আমিরুল ইসলাম : মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যার মুখে দশ লাখেরও বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের পর এবার পালিয়ে আসছে শত শত বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। বাংলাদেশ এখন কী করবে? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেছেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যার বিষয়টি সারাবিশে^র মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মিয়ানমারে যে শুধু রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে তা নয়। তারা রাখাইন অঞ্চলে রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর ওপর যেভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে, তাছাড়া বাংলাদেশ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কীভাবে সংকটের মধ্যে পড়েছে, সে বিষয়টি আমাদের সারাবিশে^র মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বর্ডার সিল করে দেয়া হয়েছে। বর্ডার সিল করে হয়তো চেষ্টা করা হবে যেন তারা না আসেতে পারে। কিন্তু এমন দুর্গম এলাকা আছে যেসব জায়গায় মানুষ দাঁড় করিয়ে সিল করা যেটা বোঝায় সেটা কার্যকর করা সম্ভব হয় না। সুতরাং এ ধরনের পরিস্থিতিতে যখন সেখানে অত্যাচার নির্যাতন ও হত্যার শিকার হবে তখন এ ধরনের দুর্গম পথ দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে আসার চেষ্টা করবে। যেহেতু সারাবিশে^ একটা বার্তা আছে যে বাংলাদেশে গেলে আর কোনো সমস্যা নেই, সেখানে নিরাপদে থাকা, খাওয়া ও অন্যান্য সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। তাই তারা বাংলাদেশে আসে। তাছাড়া রাখাইন অঞ্চলে যারা আছে তারা অন্য কোনো রাষ্ট্রে যাওয়ার মতো কোনো সীমান্ত নেই। সীমান্ত আছে ভারতের সাথে, কিন্তু সেটা আরো দুর্গম। সাধারণ মানুষ যারা তারা যেতে পারবে না। তাদের একমাত্র বিকল্প হলো বাংলাদেশে আসা। এতে করে বাংলাদেশের জন্য আরও ঝুঁকি বাড়ছে। আরো লোক যদি আসে তাহলে তাদের বাসস্থান ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কাজ হচ্ছে বিশ^ সম্প্রদায়কে সজাগ করা। বিশ^ সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এই বিষয়গুলোকে তুলে ধরা, যাতে এ ধরনের ঘটনা মিয়ানমার আর না ঘটাতে পারে। বাংলাদেশ সেটা করছে। আন্তর্জাতিক যে কনভেনশন আছে সেখানে সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে প্রতিবাদ জানানো। ভারত ও চীন যেহেতু দুটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র যারা মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাদের সাথে আরো শক্তিশালী জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। এর পরেও যদি যারা সেখানে বসবাস করে তাদের যদি এ রকম শোচনীয় অবস্থা হয় তাহলে এটার যে পরিণতি হবে, সেটা হলো পুরো অঞ্চলে জঙ্গিবাদের উত্থান হতে পারে এবং নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। ধরে নিতে হবে রোহিঙ্গা যারা আসছে, দীর্ঘমেয়াদে তারা এখানে থাকবে। সহজে অল্প সময়ে তারা যাবে না। এ ধরনের চিন্তা থেকেই এখন দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা করতে হবে যাতে এতো সংখ্যক রোহিঙ্গা আমাদের এখানে অবস্থান করবে তার জন্য বাড়তি যে নিরাপত্তা সংকট, অপরাধ সংকট, পরিবেশগত সংকটে যেন পড়তে না হয় সেজন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে, যেহেতু এটা সংঘাতপূর্ণ এলাকা। বহু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আছে, দেশের ভেতরে আছে, দেশের বাইরেও আছে। তারা অনেক সময় সুযোগ নিয়ে এ ধরনের লোকদের বিভিন্ন অপরাধের দিকে টেনে নিয়ে যায় টাকা পয়সা দিয়ে। সেটা জঙ্গিবাদ হতে পারে , মাদক হতে পারে, মানব পাচার হতে পারে, নারী পাচার হতে পারে। এগুলো যেন না হয় তার জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে নিতে হবে।