দেবদুলাল মুন্না: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাব্যনুরাগী ছিলেন।তিনি কবিতা লেখেছেন অনেক।যেমন শ্রাবণের সৃষ্টিতে,এরিকের জন্মদিন,রুপের মোহনায়,দুর্বিসহ সাতদিন,তোমাদের দোয়াপ্রার্থী,আশায় বুক বেঁধে থাকি,হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন,বিবর্ণ উৎসবসহ প্রায় চারশোর’র অধিক। এরশাদের একটি জনপ্রিয় কবিতা ‘প্রেমগীতি’। যেখানে কবি এরশাদ লিখেছেন- ক্লান্ত বিকেলে অবশ পায়ে/ ঘুরেছি যখন এই পথে। শান্ত নদীর নিরব কিনারে/ দেখা হয়েছিলো তোমার সাথে।’ তার ২৩টি বই রয়েছে।এর মধ্যে চারটি গদ্য,বাকিগুলো কাব্যগ্রন্থ।কিন্তু তার কবিতা লেখা নিয়ে রয়েছে অনেক কথা।আহমদ ছফা তার এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘ এরশাদ ক্ষমতার নল দিয়ে কবিতা ছাঁপাতেন।কবি শামসুর রাহমান যখন দৈনিক বাংলার সম্পাদক তখন একটি পাতায় ছাঁপা হতো ‘কবি শামসুর রাহমানের মনোনীত শ্রেষ্ঠ কবিতা’। এই পাতায় শামসুর রাহমান চাপে পড়ে বাধ্য হয়েছিলেন এরশাদের কবিতা ছাঁপতে। এর জন্য কবি শামসুর রাহমান কম সমালোচিত হননি।’
এরশাদ কি সত্যি কবিতা লেখতেন নাকি অন্য কেউ তার নামে কবিতা লেখে দিতেন এ নিয়েও রয়েছে গুঞ্জন।তবে এরশাদ তার আত্মজীবনীমুলক ‘ আমার কর্ম, আমার জীবন’বইয়ে লিখেছেন, ‘তখনও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি।রংপুরে থাকতাম।সেসময় ফুটবল খেলা বেশ জনপ্রিয় ছিল।স্কুল ও কলেজ জীবনে আমি রংপুর অঞ্চলে বিভিন্ন ক্লাবে ভাড়ায় ফুটবল খেলতে যেতাম ।কবিতা লিখতাম।কারমাইকেল কলেজের সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছি।’কিন্তু তিনি এমন বললেও সৈয়দ আলী আহসান এরশাদের কবিতা লেখতেন বলে একটি গুঞ্জন চালু রয়েছে। কিন্তু ভুমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা এম এ মোমেন জানান, সৈয়দ আলী আহসান অস্বীকার করেছেন তার সাথে ব্যাক্তিগত আলাপচারিতায় যে ‘এরশাদের কবিতা তিনি লেখেননি। এসব নিছকই মিথ্যাচার।’তবে কে লেখতেন তার কবিতা? আরেকজনকে নিয়ে রয়েছে তুমুল গুঞ্জন।তিনি হলেন ফজল শাহাবুদ্দীন।কিন্তু কবি ফজল শাহাবুদ্দীন যদিও তার লেখা ‘মৌমাছি দিনে ঘুঘু ডাকা রাতে’ বইতে বলেছেন, ‘ আমার বিরুদ্ধে যদিও ফিসফাস শুনি যে এরশাদের কবিতা আমি লিখে দেই কিন্তু তা সত্য নয়।এরশাদের সঙ্গে আমার ব্যাক্তিগত ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বহুবার দেখা হয়েছে।আমি তাকে কবিতা নিয়ে আলাপ করতে দেখেছি। তার প্রিয় কবি ছিলেন ফররুখ আহমেদ। আর কবিতা ‘পাঞ্জেরী’।এই পাঞ্জেরী কবিতা তিনি বহুবার আমাকে আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন।বলাবাহুল্য এ কবিতায় মৃত্যপ্রসঙ্গ এসেছে। তার কেনো এই কবিতা প্রিয় এটি আমাকে ভাবিত করেছে।মনে প্রশ্ন জেগেছে এক দোর্দণ্ড প্রতাপশালী স্বৈরশাসক কেন মৃত্যু নিয়ে ভাবতেন। তাকে জিজ্ঞেসও করেছি। বেশি কিছু বলেননি। শুধু বলেছিলেন, ‘সেটিই তো একমাত্র সত্য। বাকি সব মায়া।’এরশাদ কবিতা যদি না ও নিজে লেখে থাকেন তবু বলতে আমার দ্বিধা নেই তার মধ্যে কবিসত্ত্বা ছিলো।’
এরশাদের কবিতা লিখে দিয়েছেন এমন তালিকায় যার নাম আসে তিনি কবি ও সাবেক আমলা আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ’র নাম।কিন্তু তিনি জীবিতাবস্থায় কখনো এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।ফলে এরশাদ কি সত্যি কবিতা লিখতেন এ ও এক রহস্য।
