শিরোনাম
◈ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণভাবে পৃথক করলো সরকার ◈ অহেতুক চাপ সৃষ্টি করতে জামায়াতের কর্মসূচি: মির্জা ফখরুল ◈ জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সাত দল ◈ স্ত্রী আসলেই নারী কি না প্রমাণ দেবেন ম্যাখোঁ ◈ আগামী বছরের বইমেলার সময় পরিবর্তন ◈ সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি, যা জানালো ভারত ◈ সরকারি কর্মচারীদের জন্য বড় সুখবর: অবসরে বাড়ছে সুযোগ-সুবিধা, কমছে অপেক্ষাকাল ◈ আগামীকাল ৮ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় ◈ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় যমুনা টিভির সাংবাদিকসহ আহত ৫ ◈ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক মতভিন্নতার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে: প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ২৮ মে, ২০১৯, ০৫:৫১ সকাল
আপডেট : ২৮ মে, ২০১৯, ০৫:৫১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইতালীতে প্রদর্শিত হলো ড. ইউনূসের জীবনী-ভিত্তিক অপেরা

ডেস্ক রিপোর্ট : ২০ মে ২০১৯ নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ইতালির ফানো শহরে “২৭ ডলার” (27 Dollari) নামের একটি ভিন্নধর্মী অপেরার প্রিমিয়ার শো-তে যোগ দেন। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের পশ্চিম উপকুলে অবস্থিত টুরিস্ট নগরী ফানোর “তেয়াত্রো দেল্লা ফরচুনা”য় (থিয়েটার অব লাক) বিপুল সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে প্রদর্শিত হয় অপেরাটি। উরবিনো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর প্রফেসর ভিলবার্তো স্টচ্চি-র বিশেষ আমন্ত্রণে প্রফেসর ইউনূস এই অপেরা শো-তে যোগ দেন। অপেরা “২৭ ডলার”-এর প্রযোজক ইতালিয়ান ন্যাশনাল সিঙ্গারস এসোসিয়েশন। এতে সহায়তা দিয়েছে উরবিনো বিশ্ববিদ্যালয়, “কার্লো বো,” ফানো মিউনিসিপ্যালিটি, তেয়াত্রো দেল্লা ফরচুনা ফাউন্ডেশন ও ইমাজেম এসআরএল। প্রায় আট বছরের প্রস্তুতি শেষে অপেরাটি মঞ্চায়িত হয়েছে। প্রফেসর ইউনূসের জীবনী এবং দরিদ্র মহিলাদের নিকট আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে তাঁর সংগ্রামের কাহিনী বিধৃত হয়েছে এই অপেরায়।

১৯৯৭ সালে প্রকাশিত প্রফেসর ইউনূসের গ্রন্থ “Banker to the Poor”-এ অনুপ্রাণিত হয়ে অপেরাটি তৈরী হয়। এর রচয়িতা পাওলা সামোজ্জিয়া ও পরিচালক আন্দ্রিয়া মিরো ও কার্লো মাগরি। অপেরাটি উপস্থাপন করেন ইটালিয়ান ন্যাশনাল সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাম্বাসেডর ও ইউনিভার্সিটি অব উরবিনোর আট এন্ড কালচারাল প্রজেক্টের শিল্প নির্দেশক সোপ্রানো ফিলিসিয়া বনগিওভান্নি। মূল অভিনয় শিল্পী ছিলেন সোপ্রানো ফিলিসিয়া বনগিওভান্নি এবং টেনর ক্রিশ্চিয়ানো ক্রেমন্নিনি। সোপ্রানো গ্রামীণ ব্যাংকের নারী ঋণগ্রহীতাদের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং টেনর প্রফেসর ইউনূসের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এটি ছিল একটি পুরুষ শাসিত পৃথিবীতে নারীদের সংগ্রামের ও ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র মুক্তির সফল প্রচেষ্টার একটি শৈল্পিক উপস্থাপনা। অপেরাটি তার অনবদ্য ধ্বনি, সুর ও ঐক্যতানের মাধ্যমে সে সময়কার নারীদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে। অপেরাটি শুরু হয় হস্তশিল্পে নিয়োজিত কয়েকজন দরিদ্র নারী মহাজনদের নিকট মাত্র ২৭ ডলার ঋণ থেকে মুক্ত হয়ে কীভাবে নিজেদের জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত করতে সক্ষম হয় তার কাহিনী দিয়ে।

