আরিফ জেবতিক : নেহায়েত রমজান মাস চলছে, নইলে এতোদিনে দেখা যেতো যে কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চাকাচ্চাদেরও লাইন ধরিয়ে মাঠে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাচ্চাদের পাপা-মাম্মিরা ক্ষেতের আইলে ওয়াটার বটল আর চিজ স্যান্ডউইচ নিয়ে দাঁড়িয়ে বলছে, ‘বাব্বা, এদিকে তাকাও, সুন্দর করে হাসি দাও।’ পোলা ধান আর কাস্তে হাতে নিয়ে হাসি দিচ্ছে, মা সেটা মোবাইল ফোনে তুলে ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করছে, হ্যাশট্যাগ #ধানকাটি। টিচাররা টেনশনে আছে, কাস্তের আঁচড় যদি জাদুমণির গায়ে লেগে যায়, তাহলে বেচারির চাকরিটা আজ যাবে। দেখা যেতো, প্রেমিক-প্রেমিকা কাটা ধান হাতে নিয়ে ছবি দিচ্ছে, আবার হ্যাশট্যাগ #ধানকাটি। অনেকে অভ্র বা ফোনেটিকে ভালো পারে না, তাদের ধান থেকে আকার কাটা পড়ে যেতো।
হয়তো বুড়ো নেতারা যারা মাঠে গিয়ে ধান কাটতে পারবেন না, তাদের জন্য মানিক মিয়া এভিনিউতে একটা প্রদর্শনী মাঠ বানিয়ে ধানগাছ লাগানো হতো, তারা একমুঠো ধান হাতে নিয়ে ২৪টা টিভি চ্যানেলে ‘আপনার অনুভূতি কি?’ এর জবাব দিতেন। সে যাক গে। এই যে ডিসি, ইউএনও, ব্যাংকার, স্কাউট, ছাত্র, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ সবাই এখন মাঠে ধান কাটতে লেগে গেছে এটাকে বাড়াবাড়ি মনে হলেও একদিকে একটা জরুরি বিষয় আমাদের মধ্যবিত্ত নাগরিক উপলব্ধিতে এসেছে যে, গ্রামের কৃষকরা ভালো নেই। প্রযুক্তি আর অবকাঠামোর দ্রুত বিস্তারে এখন গ্রামেও মানুষ ব্যাটারিচালিত রিকশা চালায় নয়তো বাজারে ফ্লেক্সিলোড কি মোবাইল সারাইয়ের দোকান দিয়ে দুটো টাকা আয় করে। এতে করে আমাদের কৃষি শ্রমিকদের এই সংকট আগামীতে আরো বাড়বে।
এখন আসলে এসব শোঅফ আমাদের কোনো সমাধান দেবে না। আমাদের জরুরিভাবে দরকার কৃষিকে অটোমেশনে নিয়ে আসা। কৃষি যন্ত্রপাতিতে প্রচুর ভর্তুকি দিয়ে, সহজে ঋণ দিয়ে এসবকে কৃষকদের একেবারে দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে কৃষিপণ্যের মধ্যস্বত্বভোগী দালাল নিয়ন্ত্রণ করা, পথে-ঘাটের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে খুচরা বিক্রির বড় ভাগটা সরাসরি কৃষকের হাতে পৌঁছায়। এটাই আসল কাজ। ডিসি, ইউএনও, ব্যাংকার, স্কাউট, ছাত্র, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ এবং আরো যারা প্রভাবশালীরা আছেন, তারা ফটোসেশন শেষ করে এদিকে মনোযোগ দিলেই বরং আমরা জোরে হাততালি দিতে পারতাম। ফেসবুক থেকে