ডেইলি স্টার বাংলা: বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভিধান থেকে মঙ্গা বা দুর্ভিক্ষ শব্দটি বিলুপ্তপ্রায়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও নিরাপদ খাদ্যে দেশ কতোটা স্বয়ংসম্পূর্ণ?
মোহাম্মদ আল-মাসুম মোল্লা নিবন্ধে আরও লিখেছেন, ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যে বাজার সয়লাব। খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে দেখেছে, নামি-দামি ব্র্যান্ডের ৫২টি খাদ্যপণ্য নিম্নমানের।
চালে পাথর, মোটা চাল মেশিনে কেটে পলিশ করে বলা হয় মিনিকেট, তেলে মিশ্রণ, মাছের খাবাওে ভেজাল, পোলট্রি মুরগিতে ক্রোমিয়াম, গরুর নামে মহিষ, খাসির নামে পাঠা না হলে ভেড়া, ফলমূলে কেমিক্যাল, শাক-সবজিতে কীটনাশক, মুড়িতে ইউরিয়া, গুঁড়ো দুধে মেলামাইন, কনডেন্সড মিল্কের নামে ভেজিটেবল ফ্যাট, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ফুড গ্রেড রঙের বদলে ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর টেক্সটাইল গ্রেড রঙ, এডিবল অয়েলের বদলে পেট্রোল দিয়ে ভাজা হচ্ছে চানাচুর, জিলাপির সিরায় ইঁদুর, মিষ্টির রসে তেলাপোকা আরও কতো কী।
ভেজাল বন্ধে সরকারের সরকারের চেয়ে ক্ষমতাশালী কেউ নয়। শুধু ভেজালবিরোধী আইন করে আর ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামিয়ে সরকার তার দায় এড়াতে পারে না। এখন দরকার কয়েকটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, যেন ভেজালকারীরা সাহস না পান।
দায় ব্যবসায়ীদেরও আছে। তাদের লোভ ও বিকৃত মানসিকতার নির্মম শিকার নিরীহ জনগণ। ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া আর চরম সুবিধাভোগী। সরকারের কাছ থেকে সব সুবিধা নেবে, কিন্তু মুনাফা লাভের আশায় জনগণের সাথে করবে প্রতারণা। তাই ব্যবসায়ীদের উপর যদি সরকার কঠোর হতে না পারে তবে সবই হবে অরণ্যে রোদন।
এই ভেজালের বিষচক্র থেকে কিন্তু ব্যবসায়ীরা নিজেরাও মুক্ত নন। কারণ যে মাংসে ভেজাল করছে, সে ভেজাল তেল খাচ্ছে। তাই খাদ্য ভেজাল মেশাচ্ছে ব্যবসায়ীরা আবার সেই ভেজাল মেশানো খাবার আমজনতার সাথে ব্যবসায়ীরাও খাচ্ছে।
কয়েক বছর আগে ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ গবেষণা করে জানিয়েছে, রাসায়নিক ও বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের কারণে প্রতি বছর ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দেড় লাখ, কিডনি রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ, গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নিচ্ছে ১৫ লাখ।
সরকার, ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্ব ভোগী, ক্রেতা সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এই মহামারি থেকে দেশ-জাতিকে বাঁচাতে। কোনো ছাড় নয়, অবস্থা যাই হোক।
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়