আমিন মুনশি : রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা-দীক্ষা ও সীরাতের মূল লক্ষ্য ছিলো মানুষের কলব বা হৃদয়। কারণ, মানুষের সবকিছুর ওপর কলবের রাজত্ব চলে। অসৎ ব্যক্তি রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিলে, রাষ্ট্রের যে অবস্থা হতে পারে, নষ্ট কলবের অধিকারী ব্যক্তির কাজ কর্মও ঠিক তাই। এ জন্য বিজ্ঞরা বলেন, কলব নষ্ট তো সবকিছু নষ্ট। দিল ঠিক তো সব ঠিক।
মানুষ ঠিক তো সমাজ, দেশ ও জাতি ঠিক। মানুষের ভেতরে এমন কিছু রোগ রয়েছে, যেগুলো মানুষকে হিংস্র হায়েনাতে পরিণত করে; মাটির মানুষের ভেতর আগুন ধরিয়ে দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিশোধের আগুন। এর দ্বারা সে একা পুড়ে, বিষয়টা তা কিন্তু নয়। বরং অন্যকেও জালিয়ে ভস্ম করে ফেলতে চায়। পরিণামে সমাজে পরস্পর লড়াই, অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে। প্রাসঙ্গিকভাবে চলে আসে মিথ্যা, গিবত, অপবাদ, ধোকা, প্রতারণা ইত্যাদির মতো বিষয়গুলো। আর তখন সমাজে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে।
রাসূল (সা.) মানুষের কলবের চিকিৎসা করেছেন। তিনি কলব থেকে ঐ রোগগুলো দূর করেছেন। এ চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিলো, সবার ভেতর জবাবদিহিতার উপলব্ধি জাগ্রত করা। রাসূল (সা.) আখেরাতে সবকিছুর হিসাব দিতে হবে, আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দেখেন এই বিশ্বাস সকলের মনে বসিয়ে দিয়ে তা নিশ্চিত করলেন। সঙ্গে সঙ্গে পরস্পর ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসাকেও জাগিয়ে তুললেন। তিনি তাদেরকে খোদাভীতি, অন্যকে অগ্রাধিকার, কোরবানি, ধৈর্য ও ইখলাসের শিক্ষা দিলেন। এর দ্বারা যে সমাজ তৈরি হয়েছিলো তার নজির মেলানো দায়।
আজকাল মানুষে মানুষে কত পার্থক্য! কেউ কালো, কেউ সাদা। বংশগত পার্থক্য, তারপর রয়েছে জাতিগত পার্থক্য। বর্ণ বৈষম্যের কারণে, এখানো বহু দেশ অশান্ত। ইসলাম এ সকল পার্থক্যের ভিত্তিতে, সব ধরনের বৈষম্যকে সমাজ থেকে দূর করে, সকল মানুষকে এক সারিতে এনে দাঁড় করে দিয়েছে । সবাই একই বাপ-মায়ের সন্তান। সকলে ভাই ভাই; সকলে সমান।
বিদায় হজের ভাষণে রাসূল (সা.) এর ঐতিহাসিক ঘোষণা ছিলো, ‘আরবদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই অনারবদের ওপর, কোনো কালোর ওপর শেতাঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব নেই; সবাই মানুষ হিসেবে সমান। তবে তাকওয়ার দিক থেকে যে উপরে, সে তার নিচের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। এ জন্য, হজরত ওমর ইবনে খাত্তাবের মতো আরবের বীর পুরুষ, কালো হাবশী হজরত বেলালের নাম নেয়ার সময় বলতেন, ‘সায়্যেদানা বেলাল’ আমাদের নেতা বেলাল। কারণ, কালো-সাদার ভিত্তিতে বৈষম্য ইসলামে নেই। সাদা-কালোর নেতা হতে পারে। পারে কালোও সাদার নেতা হতে। এই পরিবেশকে বহাল রাখার জন্য, ভ্রাতৃত্ব ও সমতাকে ইসলাম তার শাখাগত বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত করেছে।
প্রতিদিন পাঁচবার জামাতে নামাজ আদায় করতে হয়। এখানে সমাজের উঁচু নিচু দেখা হয় না। যে আগে আসে, সে আগের কাতারে বসে। ইসলামে নামাজের পরেই হজের স্থান। সেখানেও রয়েছে সমতার শিক্ষা। আরব, অনারবের লক্ষ লক্ষ লোকের সেখানে সমাগম হয়। কিন্তু কারো জন্য হজ আদায়ে ভিন্নতা নেই। সকলের পোশাক এক রকম। একই ময়দানে হয় সবার অবস্থান।