হাবিবুর রহমান : কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছিলো। তবে এ দু’টি দলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিলো ভিন্ন। কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষ, অপরদিকে মুসলিম লীগ সাম্প্রদায়িক। পরবর্তী সময়ে কংগ্রেস ভারতকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হলেও মুসলিম লীগ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রায় হারিয়ে যায়। পাকিস্তান গণতান্ত্রিক হওয়া তো দূরের কথা বরং একটি মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করে সভ্য জগত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ভারত সত্তর বছরের বেশি সময় ধরে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রেখে গোটা বিশ্বের কাছে বিশেষ শ্রদ্ধার স্থান করে নিয়েছে। এর কৃতিত্বের দাবি ভারতের সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিকরা করতেই পারেন। রাজনীতি এবং গণতন্ত্রের পর্যবেক্ষক ও চর্চাকারী মাত্রই জানেন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরি এবং তা ধরে রাখা কতোটা কঠিন। ভারতের মতো একটি বহুজাতি, বহুধর্ম, বহুবর্ণ ও বহুভাষায় বিভক্ত দেশের পক্ষে তা আরও দুরূহ। ভারতীয় রাজনীতিবিদদের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের কাছে সব প্রতিকূলতা যেন হার মেনেছে। তারা কৃতকার্য হয়েছেন গণতন্ত্রের পরীক্ষায়। খাদের কিনারে গিয়েও বারবার ফিরে এসেছেন এবং গণতন্ত্রকে সবার উপরে স্থান দিয়েছেন। তাই সঙ্গত কারণে আমরা গণতন্ত্রের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে ভারতকেই বেছে নিই।
আমাদের দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূল অনুপ্রেরণা ভারতের গণতন্ত্র। তাই কারণ-অকারণে ভারতীয় রাজনীতির উদাহরণ ঘুরেফিরে আলোচিত হয় রাংলাদেশে । টকশো, রাজনৈতিক বক্তৃতা, বিবৃতি কিংবা চায়ের দোকানের আড্ডায়। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, গণতন্ত্রের এ মন্দির অটুট থাকবে তো? বিশেষত বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক দলের ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধি ও বাড়বাড়ন্ত গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। বৈচিত্র্য, সভ্যতা ও সংস্কৃতির তীর্থভূমি এবং লাখো কোটি দেবতা ও ঈশ্বরের দেশ ভারতের প্রাণভোমরা টিকে থাকতে পারবে তো? ধর্ম নাকি ধর্মনিরপেক্ষতা কে জয়ী হবে এটাই এখন বিশ্বের সব গণতন্ত্রীকামী মানুষের মনে সব থেকে বড় প্রশ্ন। ২০১৯-এর নির্বাচনে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মনুষ্যত্বের জয় হোক। আরেকটি সফল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারতের নব্বই কোটি ভোটার ভারতের গণতান্ত্রিক শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের পতাকা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরুক। ফেসবুক থেকে