“২৭ ডলার” অপেরাটিতে তুলে ধরা হয়েছে অর্থায়নের জগতে দরিদ্রদের প্রবেশ তাদের জন্য কী অপরিসীম সুযোগ তৈরী করে এবং কীভাবে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি ও আর্থিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে একটি মূল্যবোধ-ভিত্তিক অর্থনৈতিক সংস্কৃতি ও টেকসই সমাজ গড়ে উঠে ¬Ñ যেখানে ব্যক্তি মানুষ একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ভ‚মিকা পালন করে।

পর্দায় শিল্পীদের মুখ যা দরিদ্র নারীদের স্বামী, মহাজন ও ধর্মীয় গোঁড়াদের প্রতিনিধিত্ব করেছে, তাদের কর্কশ কণ্ঠস্বর, শিল্পীদের অসামান্য অভিনয় ও উপস্থাপনা সবই দর্শকদের মুগ্ধ করে। অপেরাটি তার অসাধারণ সুরেলা কাহিনী-বর্ণনায় চরম দারিদ্র ও ক্ষুধাকে দর্শকদের নিকট তুলে ধরে। কাহিনীতে টেনরকে প্রফেসর ইউনূসের ভ‚মিকায় মূল চরিত্রে দেখান হয়। গীতিনাট্যের শেষে পুরুষ গায়কটি যখন মঞ্চে একা, অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রফেসর ইউনূসের সেই মুহূর্তের ছবি গায়কের উপর মূর্ত করে তোলা হয়।

শো শেষে সাংবাদিকরা প্রফেসর ইউনূসের সাক্ষাৎকার নিতে এলে তিনি বলেন, “কাহিনীটি যেভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে তাতে আমি অভিভূত। অপেরা শিল্পীদের অসাধারণ দক্ষতা শো’টিকে একটি শক্তিশালী কাহিনীতে পরিণত করেছে। কাহিনীর নারীদের দুঃখ-দুর্দশার পাশাপাশি সমাজে আত্ম-প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সংগ্রাম অপেরাটির প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ্য করে তুলেছে।”

অপেরাটি দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন উরবিনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, ইতালীর বিশিষ্ট অপেরা ব্যক্তিত্বগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।

ঐ দিনই সকালে প্রফেসর ইউনূস উরবিনোতে পৌঁছান। উল্লেখ্য যে, উরবিনো নগরী রেনেসাঁর সৃষ্টিশীলতায় একটি অসাধারণ মাত্রা যোগ করে যা ইউরোপের শিল্প ও সংস্কৃতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। উরবিনো বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। যে ভবনটিতে ১৫০৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তা রেনেসাঁ নকশার একটি চিরায়ত উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃত।

প্রফেসর ইউনূস উরবিনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় ১৫,০০০ ছাত্র এখানে অধ্যয়ন করে। এরপর প্রফেসর ইউনূস এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত একটি “ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার”-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। নব প্রতিষ্ঠিত এই সেন্টারটির প্রধান প্রফেসর এলিজাবেত্তা রাইজিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কর্মকর্তাদের দ্বারা সামাজিক ব্যবসার উপর গবেষণা এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান কেন্দ্রটির অন্যতম লক্ষ্য। এছাড়াও সেন্টারটি সামাজিক ব্যবসা, ক্ষুদ্রঋণ, কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব ও তরুণ উদ্যোক্তা গড়ে তোলার উপর তরুণ গবেষক ও ছাত্রদের মধ্যে গবেষণাকর্ম উৎসাহিত করবে।

ঐ দিন অপরাহ্ণে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি আড়ম্বরপূর্ণ ও আনুষ্ঠানিক ডিগ্রী প্রদান অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূসকে বিশ্ব ব্যাপী মানবতার কল্যাণে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ সম্মাননা “রেক্টর্স সীল” প্রদান করা হয়।

২১ মে রোমে ফিরে এসে প্রফেসর ইউনূস বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন। জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক হোসে গ্রাৎজিয়ানো দ্য সিলভা। তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের নোবেল জয়ী ক্ষুধা ও বিরোধের সাথে যুক্ত বিভিন্ন ইস্যু বিষয়ে তাদের চিন্তাধারা পুনর্বিবেচেনা করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতি আহŸান জানান যাতে সামাজিক সংহতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের মানুষদেরকে বিশেষ করে তরুণদের উদ্যোক্তায় পরিণত করা সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, “ খাদ্য, নিরাপত্তা, কৃষি, পরিবেশ, বেকারত্ব ও সম্পদ কেন্দ্রীকরণ বিষয়ে আপনারা যদি আপনাদের পূর্বের অবস্থানেই থাকেন, তাহলে ফলাফলও একই হবে।”

“খাদ্য নিরাপত্তা ও শান্তি বিষয়ক খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীদের মৈত্রী”র কাজের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও মনিটর করতে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালকের আমন্ত্রণে প্রফেসর ইউনূস সংস্থাটির সদর দপ্তরে আসেন। প্রফেসর ইউনূস এই সংগঠনের দু’জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যর একজন। সংঘাত ও ক্ষুধার দুষ্ট চক্র মোকাবেলায় ২০১৬ সালে ১২ জন নোবেল বিজয়ীকে নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রফেসর ইউনূস বলেন, “আমরা যদি ভিন্নভাবে চিন্তা না করি, ভিন্নভাবে কাজ না করি Ñ তাহলে দারিদ্র, ক্ষুধা, জলবায়ু বিপর্যয় ও সংঘাত কখনোই দুর করা সম্ভব হবে না।”

মহাপরিচালক, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, ক্ষুধা ও সংঘাত নিবিড়ভাবে যুক্ত। তাঁর হিসেব মতে, অনাহারে থাকা পৃথিবীর ৬০ শতাংশ মানুষই বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোতে বাস করে। তিনি আরো বলেন যে, খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রোমে অনুষ্ঠিত এই সভায় মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে একটি পরীক্ষামূলক শান্তি-প্রতিষ্ঠা প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। প্রকল্পটি খৃষ্টান ও মুসলিম জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করে কৃষি উৎপাদন, প্রশিক্ষণ ও সামাজিক ব্যবসা নিয়ে কাজ করা ছাড়াও ইউনূস সেন্টারের সাথে যৌথভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সামাজিক সংহতি নিশ্চিত করতে সংলাপের আয়োজন করে থাকে।

পাইলট প্রকল্পটি থেকে দেখা যায় যে, কৃষিতে ব্যবসা উদ্যোগ সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে যা মানুষকে জীবিকার সন্ধানে দেশ ত্যাগে বাধ্য না করে বরং নিজ এলাকায় থাকতে উদ্বুদ্ধ করে।

প্রফেসর ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, “কৃষকরা অসাধারণ চমৎকার উদ্যোক্তা।”

প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বাংগুই-এর ঠিক বাইরে ক্যাথলিক চার্চের মালিকানাধীন জমিতে যেখানে প্রায় ৩,০০০ উদ্বাস্তু বাস করে। ইউনূস সেন্টার এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্তৃক প্রণীত এই প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে ইতালি সরকার।

বিশেষ করে দরিদ্র কৃষি উদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহ প্রদানে প্রফেসর ইউনূসের এই উদ্যোগ ভূয়শী প্রশংসা লাভ করে।

এই সংগঠনে আরো যে নোবেল লরিয়েটগণ রয়েছেন তাঁদের মধ্যে আছেন ইয়েমেনের নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী তাওয়াক্কুল কারমান, ইরাকী ইয়াজিদি মানবাধিকার কর্মী নাদিয়া মুরাদ যিনি ধর্ষণকে যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য ২০১৮ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, এবং কলম্বিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস যাঁকে নিজ দেশের ৫০ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ অবসানের জন্য ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।

রোমে অবস্থানকালে প্রফেসর ইউনূস ইতালিয়ান পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতা ও ইতালীর ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক নিকোলা জিনগারেত্তির সাথে সাক্ষাৎ করেন। দারিদ্র ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবং বেকারদেরকে উদ্যোক্তায় পরিণত করতে প্রফেসর ইউনূসের তত্ত¡ ও তার প্রয়োগ নিয়ে তাঁরা দীর্ঘ আলোচনা করে
সূত্র : বিএল সোশ্যাইল বিজনেজ পিডিয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়