শিরোনাম
◈ আবারও মে‌সির জোড়া গোলে ইন্টার মায়ামির জয় ◈ এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ ‘তুমি কেন ফুয়েল কেটে দিলে?’ ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের আগে পাইলটদের শেষ ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং ◈ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের জন্য সুখবর: মৃত্যু হলে লাশ দেশে পাঠাবে সরকার, ক্ষতিপূরণ মিলবে বীমার আওতায় (ভিডিও) ◈ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত: পিউ রিসার্চ ◈ বেপরোয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩ ◈ স্প‌্যা‌নিশ ক্যাবরেরাই থাক‌ছেন বাংলা‌দেশ ফুটবল দ‌লের কোচ ◈ সন্ধ‌্যায় নেপালের বিরু‌দ্ধে লড়াই‌য়ে নাম‌ছে বাংলা‌দে‌শের মে‌য়েরা ◈ ঢাকায় হবে এশিয়া কাপের সভা, ভারত অংশ নে‌বে না ◈ এবার যে কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন ড. ফয়জুল হক

প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৬:০৮ সকাল
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৬:০৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সিবিআই-রাজ্য দ্বন্দ্ব: এবারই প্রথম নয়

বাংলা ট্রিবিউন : ভারতে চলছে সিবিআই ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে উত্তেজনা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পুলিশের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ বৈঠকি কর্মসূচি শুরু করেছেন। যোগ দিয়েছে বিরোধী দলও। রাষ্ট্রপতি শাসনে ভয় দেখাতে ছাড়েনি কেন্দ্রের মোদি সরকার। অবশ্য সিবিআইয়ের সঙ্গে প্রাদেশিক সরকারের এমন উত্তেজনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে সিবিআই ও রাজ্য সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিলো। যদিও এবারের মতো সরাসরি রাজ্য পুলিশ ও সিবিআই এর মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী রাজীব কুমারকে জেরা করার জন্য রবিবার সন্ধ্যায় সিবিআইয়ের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসিপি) তথাগত বর্ধনের নেতৃত্বে কলকাতার লাউডন স্ট্রিটে তার বাসভবনে যায় ৪০ জনেরও বেশি সদস্যের একটি সিবিআই টিম। তাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সারদা ও রোজভ্যালি চিটফান্ডে রাজীব কুমারের সংশ্লিষ্টতা ছিল। সিবিআইয়ের সদস্যরা পুলিশ কমিশনারের বাড়ির গেটের কাছে যেতেই বাধা দেয় কলকাতা পুলিশের বিশাল বাহিনী। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি। পরে সিবিআইয়ের ডিসিপি তথাগত বর্ধনসহ কর্মকর্তাদের জোর করে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার শেক্সপিয়র সরণি থানায়।

এর আগে ৯০ দশকের শেষে এমন একটি সংঘত শুরু হয়েছিলো। তখন সিবিআই যুগ্ম পরিচালক ইউএন বিশ্বাস তৎকালীন রাষ্ট্রীয় জনতা দল নেতা লালু প্রসাদ যাদবকে গ্রেফতার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়ে পাটনার এসপিকে অনুরোধ করেন যেন লালু প্রসাদকে গ্রেফতারে সেনা মোতায়েন করা হয়।

১৯৯৭ সালে আসলেই এই ঘটনা ঘটেছিলো। লালু যাদবকে গ্রেফতারের জন্য সবধরনের আইনি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেছিলো সিবিআই। তবে রাজ্য সরকার সেই প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সিবিআই যখন এই বিষয়ে বিহারের প্রধান সচিব বিপি ভার্মার সাহায্য চায়, তখন তাদের বলা হয় যে শীর্ষ কর্মকর্তা তখন ছিলেন না।

