শাহীন চৌধুরী: পর্যায়ক্রমে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আর এজন্য রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই পরিশোধনাগারের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। অবশ্য ঠিকাদার নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতার কারণে এখনো এর কাজ শুরু করা যায়নি। তবে এ অচলাবস্থা অচিরেই কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
আমদানি করা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করে ইআরএল। দেশে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ বৃদ্ধির তাগিদ থেকেই পরিশোধনাগারটির সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ইআরএলের ইউনিট-২ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ইআরএলের প্রথম ইউনিটটির জ্বালানি তেলের পরিশোধন সক্ষমতা মাত্র ১৫ লাখ টন। সেখান থেকে আরো ৩০ লাখ টন বাড়িয়ে দ্বিতীয় ইউনিটে এই সক্ষমতাকে মোট ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১০ সালে। আর এজন্য গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসাল্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে ভারতের ইঞ্জিনিয়ারস ইন্ডিয়া লিমিটেড। কর্মকতারা বলছেন, প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ফলে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিটের নকশা তৈরি করছে ফরাসি প্রতিষ্ঠান টেকনিপ। ১৯৬৮ সালে পরিশোধনাগারটির প্রথম ইউনিটটিও নির্মাণ করেছিল টেকনিপ। দ্বিতীয় ইউনিটের ক্ষেত্রে প্রকল্পের ভৌত কাজ ও যন্ত্রপাতি বসানো হবে টেকনিপের নকশা অনুসারে। এ কাজে ব্যয় হচ্ছে ৩২২ কোটি টাকা। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় স্থাপন করা হচ্ছে ১০টি প্রসেসিং ইউনিট। দ্বিতীয় ইউনিট সম্পন্ন হলে ইআরএল থেকে ফিনিশড প্রডাক্ট হিসেবে এলপিজি, গ্যাসোলিন ইউরো-৫, জেট এ-১, ডিজেল ইউরো-৫, গ্রুপ-৩ বেজ অয়েল, ফুয়েল অয়েল, বিটুমিন ও সালফার পাওয়া যাবে। ঠিকাদার নিয়োগে সময়ক্ষেপণ হওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ইউনিট-২-এর কাজ শুরু হতে দেরি হলেও প্রকল্প শেষ করতে যাতে ব্যয় না বাড়ে, সে বিষয় নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। ব্যয় যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে আমাদের তদারকি সবসময় থাকবে।
বিপিসি সূত্রমতে, দেশ প্রতি বছর জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ টন। এর মধ্যে পরিশোধনের মাধ্যমে মাত্র ১৩-১৪ লাখ টনের চাহিদা পূরণ করতে পারে ইআরএল। বাকি চাহিদা পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। সে হিসাবে ইআরএলের ৩০ লাখ টন সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটি নির্মাণের কাজ শেষ হলে বিপিসির প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হবে। বিপিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করতে না পারার কারণে প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। গত বছর জুনে ইআরএলের এক অনুষ্ঠানে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী প্রকল্পের কাজ দুই মাসের মধ্যে শুরু করার কথা বলে গিয়েছিলেন। এরপর সাড়ে সাত মাস পার হয়ে গেলেও এখনো প্রকল্পের কাজ শুরুই করা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুল হক বলেন, স্বাধীনতার আগে ইআরএল প্রতিষ্ঠিত হলেও দীর্ঘদিন নতুন করে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামের নতুন এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজের জন্য জটিলতার কারণে এখনো ঠিকাদার নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। তবে কিছুদিনের মধ্যে আমরা সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারব।