মাহফুজুর রহমান : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদের সাথে অতিরিক্ত চাপাচাপি করাতে মিত্রদের মধ্যে একধরনের হতাশার জন্ম নিয়েছে, যা তাদের ভেতরে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত করছে।
১. পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ফেভিকলের আঠার মতো ছিলো, সেইটাও নানান কারণে নড়বড়ে হয়ে গেছে। আমেরিকা পাকিস্তানকে ইতোমধ্যেই আফগান মুজাহিদিন যুদ্ধে পাকিস্তানের লাভবান হবার কথা উল্লেখ করতেই পাকিস্তান প্রতিবাদ করে নিজেদের আরও বেশি আর্থিক ক্ষতির কথা বলে দেওয়াতে আমেরিকা চুপ হইয়া গেছে। পাকিস্তানও এখন পক্ষ বদলের সুযোগে আছে, ইতোমধ্যেই রাশিয়ার সাথে হালকা-পাতলা সামরিক চুক্তিও করেছে।
২. তুরস্কের সাথে আমেরিকার সামরিক জোট ছিলো বা এখনো আছে, অত্যধিক চাপাচাপির কারণে তা প্রায় আলগা হচ্ছে। সিরিয়া ইরাকের আইএস কাহিনি নিয়ে এরোদগান ব্যক্তিগতভাবে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক আর্থিক লাভবান হয়েছেন, এটা আমেরিকা মুখেও না পারছে কইতে না পারছে সইতে! এখন এরোদগান মাল পানি কামাইয়া পক্ষ চেঞ্জ করতে চাইছেন অথবা আমেরিকার সাথে নিজেই সম্পর্ক ঢিলা করতে চাইছেন। এই লক্ষে রাশিয়ার এস ৪০০ ক্রয় নিয়া আমেরিকার সাথে লংকা কা-। আমেরিকার এস ৩৫ যুদ্ধ বিমানের লোভ দেখাইয়াও কাম হচ্ছে না। বরং এরোদগান রাশিয়ার এস ৪০০ এর পাশাপাশি আমেরিকার এস ৩৫ যুদ্ধ বিমানও কিনতে চাইছেন। সম্পর্ক এখন প্রায় মুখোমুখি ।
৩. চীনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধ তো প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে চীনের সাথে তাইওয়ান ও ইদানীং হংকং ক্রাইসিস দিয়া নানান ডিস্টার্ব শুরু করছে। এদিকে ভারতে ভুটানকে দিয়া ডিস্টার্ব করাতে চাইলেও যুৎসই হচ্ছে না।
৪. রাশিয়ার সাথে ইউক্রেন ক্রাইসিস নিয়াও চাইছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
৫. নর্থ কোরিয়ার কিম কে ট্রাম্প ভেবেছিলেন কাঁচা খেলোয়াড়, তাই বাজিয়ে নিতে সামনাসামনি আলোচনায় বসেও দেখলেন, সুবিধা হয়নি।
৬.আফগানিস্তানে সাথে চুক্তির আলোচনা চলছে, সিরিয়া ইরাকে আমেরিকান পলিসি প্রায় কোন ঠাসা। ৭.ইরানের সাথে ঢিমেতালে বৈরী ভাব চলে�ও ট্রাম্প এখন কঠোর হলেন, অবরোধ কঠোর করলেন, যদিও ইরান ৮০-এর পর থেকেই মোটামুটি অবরোধের মধ্যেই আছে। ইদানীং তা চরম আকার ধারন করেছে। নিজে তো ইরানকে বয়কট করেছেই, আবার মিত্রদেরকেও ইরান বয়কট করতে চাপ দিচ্ছে। ইরান বয়কট করো নয়তো বা তোমাদের ওপরেও অবরোধ আরোপ করব। ভয়ে সব মিত্ররা চুপসে গেছে, তবে জাপানসহ আরও কয়েকটি মিত্র সময় চেয়ে নিয়েছিল ।
৭. জাপানের ব্যবসায়ী মহলের তাগাদায় প্রধানমন্ত্রী শিঞ্জে আবে ইরান সফরে গিয়েছেন, পূর্ব আন্তরিক সম্পর্কের ভরসায় যে নিজে গিয়ে ইরানী নেতাদের বাগে আনতে পারবেন। কিন্তু হলো না, ইরানী নেতাদের পরিষ্কার জবাব ছিলো, ট্রাম্প একটা বেঈমান, তার সাথে আলোচনায় লাভ হবে না, তাই আলোচনার দরকার নেই।
৮. উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র সৌদি আরব ইরানের প্রকাশ্য শত্রু, আর অন্যেরা চাপে পড়ে শত্রু। তবে কাতার তো সৌদি জোটের বাইরেই প্রায়। যদি যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে সেই যুদ্ধ সাদ্দাম আর গাদ্দাফি আমলের যুদ্ধ হবে না, ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বে। তখন আমেরিকার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য শত্রু এতো ছিলো না, রাশিয়াও নড়বড়ে অবস্থায় ছিলো, চীনের অবস্থাও ভালো ছিলো না। আর মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় অনেক দেশেই ইরান তাদের অনুসারীদের অপ্রতিহত অবস্থায় (সামরিক) সাজিয়ে রেখেছে যা ১০ বছর আগের তুলনায় অনেক। নিজেরাও সামরিক দিক থেকে অনেক এগিয়েছে। আমেরিকা তোমার সেই আগের দিন নেই, একটু নত হয়ে সবার সাথে সহযোগিতার হাত বাড়াও, নইলে অন্যেরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেই সাথে তোমরাও ধ্বংস হবে। ইজ্জত থাকতেই ইজ্জত রক্ষা করো। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :