মহসীন কবির : ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জয়ের পর নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। নেতারা বলেছেন, মোদির জয়ে ভারতের সঙ্গে সুসস্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।
ভারতের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র বিশাল জয়ের পর বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তিসহ অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার (২৪ মে) সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছেন। মোদি সরকারের গত আমলে আমাদের সঙ্গে অনেক অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান হয়েছে। মোদি সরকারের সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার প্রমাণ দু’দেশের সীমান্ত সমস্যার সমাধান। এবার নরেন্দ্র মোদি তার দেশের জনগণের আস্থা আরও বেশি করে পেয়েছেন। আমরা আশা করি, আমাদের সঙ্গে তিস্তা চুক্তিসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানের যে প্রক্রিয়াটা আছে, সেটা আরও দ্রুত হবে।
মোদির জয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুসম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশ অনেক ক্ষেত্রেই একে-অপরের সহযোগিতা করছে।’ এই সুসম্পর্ক আরও দৃঢ় ও বন্ধুত্বপূর্ণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘মোদির আমলে যেসব ইস্যুর সমাধান হয়েছে, তার অনেকগুলোর আলোচনা কংগ্রেস আমলে শুরু হয়েছিল। কাজেই এটা বলতে হবে যে, বিজেপি সরকারের সঙ্গেও আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। মোদি সরকারের গত মেয়াদে সময়ের অভাবে কিছু আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি। আবার তিস্তার পানি চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপত্তি করেছিলেন। এবার পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি শক্তিশালী হয়েছে; অভ্যন্তরীণ দর কষাকষিতে যেটা বিজেপিকে সুবিধা দেবে। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত থাকলে তিস্তা চুক্তি আলোর মুখ দেখতে পারে বলে আমরা আশাবাদী হতে পারি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, সেদেশের জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পেরেছে, যেটা বাংলাদেশের জনগণ পারেনি। শুক্রবার (২৪ মে) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আমির খসরু বলেন, ভারতের জনগণের মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের গণতন্ত্রকে তারা আরো শক্তিশালী করেছে, এটা সবেচেয়ে ভালো দিক। ‘ভারতের জনগণ নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে রায় দিয়েছেন। তিনি জনগণের ভোটে জয়লাভ করেছেন।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুক্রবার অথবা শনিবারের (২৫ মে) মধ্যে ভারতীয় হাই-কমিশনের কাছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অভিনন্দন বার্তা চলে যাবে।
আমির খসরু বলেন, বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যাশা করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। দু’দেশ ও দু’দেশের জনগণের মধ্যে পরস্পরের সহযোগিতা ও পরস্পরের প্রতি সম্মানজনক অবস্থান থেকে সম্পর্ক গড়ে উঠবে। বিশেষ করে আঞ্চলিক সহযোগিতা শক্তিশালী হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘মোদি সরকার এখনও পুরানোই আছে। এখনও নতুন সরকার শপথ নেয়নি। এখন যদি মোদিকে বাদ দিয়ে অন্য কেউ হয়, তাহলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। পৃথিবী পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে, এজন্য আগে বিজেপি সরকার শপথ নিক। এরপর সেই সরকারের অবস্থান, দৃষ্টিভঙ্গি, বক্তব্য বুঝে বিএনপি অবস্থান বিবেচনা করবে। আমাদের লক্ষ্য, গণতন্ত্রের পক্ষে প্রতিবেশী দেশ কতটা কাজ করে, সেটা দেখা।’
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বলেন, ‘ভারতীয়রা ভাগ্যবান কারণ তাদের কার্যকর গণতন্ত্র রয়েছে, সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়। যা আমাদের বাংলাদেশে অনুপস্থিত। ভারতের জন্য বাংলাদেশ ও বিএনপি সবসময় বন্ধু ছিল। শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আমাদের প্রতিবেশীকে সহযোগিতা করবো। পানিবণ্টন বা সীমান্ত হত্যার মতো বিতর্কিত বিষয়গুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও উভয় দেশের মধ্যে উপযুক্ত সমঝোতার মাধ্যমে সবসময় সমাধান সম্ভব। এটা দুঃখজনক যে, বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা দলটি এই ইস্যুগুলো প্রায় একদশকেও সমাধান করেনি।’