কাকন রেজা : ১. গণমাধ্যম জানালো, ভারতে দুধের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মূত্র। রাজস্থান, গুজরাট আর মধ্যপ্রদেশের মতো জায়গাগুলোতে গো-মূত্রের চলটা ছিলো। এখন কথিত ‘আলোকিত’ কলকাতাতেও দুধের চেয়ে গো-চেনার দাম দ্বিগুণ। গণমাধ্যমের দাবি, মাসে দশ হাজার লিটার গো-মূত্র বিক্রি হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গে! চিকিৎসা বিজ্ঞান অস্বীকার করলেও গো-মূত্রকে সর্বরোগ হরকরা আখ্যা দিয়ে গজিয়ে উঠছে সেখানে ‘গো-মূত্র চিকিৎসা ক্লিনিক’।
অনেকে বলেন, এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামি। কেউ কেউ নানা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দাঁড় করান এসবের জন্য। অনেকে রাজনীতিকেও দায়ী করেন। হ্যাঁ, এক অর্থে হয়তো রাজনীতি দায়ী। রাজনীতি যেহেতু ধর্মীয় উন্মাদনাকে বহন করে, সেই ‘বাহক’ অর্থে রাজনীতিকে দায়ী করা আপাত যৌক্তিক। ‘আপাত’ কেন? উত্তরে সহজ করেই বলি, গাধা কী জানে, তার পিঠে বহনকৃত পণ্যটা কী? জানে তার মালিক, পণ্যের সাথে যার লাভ-লোকসান জড়িত। হাল জামানায় রাজনীতিটা হলো গাধা। মালিক কারা, তা কী খুব করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে?
গো-মূত্রের দাম বা বিক্রির মতো ভারতের অনেক খবরই চমকে ওঠার অধিকার রাখে। এমনি একটি খবর হলো, ভারতের খ্যাত ‘কুম্ভমেলা’ নিয়ে। এখানে পুণ্যের আশায় স্নান করতে আসা পনেরোশো সাধুর মধ্যে এগারোশোজনই চিকিৎসক, প্রকৌশলী, অধ্যাপক এবং পিএইচডি ধারক। খবরটা কী চমকে ওঠার মতো নয়?
২. রাজনীতির প্রশ্নে আসি। রাজনৈতিক দর্শন সৃষ্টির পেছনের কারণ হলো, সমষ্টিগত মানুষের মঙ্গল। রাজনীতি মূলত একটি সমাজ ব্যবস্থা। মানুষ সমাজবদ্ধ এবং একইসাথে বুদ্ধিমান জীব বলেই সমাজকে রক্ষার স্বার্থে তারা কর্মকৌশলের চিন্তা করেছে। আর সেই চিন্তার ফসলই হলো রাজনীতি বা রাজনৈতিক দর্শন। এই দর্শনের ভিন্নতা রয়েছে। নানাজন নানা দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করেছে সমাজের সুরক্ষা ও উন্নতির। যার ফলে দর্শনে রয়েছে ভিন্নতা, সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মত ও দলের। কিন্তু বাহকতার প্রশ্নে রাজনীতি নিয়ে রয়েছে অন্য ব্যাখ্যা। প্রতিটা ক্রিয়ারই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে, তেমনি রয়েছে রাজনীতিতেও। যখন সমাজ থেকে বিষয়টি ব্যক্তি পর্যায়ে পৌঁছে তখনই প্রতিক্রিয়ার শুরুটা হয়। ‘পলিটিক্যাল গড’ হবার এমন ইচ্ছা হচ্ছে সেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। একজন ‘পলিটিক্যাল গডে’র কাছে ক্রমেই সমষ্টি বা সমাজ তুচ্ছ হয়ে দাঁড়ায়, ‘আমি’টাই মুখ্য হয়ে ওঠে। তার ক্ষমতার লিপ্সা মেটাতে রাজনীতি তখন হয় ‘বাহক’, হয়ে ওঠে ‘গাধা’।
ভারতের যোগ বাবা, স্বামী বাবা, রাম-রহিম ধরনের ধর্ম-বাবাদের যেমন অগণিত ভক্ত অনুরাগী থাকে, তেমনি ‘পলিটিক্যাল গড’দের একটি নির্বিবেক ভক্ত শ্রেণি গড়ে ওঠে। ইতিহাসে রাজনীতিকেন্দ্রিক যতোগুলো দুঃসহ ঘটনার স্মৃতি রয়েছে, স্মরণ করে দেখুন, সবগুলোর পেছনেই রয়েছেন একেকজন ‘পলিটিক্যাল গড’ আর তাদের নির্বিবেক ভক্তকুল।
মুশকিল হলো এমন ভক্তকুলের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্বিবেক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে সমাজে। সুকুমার বড়ুয়ার ‘অসময়ের মেহমানে’র মতো ‘ঠিক আছে’ ধরনের নির্বিবেক মানুষ আজ সবখানে। যার ফলেই কক্সবাজার থেকে ফিলিস্তিন কিংবা ইয়েমেনের আকাশ আজ ভারি মজলুমের কান্নার অসহায় মেঘে। ফেসবুক থেকে