যুগান্তর : এক কোটি টাকার ওপরে ঋণখেলাপি, খেলাপিদের নাম, ঠিকানা ও ঋণের সুদ মওকুফের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিদেশে আর্থ পাচার সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এবং পাচার বন্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা-ও জানাতে বলেছেন আদালত।
এছাড়া ২০ বছরে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনের অনিয়ম এবং সুদ মওকুফ সংক্রান্ত অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
এতে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ও সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটিব্যাংক এনএ বাংলাদেশের সাবেক সিইও মামুন রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, আইন-বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দুই দফা নির্দেশনা দিয়ে আদালত আদেশে বলেছেন, দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক খাতে একটি নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা উধাও হয়ে গেছে।
এছাড়া আদালত আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো সিকিউরিটি মানি নেই। যারা লোন নিচ্ছে, তাদের ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো চরম দুরবস্থায় পড়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠন করে সে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আদেশের পর মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের জানান, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার মধ্যে যেসব অনিয়ম-ত্রুটি আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া জন্য উকিল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন তিনি। জবাব না পেয়ে জনস্বার্থ বিবেচনায় হিউমেন রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষ থেকে রিট আবেদন করা হয়।
এক প্রশ্নে এই আইনজীবী বলেন, ‘আদালত যে তালিকা চেয়েছে, সে তালিকা এলেই বোঝা যাবে কারা লোন নিয়েছেন, কারা লোন নিয়ে পরিশোধ করেননি, কারা মানি লন্ডারিং করেছেন বা করছেন। এগুলোর বিষয়ে শুনানির সময় আমরা পরবর্তী নির্দেশনা চাইব।’
অর্থ পাচার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে কিছুদিন অগে একটা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে আমেরিকা থেকে। সেখানে বলা হয়েছে, কত হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। যেসব দেশে অর্থ যায়, তাদেরও রিপোর্ট আছে। এসব রিপোর্ট ব্যাংকের গভর্নরকে কালেক্ট করে আদালতকে জানাতে হবে।’
এই আইনজীবী বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় যা দেখেছি, তাতে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে অর্থ পাচার হয়েছে বলে আমরা জানি। আর লোন নেয়ার ক্ষেত্রে এক-দুই লাখ কোটি টাকার লোন বিভিন্ন লোকে পরিশোধ করছেন না।’
আদালত যে তালিকা চেয়েছে, সেটার সময়সীমা কী হবে- জানতে চাইলে মনজিল বলেন, ‘২০ বছরের মধ্যে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, মূলত সেসব ঘটনার বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল।’
ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দেন। একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে ঋণখেলাপি ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সেই তালিকা দাখিলের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ আদালত এখনও জানাননি।’