শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০২:৫৭ রাত
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০২:৫৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে সব বাঙালি এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য টাকা তুলেছি

প্রিয়াংকা আচার্য্য : পশ্চিমবঙ্গের পবিত্র সরকার একাধারে শিক্ষাবিদ গবেষক ও সাহিত্যিক। জন্ম ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ধামরাইয়ে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পর স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রবন্ধ ও সাহিত্য রচনায় দাপটের সাথে রাজত্ব করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের বাংলাদেশ সরকার ১মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করেছেন। ২০১৬ সালের ১৪ জুন কলকাতা শহরে তার বাড়িতে বসে শোনালেন ৭১ সালে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা।

আমি তখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পিএইচডি করছি। সেখানের খবরের কাগজে থেকে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য পেতে লাগলাম। তখন শিকাগোতে বসবাসকারী দুই বাংলার লোকজন জড়ো হয়ে ঠিক করলাম আমাদেরও কিছু একটা করা দরকার। এ ব্যাপারে আমাদের নেতৃত্ব দিলেন পূর্ব বাংলার বিখ্যাত স্থপতি ফজলুর রহমান খান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থাপনা উইলিস বা সিয়ার্স টাওয়ারের স্থপতি। তার অ্যাপার্টমেন্টেই আমাদের সব সভা হতো। আমার বন্ধু ড. শামসুল বারী তখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়াতেন আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তখন ছিলেন শিকাগোতে।

পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার বাঙালিরা মিলে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করার জন্য আমরা একটা সংগঠন তৈরি করলাম। আমরা প্রথমেই বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতে লাগলাম। টাকা তোলার একাধিক রাস্তা ছিল। প্রথমত, সদস্যদের কাছ থেকে মাসে মাসে নির্দিষ্ট পরিমানে চাঁদা সংগ্রহ করা। দ্বিতীয়ত, আমাদের এখানকার বাঙালি গৃহিনীরা চাঁদা তোলার জন্য কয়েকটি ডিনারের আয়োজন করলেন। সেখানে রায়ালফ নিকোলাস, ক্লিন্ট নিলিসহ আমাদের অনেক আমেরিকান বন্ধু মোটা অংকের টাকা দিয়ে সহায়তা করলেন। তৃতীয়ত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে তার টিকিট বিক্রি করে টাকা তোলা। শিকাগো ও মিশিগানের বেশ কয়েকটি জায়গায় আমরা অনুষ্ঠান করে প্রচুর টাকা সংগ্রহ করেছিলাম।

মিশিগানের অ্যান হার্বারের অনুষ্ঠানের কথা আমার বিশেষভাবে মনে আছে। সেখানে আমরা পূর্ব পাকিস্তানে হওয়া পশ্চিম পাকিস্তানিদের নৃশংস অত্যাচারের কথা তুলে ধরলে অনেক বাঙালি, যারা বহুদিন আগে দেশ ছেড়ে এসেছিলেন তারা কেঁদে ফেলেছিলেন। ডেট্রয়েটের এক প্রবীণের স্মৃতি আমাকে এখনও ভাবায়। তিনি আমার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, কখনও আশা করিনি আমার জন্মভূমি এমন হিং¯্র নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হবে। এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা সেই অনুষ্ঠান থেকে অনেক টাকা সংগ্রহ করেছিলাম। সেই টাকা দিয়ে কিছু অস্ত্র, রাবারের নৌকা, ডুবুরীর পোশাক কিনে পাঠিয়েছিলাম।

আমি ছিলাম সংগঠনে আমার দায়িত্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা। গান, নাচ, আবৃত্তি যারা করবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে সমন্বয় করা। আমরা মঞ্চনাটকও পরিবেশন করেছিলাম। আমি নির্দেশনাও দিয়েছিলাম নাটকে। পত্রিকা বা টিভিতে বাংলাদেশে হওয়া অত্যাচারের ছবিগুলো দেখতাম। অদ্ভুত এক তাড়ণা কাজ করতো। হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে না পারায় আক্ষেপ থাকলেও নিজেদের জায়গা থেকে যতোটা পারা যায় ততোটুকু করার চেষ্টা করতাম। যে জন্মভূমি ছেড়ে এসেছিলাম তার জন্য বাংলাদেশের বন্ধুদের সাথে একসাথে বেশ উজ্জীবিত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতাম। সেজন্য আমি বেশ গর্বের সাথেই বলি, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সম্মননা পদক পাওয়াকে আমার জীবনের মহত্বতম অর্জন বলে মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়