নিউজ ডেস্ক : পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত শাহাবউদ্দিন (২৩) ও তার সহযোগী শ্যামল দে (৩০) চট্টগ্রামের সেই মাদ্রাসা ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। কৌশলে ওই ছাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়।
গতকাল সোমবার গভীর রাতে ফিরিঙ্গিবাজার মেরিনার্স রোডে পুলিশের গুলিতে মারা যান শাহাবুদ্দিন। আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত জানায় পুলিশ। সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফ করেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান।
শাহাবউদ্দিন ও তার সহযোগী শ্যামল দে কৌশলে ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে জানিয়ে মেহেদী হাসান বলেন, গত রোববার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে জামালখান মোড়ের পিডিবি আবাসিক এলাকার সামনে মেয়েটিকে দেখে একটি প্রাইভেটকার দাঁড়ায়। এ সময় গাড়িতে থাকা শাহাবউদ্দিন মেয়েটির কাছে রীমা কমিউনিটি সেন্টার কোন দিকে তা জানতে চান। মেয়েটি তা দেখিয়ে দেওয়ার পর তারা চিনবে না বলে মেয়েটিকে গাড়িতে উঠতে বলে। গাড়িতে উঠার পর তারা অস্ত্রের মুখে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় তারা মেয়েটির মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ও মোবাইল ফোনে ধর্ষণ চিত্র ধারণ করার অভিনয় করে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে মেয়েটিকে হুমকি দেয়।
গাড়িচালক শ্যামল দেও মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। প্রথমে শ্যামলকে (৩০) গ্রেপ্তারের পর মেয়েটি তাকে শনাক্ত করে। পরে শাহাবউদ্দিনকে ধরতে গেলে মেরিনার্স রোডে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহাবউদ্দিন নিহত হয়।
এর আগে গতকাল সোমবার মেয়েটি অভিযোগ করলে ধর্ষকদের ধরতে অভিযান শুরু হয়। পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী বলেন, ‘গাড়িচালকদের একটি চক্র এ ধরনের অপরাধ করে আসছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ ছিল। সোমবার মেয়েটি এসে একই ধরনের অভিযোগ করে।’
শাহাবউদ্দিন ও শ্যামল দুজনেই গাড়ির চালক ছিলেন। কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান জানান, শ্যামলের গাড়িতেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়। শ্যামলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি জানান, রীমা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে যাওয়ার পর মেয়েটি তাকে নামিয়ে দিতে বললেও তারা না নামিয়ে সার্সন রোডের দিকে চলে যায়। এ সময় শ্যামল গাড়ির চালকের আসনে ছিলেন। শাহাবউদ্দিন মেয়েটিকে ধর্ষণ করে চালকের আসনে বসে ও পরে শ্যামল তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তারা কেউ গাড়ি থেকে না নেমে সিটের পাশ দিয়েই যাওয়া-আসা করে। পরে মেয়েটিকে গণি বেকারি এলাকায় নামিয়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
কামরুজ্জামান আরও জানান, ঘটনার পরদিন সোমবার সকাল থেকেই শাহাবউদ্দিন মেয়েটিকে ফোন করে তার সাথে দেখা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। দেখা না করলে ধর্ষণের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। শাহাবউদ্দিন সন্ধ্যায় মেয়েটিকে দিদার মার্কেটের সাফা আর্কেড কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় অবস্থান করতে বলেন। এরপর মেয়েটি থানায় অভিযোগ করে।
এরপর তার সঙ্গে কথা বলে ধর্ষণকারীদের ধরতে ফাঁদ পাতা হয়। কামরুজ্জামান বলেন, মেয়েটিকে সেখানে দাঁড় করিয়ে আমরা ফাঁদ পাতি। এ সময় শাহাবউদ্দিন তার অপর এক সহযোগীকে নিয়ে সেখানে আসে। মেয়েটি গাড়ির সামনে গেলে তাকে টেনে তুলে চকবাজারের দিকে দ্রুত চলে যায়। গাড়িটিকে ধাওয়া করে পুলিশ গাড়ির নম্বরটি বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেসে মেসেজ দেয়। পরে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। গাড়িটি বিভিন্ন দিকে ঘুরে লালদিঘীর মাঠের সামনে পৌছালে শাহাবউদ্দিন মেয়েটিকে রেখে গাড়ি থেকে নেমে হকার্স মার্কেটের ভেতর দৌঁড়ে ঢুকে যায়। পরে লালদিঘীর মাঠের সামনে থেকে গাড়িটি আটক করে মেয়টিকে উদ্ধার করা হয়।
কামরুজ্জামান জানান, ওই গাড়িটি একজন ব্যাংক কর্মকর্তার, সেটি চালাতেন শাহাবউদ্দিন। রাতে চকবাজার ডিসি রোড থেকে শ্যামলকে গ্রেপ্তারের পর ধর্ষণের ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি আটক করা হয়। ওই প্রাইভেটকারটি একজন চিকিৎসকের। শ্যামল বলেছে, রোববার সকালে সে তার মালিকের ছেলেকে কলেজে পৌঁছে দেওয়ার পর শাহাবউদ্দিন তাকে ফোন করে জামালখান এলাকায় আসতে বলে। আর আগে থেকেই সেখানে শাহাবউদ্দিন অবস্থান করছিলেন।
শাহাবউদ্দিনের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এর আগেও এসেছিল। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি অন্য যাকে নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তার নামও
শাহাবউদ্দিন বলে জানান পরিদর্শক কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘তার ঠিকানাও সংগ্রহ করা হয়েছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে।’ দৈনিক আমাদেরসময়
আপনার মতামত লিখুন :