টি পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বানভাসিদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আশেক হাসান জানান, রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পানিবন্দি মানুষের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই তালিকা ধরে তাদের জন্য শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

বগুড়া: জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি দ্রুত কমলেও এখনো বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় এখানে নদীটির পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপত্সীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এর আগে সকাল ৬টায় তা প্রবাহিত হচ্ছিল বিপত্সীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। অন্যদিকে একই উপজেলায় বাঙ্গালী নদীর পানি বিপত্সীমার ৮৯ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট—এ তিন উপজেলার ১৭৯টি গ্রাম এখনো জলমগ্ন রয়েছে বলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এখানকার ২ লাখ ৯ হাজার ৬২০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন উপজেলায় ৭৭টি প্রাথমিক ও ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ২৩ হাজার ৩০ হেক্টর জমির। বর্তমানে জেলার বানভাসিদের চিকিৎসাসেবা দিতে ৩২টি মেডিকেল টিম একযোগে কাজ করছে।

রংপুর: এবারের বন্যায় রংপুর জেলায় ফসল, মত্স্যসম্পদ ও ঘরবাড়ির পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদের যাতায়াত অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) হিসাব অনুযায়ী, জেলায় সংস্থাটির নির্মিত ৪২টি পাকা রাস্তা ও ১০টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার।

রংপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত ৪২টি সড়কের দৈর্ঘ্য ১৪ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি সেতুর দৈর্ঘ্য ৩৮২ মিটার, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতি নিরূপণ হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ টাকার সমপরিমাণ।

এর মধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলায় কালুরঘাটে যমুনেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর উত্তর দিকের অ্যাপ্রোচ সড়কটির প্রায় ১৫০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এখানে সব ধরনের পারাপার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মিঠাপুকুর উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান জানান, এখানে কালুরঘাটেরটিসহ মোট দুটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ তালিকা করে জেলায় পাঠানো হয়েছে।

এলজিইডি রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল হক বলেন, অতিবর্ষণ ও বন্যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবকাঠামো, রাস্তা ও ব্রিজ বা কালভার্টের ক্ষয়ক্ষতি এবং সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির পরিসংখ্যান আমরা সংগ্রহ করেছি। এরই মধ্যে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তালিকাটি এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও সেতুর সংস্কারকাজ শুরু করতে পারব।

লালমনিরহাট: হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী ইউনিয়নে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প এলাকায় তিস্তা নদীর পানি আবারো বিপত্সীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল সকালে নদীর পানি বাড়া শুরু হয়। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টায় নদীটির ব্যারাজের উজানে ডালিয়া পয়েন্টে বিপত্সীমার ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানি ঢলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (পানি পরিমাপক) আমিনুর রশীদ।

বর্তমানে তিস্তা তীরবর্তী পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিঙ্গিমারী, সিন্দুর্ণা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, গোড্ডিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভাণ্ডার, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁজা ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, গোকুণ্ডা ও পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি জীবনযাপন করছে।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট-১ আসনের (পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা) সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট (অব.) মোতাহার হোসেন বলেন, ‘তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য পানিতে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নদী খনন ও বাম তীরে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবছে সরকার।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪১০ টন চাল, সাড়ে ৯ লাখ টাকা ও ৩ হাজার ৩৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

সিলেট: ফের অবনতি হয়েছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির। গত দুদিনের টানা বৃষ্টিতে বাড়তে শুরু করেছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি। নদীতে পানিপ্রবাহের উচ্চতা বাড়লেও নতুন কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। তবে যারা পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় তাদের দুর্ভোগ আরো বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অমলসিদে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপত্সীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপত্সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপত্সীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। তবে কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাটে লোভা ও সারি নদীর পানি বাড়লেও তা এখনো বিপত্সীমার নিচে রয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বৃষ্টি আরো দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে নদীর পানি আরো বাড়তে পারে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, বন্যায় খুব বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। এখন পানি দ্রুত না কমলে তাদের দুর্ভোগ আরো বাড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়