মাসুদ রানা লন্ডন থেকে: বাঙালি নাকি দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য বুঝে না। হতে পারে। কিন্তু বচনে দাঁতের ব্যবহার বাঙালি বেশ ব্যাপকভাবেই করে থাকে।
যেমন, 'দাঁতভাঙা জবাব' বলে একটা কথা আছে বাংলায়। কথাটার নিঃসন্দেহে রূপক অর্থে ব্যবহৃত। কিন্তু এই রূপকেরও একটি যৌক্তিক অর্থ থাকা চাই। আমরা কি ভেবে দেখেছি, আসলে এর অর্থ কী?
দাঁতভাঙা জবাবের একটি অর্থ হতে পারে যে, যাকে জবাব দেওয়া হবে, জবাব শুনে তার দাঁত ভেঙে যাবে। কিন্তু বিষয়টি কি আদৌ যৌক্তিক? জবাব যিনি শ্রবণ করবেন, তাতে ভাঙার কিছু থাকলে সেটি তার কানে হতে পারে, দাঁতে হয় কী করে? লোকেরা কি দাঁত দিয়ে শোনে? নিশ্চয় নয়। ফলে, এই অর্থ গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে, যিনি জবাব দেবেন, সেটি এমনই কঠিন যে, তা বলতে গিয়ে তার দাঁত ভেঙে যাবে। যেমন, অনেকে বলেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসে ব্যবহৃত শব্দ ও বাক্য পাঠ এতোই কঠিন যে, উচ্চারণ করতে গেলে দাঁত ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। এটিও একটি রূপক এবং এর যুক্তি আছে। কারণ, উচ্চারণ করতে দাঁতের ব্যবহার করতে হয়। ফলে, এখানে যুক্তি আছে।
তো, আমরা দেখছি, দাঁত ভাঙা জবাব যিনি দেন, তিনি যেহেতু দাঁত ব্যবহার করে জবাব দেন, তাই দাঁতটা তারই ভাঙে। যিনি জবাব শুনেন, তার দাঁত ভাঙতে পারে না। কারণ, তিনি জবাবটি দাঁত দিয়ে শোনেন না।
এই যদি হয় দাঁতভাঙা জবাবের অর্থ, এরূপ জবাব দেওয়ায় নিজের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ আছে কি? বস্তুতঃ ক্ষতি আছে, লাভ নেই।
সুতরাং, চলুন, আজ থেকে আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া থেকে বিরত হই। কারণ, দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য বুঝা ও তার যত্ন নেওয়া খুব জরুরি।
সূত্র: ফেসবুক থেকে নেওয়া
আপনার মতামত লিখুন :