আমিন মুনশি : বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত মাদক ইয়াবা। বলা হচ্ছে, দেশে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখের উপরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা সাময়িকীতে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের ৫৮ শতাংশ ইয়াবাসেবী। ২৮ শতাংশ আসক্ত ফেনসিডিল এবং হেরোইনে। গবেষকরা বলছেন, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে ইয়াবা জনপ্রিয় হতে শুরু করে ২০০০ সালের পর থেকে যখন টেকনাফ বর্ডার দিয়ে মিয়ানমার থেকে এই ট্যাবলেট আসতে শুরু করে। তারপর এটি খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। তার আগে নব্বই এর দশকে জনপ্রিয় ড্রাগ ছিল হেরোইন। তারও আগে আশির দশকে ফেনসিডিল, সেটি নব্বই এর দশকেও ছিল। (সূত্র: বিবিসি বাংলা)
ঢাকায় মুক্তি নামের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে বেডের সংখ্যা ১০০। এই কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, চিকিৎসার জন্যে তাদের কাছে যতো রোগী আসেন তার ৮০ শতাংশই এখন ইয়াবাসেবী। হেরোইন ও ফেনসিডিলের চল এখনও আছে, কিন্তু সীমিত পর্যায়ে। মুক্তির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান কনসালটেন্ট ড. আলী আসকার কোরেশী বলেন, ‘ইয়াবা গ্রহণ করলে সেটি শুরুতেই মানুষকে চাঙ্গা করে তোলে। আর সব মানুষই নিজেকে চাঙ্গা দেখতে ভালোবাসে। এ কারণে তারা ইয়াবার দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাছাড়া ছেলেরা যতো সংখ্যায় চিকিৎসা নিতে আসে, মেয়েরা কিন্তু অতোটা আসে না। সামাজিক কারণেই তাদের নেশা সংক্রান্ত সমস্যা পরিবার থেকে গোপন রাখা হয়। ফলে এটা বোঝা একটু কঠিন যে মেয়েরা কি পরিমাণে আসক্ত।’
মনোবিজ্ঞানী ড. মোহিত কামাল বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ছোট্ট একটি ট্যাবলেট। ওয়ালেটে এবং নারীদের ভ্যানিটি ব্যাগেও এটি সহজে বহন করা যায়। অনলাইনে অর্ডার দিলে পৌঁছে যায় বাড়িতে। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন যোগাযোগ অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার দেওয়া যায়। কিন্তু ফেনসিডিলের জন্যে বড় বোতল লাগে। সেটা বহন করা, খাওয়ার পর ফেলা অনেকের জন্যেই ঝামেলার। এছাড়াও এটি অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়। মেয়েদের ইয়াবার নেশা শুরু হয় ঘুমের বড়ি থেকে। নানা ধরনের মানসিক যন্ত্রণার কারণে তারা যখন রাতে ঘুমাতে পারে না তখন তারা ঘুমের বড়ির আশ্রয় নেয়। তারপর ধীরে ধীরে ইয়াবার মতো অন্যান্য মাদকেও আসক্ত হয়ে যায়।’
গবেষকরা বলছেন, মাদকাসক্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে তাদের প্রকৃত সংখ্যা কতো সেটা বলা কঠিন।
ইসলামে যে কোনো মাদকবস্তু কেনাবেচা এবং সেবন হারাম। মদ সেবনের দ্বারা মানুষের বিবেক ঠিক থাকে না। তখন তার দ্বারা যে কোনো অপরাধ সংগঠিত হতে পারে। তাই মাদকের ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে এসেছে কঠোর হুঁশিয়ারি। পবিত্র কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা, লটারী এসবই শয়তানের অপবিত্র কাজ। তোমরা উহা হতে বিরত থাকো। আশা করা যায়, তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারবে। (সূরা মায়িদা- ৯০) অন্যত্র আল্লাহপাক তাদের অভিসম্পাত দিয়েছেন, যারা মদ পান করে, যারা অন্যকে পান করায়, যারা বিক্রি করে, যারা ক্রয় করে, যারা তা নিংড়ায়, যারা উৎপাদন করে, যারা বহন করে এবং যাদের নিকটে বহন করা হয়- এটাই হাদিসের ভাষ্য।
কোরআন মাজিদের আরেক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্ধেষের সৃষ্টি করতে চায় এবং আল্লাহর জিকির ও নামাজ হতে তোমাদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। তাই তোমরা এসব জিনিস হতে বিরত থাকবে। (সূরা মায়িদা-৯১) আরেক জায়গায় বলা হযেছে, (হে নবি!) তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, উভয়ের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মহাপাপ। যদিও উহাতে মানুষের জন্যে কিছুটা উপকারিতাও রয়েছে। এগুলোর পাপ উপকারের চেয়ে অনেক বড়। (সূরা বাকারা-২১৯)