রওশন আরা, ফেসবুক থেকে : আজ ২৮ জুন। উপমহাদেশের সঙ্গীত জগতের জীবন্ত কিংবদন্তী সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী শ্রদ্ধেয়া ফেরদৌসী রহমান খালামণির 'শুভ জন্মদিন' !
বাংলাদেশ টেলিভিশনের সবচেয়ে পুরনো অনুষ্ঠান অত্যন্ত জনপ্রিয় সঙ্গীত শিক্ষার আসর 'এসো গান শিখি' অনুষ্ঠানে গান শেখানোর সুবাদে শিশুদের কাছে 'খালামণি' হিসেবেই পরিচিত হয়ে ওঠেন প্রিয় ফেরদৌসী রহমান খালামণি। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী সেই সুবাদে তাঁকে 'খালামণি' বলেই সম্বোধন করে থাকেন। আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। 'এসো গান শিখি' অনুষ্ঠানটি এখনো সমান জনপ্রিয়তা নিয়েই চলছে।
মাত্র ছয় বছর বয়সে, ১৯৪৭ সালে ফেরদৌসী রহমান খালামণি রেডিওতে প্রথম গান করেন ‘খেলাঘর’ নামের অনুষ্ঠানে। ১৯৬৪ সালের ২৫শে ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
১৯৬০ সালে ফেরদৌসী রহমান খালামণি ইউনেস্কো ফেলোশীপ পেয়ে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে ৬ মাসের সঙ্গীতের ওপর স্টাফ নোটেশন কোর্স সম্পন্ন করেন। তবে সংগীতে তাঁর প্রথম হাতেখড়ি নেন বাবা ভাওয়াইয়া সম্রাট শ্রদ্ধেয় আব্বাস উদ্দিনের কাছ থেকে।
এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার গানের রেকর্ড হয়েছে তাঁর। তিনি এদেশের প্রথম মহিলা সংগীত পরিচালক। ১৯৬০ সালে রবীন ঘোষের সাথে ‘রাজধানীর বুকে’ নামক চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেন। ১৯৬০ সালে ‘আসিয়া’ নামের চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম প্লে ব্যাক করেন। ৬০ ও ৭০-এর দশকের বহু চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তাঁর প্লে ব্যাক করা চলচ্চিত্রের সংখ্যা ২৫০-এর কাছাকাছি। ফেরদৌসী রহমান খালামণি আব্বাসউদ্দীন সংগীত একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
আমাদের সঙ্গীত ভুবনে অবদান রাখার জন্য তিনি জাতীয় পর্যায়ে নানাভাবে সন্মানিত হয়েছেন। তাঁর অর্জিত উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে আছে লাহোর চলচ্চিত্র সাংবাদিক পুরস্কার (১৯৬৩ সাল), প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পারফরম্যান্স পুরস্কার (১৯৬৫ সাল), টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৫), জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (১৯৭৭), বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (১৯৭৬), একুশে পদক (১৯৭৭ সাল)। এছাড়াও তিনি নাসিরউদ্দিন গোল্ড মেডেল পুরস্কার, মাহবুবুল্লাহ গোল্ড মেডেল, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পুরস্কার ও ১০ম সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড-এর আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।
ফেরদৌসী রহমান খালামণি ১৯৫৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং মেধাতালিকায় সপ্তম হন। ১৯৫৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ইডেন কলেজ থেকে দ্বাদশ স্থান লাভ করেন। ১৯৬১-৬২ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৪১ সালের ২৮ জুন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে জন্ম গ্রহন করেন আমাদের সবার প্রিয় চিরসবুজ শ্রদ্ধেয়া ফেরদৌসী রহমান খালামনি।
আমাদের প্রিয় খালামণির শুভ জন্মদিন উপলক্ষে জানাই গভীর শ্রদ্ধা, প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা। খালামণি আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ভালো থাকবেন সবসময়। শুভ জন্মদিন, প্রিয় খালামনি। ভালোবাসা অবিরাম…
আরএ/এসবি