সাদিকুর রহমান সামু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সরকারি মালিকানাধীন পাত্রখোলা চা বাগানে বাসস্থানের দাবিতে বাগান ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে আসা নিরীহ চা শ্রমিকদের উপর হামলা করা হয়েছে। হামলায় এক নারীসহ ৫ চা শ্রমিক আহত হয়েছেন। ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছেন চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি। হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় পুরো বাগান জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে চা শ্রমিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের হস্তক্ষেপে দুপুরের পর পরিস্থিতি শান্ত হলে চা শ্রমিকরা কাজে যোগদান করে।
চা শ্রমিকরা জানান, জরাজীর্ণ বসতঘর সংস্কারের দাবি নিয়ে সোমবার সকাল ৭টার দিকে কয়েকজন শ্রমিক বাগান ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান মুন্নার কার্যালয়ে যান। এ সময় চা শ্রমিক পঞ্চায়েত সভাপতি সিপন চক্রবর্তী সমর্থিত একদল শ্রমিক দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালালে প্রতাপ গড় (৪২) ও স্বরসতী মাহারা (৪৮) সহ ৫ জন চা শ্রমিক আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে বাগান হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
এ খবর বাগানে ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ প্রায় তিন শতাধিক চা শ্রমিক কাজে যোগদান না করে বাগানের ফ্যাক্টরির প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিলে সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে কমলগঞ্জ থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক চম্পক দামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা পুলিশের উপস্থিতিতে বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি সিপন চক্রবর্তীর উপর হামলা করে। হামলাকারীরা পঞ্চায়েত সভাপতি সিপনকে চড়, থাপ্পর, লাথি ও কিল-ঘুষি দেয়। এ সময় পুলিশ লাটিচার্জ করে ক্ষুব্ধ চা শ্রমিকদের হাত থেকে সিপনকে উদ্ধার করে ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। হামলা ও পাল্টা হামলার এ ঘটনায় চা বাগানের দুই পক্ষের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে প্রথমে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু ও পরে কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান, ওসি (তদন্ত) সুধীন চন্দ্রের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, সহ সভাপতি পরাগ বাড়ই, দলই ভ্যালীর সভাপতি ধনা বাউড়ি, সহ সভাপতি গায়েত্রী দাস চা বাগানে ছুটে আসেন। পরে চা শ্রমিক নেতারা বাগান ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান মুন্না, ওসি আরিফুর রমান,ওসি (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র, ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু,পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমল কুড়াইয় কে সাথে নিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন।
এ সময় শ্রমিকরে পক্ষে চা শ্রমিক নেতা পাত্রখোলা চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাবেক সম্পাদক দুলাল ও আমিনুল ইসলাস আমুল এর সাথে কথা বলে শ্রমিকদের বসতঘর সংস্কার, আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও সুজন নামে এক শ্রমিককে কাজে ফিরিয়ে নেওয়া সহ নীতিগত কয়েকটি দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলে দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হলে শ্রমিকরা কাজে ফিরে যায়। দুপুর ১২টায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার সময় চা বাগানে ছুটে যান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রফিকুর রহমান। এ সময় তিনি চা বাগানের ব্যবস্থাপক চা শ্রমিক নেতা এবং পঞ্চায়েত কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন। পরে তিনি আহত শ্রমিকদের দেখতে বাগানের হাসপাতালে গিয়ে গুরুত্বর আহত দুই চা শ্রমিককে আর্থিক সহায়তা করে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পরে গুরুত্বর আহত চা শ্রমিক প্রতাপ ও স্বরসতীকে মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
আলাপকালে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, এটি পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ। বিষয়টি আগামী রোববার সকালে উপজেলা পরিষদ হলরুমে বসে মিমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, চা বাগানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। পুলিশের নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে চা বাগানের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।