এই প্রক্রিয়ায় হতাশ হয়ে পুলিশ মহাপরিচালক এসকে সাক্সেনার দ্বারস্থ হয় সিবিআই। সাক্সেনা বলেন, এই বিষয়ে তার আরও সময় প্রয়োজন। কলকাতার সিবিআই যুগ্ম পরিচালক বিশ্বাস অবৈধভাবে পাটনার এসপিকে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এই ঘটনায় পার্লামেন্টে ঝড় ওঠে। এখনও সেসব নথিবদ্ধ রয়েছে। কিছু নথিতে বলা হয়, ‘তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিপিআই নেতা ইন্দ্রজিত গুপ্তা বলেছেন যে পাটনায় সিবিআই যুগ্ম পরিচালক দানাপুর সেনানিবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চিঠি লিখেছিলেন। তিনি লেখেন, ‘পাটনা হাইকোর্টের মৌখিক নির্দেশনা অনুযায়ী বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবকে গ্রেফতার করতে অন্তত এক কোম্পানি সেনা সদস্য দিয়ে সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছে।’

গুপ্তা লোকসভাকে জানান, দানাপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন যে তিনি বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনী ও সিবিআইয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। জবাবে সেনাবাহিনী জানায়, ‘শুধুমাত্র যথাযথ বেসামরিক কর্তৃপক্ষের অনুরোধেই প্রশাসনকে সহায়তা করবে সেনাবাহিনী। এই বিষয়ে সেনা সদর দফতরের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’

সেনাবাহিনীর সমর্থন না পেয়ে সিবিআই আদালতের দ্বারস্থ হয়। সিবিআই সংশ্লিষ্ট আদালত তখন বিহারের পুলিশ মহাপরিচালককে শোকজ নোটিশ পাঠায় যে কেন গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকরে সিবিআইকে সহায়তা দেওয়া হয়নি।

৩০ জু্লাই সিবিআইয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশেষ বিচারক এস কে লাল এই নোটিশ জারি করেন। সেসময় ঘরে ঘরে ইউএন বিশ্বাসকে সবাই সৎ ও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে জানতো। কারণ তিনি লালু যাদবের শক্তিমত্তার বিরুদ্ধে তারই রাজ্যে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

অবসরের পর বিশ্বাস তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে রাজনীতি শুরু করেন। মমতা ব্যানার্জি তাকে মন্ত্রিত্বও দেন। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্বপালন করেন।

সিবিআইয়ের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের সংঘাত এখন বেশ স্পষ্ট। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্ষতি করছে। সিবিআই সদস্যদের আটকের বিষয়ে সংস্থাটি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে যাচ্ছে।

আসলেই কি সিবিআই কেন্দ্রীয় প্রটোকল ভেঙেছে?

বর্তমানে প্রায় সবগুলো বিরোধীদলই কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় কাঠামো লঙ্ঘন করে তারা সিবিআইকে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে সিবিআইয়ের দাবি, সাবেক পরিচালক অলোক ভার্মা রাজ্যের পুলিশ মহাপরিচালকের কাছে এই মামলার বিষয়ে আগেই অবহিত করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, তারা সরকার গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। রাজিব কুমার সেই দলেরই প্রধান ছিলেন।

এর আগে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল। সেসময় রাজ্য পুলিশ প্রধান ‘সম্পূর্ণ সহযোগিতার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

কলকাতায় সিবিআইয়ের কার্যক্রম পরিচালনার এখতিয়ার নেই বলে দাবি করে তৃণমূল কংগ্রেস। কিছুদিন আগে অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশাম পার্টি সরকারও একই অভিযোগ করেছিলো। তবে সিবিআই কর্মকর্তাদের দাবি, তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি ভিত্তিহীন এবং দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এস্টাবলিশমেন্ট আইনের আওতায় দেশজুড়ে সিবিআইয়ের কার্যক্রম পরিচালনার এখতিয়ার রয়েছে। তারা জানায়, ডিপিএসই আইনের ৬ নম্বর সেকশনে স্পষ্ট করে বলা আছে যে বিশেষ পুলিশ অন্যান্য স্থানে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।

সাবেক সিবিআই যুগ্ম পরিচালক নবনিত ওয়াসান বলেন, সিবিআই এই মামলার সুয়ো মোটো দায়িত্ব নেয়নি। সুপ্রিম কোর্টই বিষয়টি সামনে এনেছে। তিনি বলেন, ‘একজন সিবিআই কর্মকর্তা ওই এলাকার কোনও পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়