কামরুল হাসান মামুন : সিলেট-আখাউড়া রেলপথের ৯৫টি রেলসেতু ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলোর বয়স ৮০ থেকে ১২৮ বছর। পুরানো এসব সেতু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সেতুগুলো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়েই সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করছে ট্রেন। এ সরকারের এই গত আমল থেকে শুরু আজ পর্যন্ত রেল খাতে মেগা মেগা প্রজেক্টের নামে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে। এসব খরচের উৎসবে পুরানো মেয়াদোত্তীর্ণ রেলসেতু মেরামত করার সময় কোথায়? তারা জানে মেগা প্রজেক্ট মানেই মেগা লাভ আর গিগা লুটপাট। কুলাউড়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ রেলসেতু মেরামতের জন্য স্থানীয় লোকজনের কেউ কেউ গত দুই-তিন মাসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রেলস্টেশনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তাদের উত্তর ছিলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভাবখানা এমন যেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেই তার কাজ শেষ। তাদের ধারণা সেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া রেলসেতুও আপাতত ধসে পড়বে না। এই হলো বাঙালির সাধারণ মানসিকতা।
রিস্ককে কোনো পাত্তা না দেয়াই হলো আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। সেই জাতি এখন বানাচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বোঝেন ঠেলা? যাদের দৃষ্টি কেবলই লুটপাটে তাদের দিয়ে কেমনে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বিশ্বে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে এটাকে নিরাপদ ভেবে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবো? যেখানে আগে উচিত ছিলো জনগণের শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নতি করে উন্নত মানসিকতা তৈরি করা, কিছু আন্তর্জাতিক মানের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার ও নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ তৈরি করা। আমরা কি সেই পথে হেঁটেছি? আমরা এখন ব্যস্ত মেগা প্রজেক্ট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। আমাদের সময়ই মেই এর রিস্ক আছে কি নেই সেদিকে দৃষ্টি দেয়া। এ হলো একদিক। ২৪ জুন আরেকটি সংবাদ দেখলাম। জানলাম প্রাণ, মিল্কভিটা, আড়ংসহ’সহ বাজারে বিক্রি হওয়া পাস্তুরিত ৭টি দুধ-ই মানহীন।
এগুলোর কোনোটিতে মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত কলিফর্মের উপস্থিতি, আবার কোনোটিতে মিলেছে এন্টিবায়োটিক। এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের নমুনা পরীক্ষায়। আমি আড়ং দুধ কিনি। কিছুদিন আগে আড়ং বিতর্কের সময় বলেছিলাম কতো জঘন্য এই আড়ং দুধ। তারপরও বাধ্য হয়ে কিনি। অন্য যেটি আছে সেটি রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে অর্থাৎ সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে মিল্কভিটা। সেটার অবস্থা আরো খারাপ। তার চেয়েও খারাপ প্রাণ। আমার স্ত্রী রাগ করে এখন বিদেশি দুধ খুঁজে। ভাবা যায়? আমার মেয়েদের মুখে এই বিষ দিনের পর দিন মাসের পর মাস তুলে দিচ্ছি। আমার স্ত্রী কেবল আমাকে ভালোবাসার জন্য এই নরকে এসে অসভ্য জানোয়ারদের কবলে পড়ে এসব অখাদ্য আর কুখাদ্য খেয়ে চলেছে। আমি জানি না কেমন করে তারপরও বলবো আমাদের সরকার দেশপ্রেমিক। আপনার মন্ত্রণালয়ের তৈরি দুধই এখন বিষ। কি খাবো? আমরা এসব খেয়ে আমরা নিজেরা তো মরছিই সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও বিকলাঙ্গ বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছি? তারপরও কি কোথাও কোনো জোরালো প্রতিবাদ দেখছেন? সব কিছুই কি অস্বাভাবিক স্বাভাবিক! আপনাদের তো সমস্যা নেই। সন্তানেরা আছে বিদেশে। তাদের এসব খেতে হয় না তাই আপনারাও তোয়াক্কা করেন না। এখন বলুন, এই স্যার আবেদ আর কুলাঙ্গার প্রাণের মালিকদের কি করা উচিত? আমেরিকা হলে এদের বিরুদ্দে মানুষ মামলা ঠুকে দিয়ে এদের দেউলিয়া করে দিতো। এই দুটো সংবাদ আমাদের কি জানান দেয়? আমরা কতো দেশপ্রেমিক? আমরা কতো উন্নত? আমাদের সংস্কৃতি কতো উন্নত? শিক্ষা-দীক্ষায় ... হয়ে আমরা কেমনে উন্নত হলাম বা হবো? ফেসবুক থেকে