ফরহাদ আমিন, টেকনাফ (কক্সবাজার) : কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সুপারি চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সাথে আগাম পেকেছে। সাধারণত কার্তিক-অগ্রহায়ণ তথা নভেম্বরের শেষ দিকে গাছে সুপারি পাকার নিয়ম চলে আসলেও প্রাকৃতিক বিবর্তনে এবারে আগাম পেকেছে। গ্রাম্য প্রবাদ চালু আছে ‘আশ্বিন কার্তিক-গোলা বাতি’। তার মানে হচ্ছে আশ্বিন-কার্তিক মাসে গাছের ফল-ফলাদি পেকে থাকে। এদিকে মৌসুমের শুরুতে বিনা খরচে এ ফসলে কৃষকরা অতি লাভবান হওয়ায় সুপারি চাষের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
জানা যায়, ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আশানুরুপ ফলন এবং দামও বেশী হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে। অন্য চাষাবাদের মত কোন রকম ঝুঁকিপূর্ণ না হওয়ায় কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশী ঝুঁকেছেন বলে জানা গেছে। টেকনাফ উপজেলা সুপারি চাষের উপযোগি আবহাওয়া এবং মাটি হওয়ায় প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও উৎপাদিত সুপারি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কারিগরী সহযোগীতা পেলে গ্রামীণ কৃষকরা সুপারি চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলে আরো সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন বলে সচেতন মহলের ধারণা। উন্নত জাতের সুপারি একবার চাষ করে সারা জীবন আয়ের মুখ দেখতে পান কৃষকরা। এতে পরিবারে প্রচূর টাকা আয়ের মাধ্যমে জীবন জীবিকায় অবদান রাখে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় সুপারীর বাগান মালিকগণ আগাম পাকা উৎপাদিত সুপারী টমটম, রিক্সা, জীপ, ভ্যানগাড়ি যোগে বিক্রি করার জন্য বাজারে নিয়ে আসছেন। আবার পথিমধ্যে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা সুপারী কিনে বাজারে আনছেন। ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীগণ এসে সুপারী কিনে কাঁদি থেকে ছিঁড়ে বস্তায় ভরে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন। টেকনাফ থানার সামনে এবং হোটেল দ্বীপপ্লাজার সামনে সাপ্তাহিক রবিবার ও বৃহষ্পতিবার বসে সুপারী বাজার।
উল্লেখ্য, টেকনাফ পৌরসভাসহ উপজেলার সব ইউনিয়নেই কম-বেশী সুপারী বাগান রয়েছে। বিশেষতঃ টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালিয়াপাড়া, পশ্চিম গোদারবিল, বড় হাবিবপাড়া, উত্তর লম্বরী, দক্ষিন লম্বরী, মিঠাপানিরছড়া, বরইতলী, কেরুনতলী, সাবরাং ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া, ডিগিল্যারবিল, সিকদারপাড়া, মুন্ডাল ডেইল, নোয়াপাড়া, আচারবনিয়া, মগপাড়া, হারিয়াখালি, লাপারঘোনা, কচুবনিয়াপাড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং, উলুচামরী, রঙ্গিখালী, পানখালী, মোচনী, মরিচ্যাঘোনা, হোয়াইক্যংয়ের মরিচ্যাঘোনা, কম্বনিয়া পাড়া, খারাংখালী, নয়াবাজার, কাঞ্জরপাড়া, রইক্ষ্যং, দৈংগ্যাকাটা, লাতুরীখোলা, হরিখোলা ও বাহারছড়া ইউনিয়নের পুরো এলাকায় কৃষক সুপারি চাষ করে থাকেন।
উপজেলার ১টি পৌরসভা এবং ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সুপারির বাগান রয়েছে সাবরাং, টেকনাফ সদর ও বাহারছড়া ইউনিয়নে। এখানকার কৃষি-অকৃষি পরিবারগুলো সহজে সুপারি চাষ করে প্রচুর টাকা আয় করছেন বলে জানা গেছে। সুপারি চাষীদের দেখাদেখিতে অন্য চাষে নিয়োজিত কৃষকগণও বর্তমানে এচাষের দিকে মনোযোগী হচ্ছেন। কেননা এ গাছ একবার রোপন করলে প্রতি মৌসুমে ফল পাওয়া যায়। টেকনাফের আবহাওয়া ও মাটি চাষাবাদের উপযোগি হওয়ায় সার বা বিষ কোন কিছু প্রয়োগ করতে হয়না বিধায় চাষীদের কোন খরচ নেই বললে চলে। এদিকে টেকনাফ উপজেলা থেকে সপ্তাহের দুই হাটে ১২-১৫ ট্রাক সুপারি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরন করা হয়।
এ উপজেলার সুপারি গুনে ও মানে উৎকৃষ্ট হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে এর বেশ কদর রয়েছে। কয়েকজন সুপারী বাগান মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুপারি চাষ একবার ভাল ভাবে চাষ করতে পারলে সারা জীবন ফলন ঘরে তুলতে পারেন। বর্ষা শেষের দিকে এফল বাজারে বিক্রি করেন। একেকটি গাছে কমপক্ষে ৪-৫ পন (৮০টি সুপারীতে ১ পন) সুপারী ধরে। বর্তমানে আগাম পাকা এক পন সুপারি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকারও বেশী দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ লোকজনও বাড়ির খোলা জায়গায় সুপারি চাষ করে সহজেই লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। দেখা গেছে, টেকনাফের উন্নয়ন বঞ্চিত কৃষি এলাকা সদর ইউনিয়ন ও সাবরাং ইউনিয়নের অধিকাংশ পরিবার সুপারি থেকে প্রচুর টাকা রোজগার করে থাকেন। এর মধ্যে হাজার হাজার পরিবার বর্তমানে এ চাষের উপর নির্ভরশীল। তারা অন্য চাষের চাইতে সুপারি চাষে কল্পনাতীত লাভবান হচ্ছেন।