শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ৩০ মে, ২০১৯, ০৪:১৪ সকাল
আপডেট : ৩০ মে, ২০১৯, ০৪:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

একটি ভয়ংকর রাত এবং ঈদযাত্রা

আকতার বানু আল্পনা : আমার তখন গাড়ি ছিলো না। আমার বর বিদেশে পিএইচডি করছে। আমি দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেছি শাশুড়ি ও শ্বশুরবাড়ির সবার সঙ্গে ঈদ করতে। ছোট মেয়েটার বয়স তখন এক বছরের কম। বড়টার ছয়। ফেরার আগের রাতে হঠাৎ ছোট মেয়ের গায়ে জ্বর। ঔষধেও জ্বর সারছে না। ঔষধ খেলে ছেড়ে যায়। কিছু সময় পর আবার জ্বর আসে। ওই অবস্থায়ই বাচ্চা কোলে নিয়ে রওয়ানা দিলাম। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে। না যেয়ে উপায় নেই। শীতের রাতে ট্রেনে শ্বশুরবাড়ি থেকে রাজশাহী আসবো বলে স্টেশনে দাঁড়ালাম।

আব্দুলপুর স্টেশনে ঢাকা থেকে আসা পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনটি থামে মোটেই দু’মিনিট। ঈদের পর বলে প্রচ- ভিড়। তার উপর কয়েকজন আর্মির লোক (তারা কাদিরাবাদ সেনানিবাসে যাবে) ট্রেন থেকে বড় বড় ট্রাঙ্ক নামাচ্ছে। ফলে আমরা ট্রেনে উঠতে না পেরে ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ট্রাঙ্ক নামানো শেষ হলে উঠবো। কিন্তু বিধি বাম। ওদের নামা শেষ হতেই ট্রেন চলতে শুরু করলো। আমি কোনমতে ট্রেনে উঠতে পারলাম। আমার দেবর আমাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগগুলো তুলে দিতে পারলো। কিন্তু সে এবং আমার বড় মেয়ে ট্রেনে উঠতে পারলো না। আমি জীবনে কখনো এ রকম অবস্থায় পড়িনি। আমার কান্না পাচ্ছিলো। আমি কয়েকজন যাত্রীকে চেইন টানতে বললাম। কেউ আমার কথা শুনলো না। আমি বড় মেয়ের কথা ভেবে কাঁদতে লাগলাম। ও ভয় পাবে। আমাকে না পেয়ে কাঁদবে। পরের ট্রেন ক’টায়, আমি জানি না। আদৌ কোন ট্রেন আছে কিনা, তাও জানি না। থাকলেও লোকাল ট্রেন হবে। সেগুলোর চলাচলের সময়ের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।

জানালার ফাঁক দিয়ে কনকনে ঠা-া বাতাস ঢুকছে। বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। ব্যাগগুলো কোনোমতে একপাশে রাখলাম। তারপর দেখলাম, আমার নিজের হাতব্যাগ রয়ে গেছে বড় মেয়ের কাছে। আমার কাছে টিকিট, টাকা, মোবাইল কিছুই নেই। সব রয়ে গেছে হাতব্যাগে। আমার দুরবস্থা দেখে এক যাত্রী দয়া করে আমাকে তার সিটে বসতে দিলেন। বাচ্চা কাঁদছে। থামাতে পারছি না। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। স্টেশন থেকে এতো রাতে একা বাসায় যেতে পারবো না। শেষে এক যাত্রীকে অনুরোধ করে তার ফোন থেকে আব্বাকে ফোন করলাম। সব বলে আব্বাকে স্টেশনে আসতে বললাম। আর ট্রেনের অ্যাটেনডেন্টকে বললাম, আমার ব্যাগগুলো যেন স্টেশনে নামিয়ে দেয়। ট্রেন থামার পর একে একে সব যাত্রী নেমে গেলো। তারপর আমি নেমে ব্যাগগুলো নিয়ে একা স্টেশনে বসে আছি।

আব্বা তখনও পৌঁছাননি। খোলা স্টেশন। খুব শীত। শীতের রাত বলেই লোকজনও কম। ভয় ভয় করছে। বাচ্চার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। খানিক বাদে আব্বা এলে আমরা বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। আব্বার ফোন থেকে দেবরকে ফোন করে বড় মেয়ের সঙ্গে কথা বললাম। সে ততোক্ষণে কেঁদে কেটে হুলুস্থুল। ‘অতোগুলো ব্যাগ আর বাচ্চা নিয়ে আম্মু একা কীভাবে যাবে? আম্মুর কাছে টিকিট নেই, টাকা নেই। টিটি ধরলে কি হবে? অন্ধকারে একা বাসায় যাবে কীভাবে?’... এসব ভেবে ভেবে সে অস্থির। সারাটা পথ সে সমানে কেঁদেছে। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম যে, আমি ভালোভাবেই পৌঁছেছি। আমি বাসায় পৌঁছালাম রাত সাড়ে ন’টায়। আর আমার বড় মেয়ে আর দেবর পৌঁছালো আরো তিন ঘণ্টা পর। মেয়ে ফিরলে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, আমার বর দেশে ফিরলে আমি সব বাদ দিয়ে আগে গাড়ি কিনবো, যাতে এ রকম বিপদে আর কখনো পড়তে না হয়। তাই করেওছি। এখন আর জার্নি নিয়ে আমাকে ভাবতে হয় না। ইচ্ছামতো যখন যেখানে খুশি, আরামে এসি গাড়িতে জার্নি করতে পারি।

প্রতিবার ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষদের ভোগান্তি দেখে আমার খুব কষ্ট লাগে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দ্বিগুণ/তিনগুণ দামে টিকিট কাটা, যাবার সময় যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে ওঠা, ট্রেনের-বাসের ছাদে ওঠা, লঞ্চডুবি, দুর্ঘটনায় মৃত্যু, জিনিসপত্র হারানো, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে কিনা তার দুশ্চিন্তা ইত্যাদি নানা ভোগান্তি প্রতিবছর যেন এদেশের মানুষদের অবধারিত নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য যেকোনো দেশ হলে এই ভোগান্তি নিরসনে অতিদ্রুত সরকারের স্থায়ী আগাম প্রস্তুতি থাকতো। ফলে মানুষকে প্রতিবছর একই ভোগান্তি বারবার পোহাতে হতো না। উন্নয়নের গালভরা বুলি মানুষের বিশ্বাসযোগ্য হওয়া চাই। স্কুলের বাচ্চাদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সময় ঢাকার রাস্তায় লাইন ধরে রিকশা, গাড়ি, বাস চলতে দেখেছি। অ্যাম্বুলেন্সকে আগে যাবার পথ তৈরি করে দিতেও দেখেছি।

তখন এই ঢাকার সড়কগুলোতেই কোনোরকম বিশৃঙ্খলা ছিলো না। স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারে। কিন্তু এদেশের সরকার, পুলিশ পারে না। আজব! এক মহামান্য তৈলাক্ত ব্যক্তি আবার যানজট নিরসনের পরিবর্তে হাসিমুখে যানজট মেনে নেবার পরামর্শ দেন! আরও আজব! এদেশের মানুষ তো মেনে নিতেই আছে। অরাজকতা, অন্যায়, ঘুষ, অর্থপাচার, অপরাধ, লুটপাট, ভেজাল, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা, বাকস্বাধীনতা হরণ, বেকারত্ব...। আর কতো? ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত না হোক... এদেশের গরিব, অসহায় মানুষদের জন্য এই দোয়া রইলো। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়