শিরোনাম
◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ

প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:২২ রাত
আপডেট : ৩১ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:২২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পরিকল্পনা

ড. এমদাদুল হক : কল্পনা এক প্রকারের শক্তি। শক্তি নিরপেক্ষ। শক্তির সুখকর ব্যবহার প্রশংসীয়। অসুখকর ব্যবহার নিন্দনীয়। আলোক শক্তি, শব্দ শক্তি, তাপ শক্তি, চৌম্বক শক্তি ইত্যাদি শক্তি কাজে লাগানোর কৌশল মানুষ উত্তমভাবেই রপ্ত করেছেÑযদিও এগুলো পরশক্তি। খুব কম মানুষেই জানে কল্পনাশক্তির সুখকর ব্যবহারÑযদিও তা অন্তঃস্থিত শক্তি। অথচ, সব পরশক্তির ব্যবহার ধ্বংসাত্মক হতে পারে যদি কল্পনাশক্তির ব্যবহার সঠিক না হয়। তাই, কল্পনাশক্তির সম্যক ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা আবশ্যক।

পরিকল্পনা হলো পরি+কল্পনা। পরি হলো উপসর্গ। উপসর্গেরও অর্থ আছে। অস্তিত্বের বাইরে যাকিছু আছে তাকে আমরা ‘পর’ বলি। পর সক্রিয় হতে পারে, আবার নিষ্ক্রিয়ও হতে পারে। সক্রিয় পরকে বলা হয় ‘পরি’, নিষ্ক্রিয় পরকে বলা হয় ‘পরে’।

নির্বল কল্পনা আসে, আবার চলেও যায়। প্রবল কল্পনা সক্রিয় হওয়ার পর আসে সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্তের পর আসে পরিকল্পনা। এরপর আসে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন স্তর। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলেও বিবেচনায় নিতে হয় ‘পরি’- অর্থাৎ পরিধি। পরিধির মধ্যে রয়েছে স্থান-কাল। হাজার বছর আগে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, হাজার বছর আগের স্থান-কাল বিবেচনায়। ঐসব সিদ্ধান্ত নজির হিসাবে বিবেচনায় রাখা যায় কিন্তু ‘পরিবর্তিত’ স্থান-কালে তা গ্রহণ করা ধ্বংসাত্মক হতে বাধ্য।

সিদ্ধান্ত সঠিক না হলে পরিকল্পনা সঠিক হয় না। সিদ্ধান্ত হলো সিদ্ধের অন্ত। তাই সিদ্ধান্ত সঠিক হবে না সিদ্ধ (পরিশোধিত) না হলে। সাধারণ নিয়ম হলো : সিদ্ধান্তটি হয় নিজেকে সিদ্ধ হয়ে গ্রহণ করতে হবে, না হয় এমন কারোর সহযোগিতা নিতে হবে, যে সিদ্ধ। অসাধারণ বিকল্পটি হলো : লক্ষ্য। সূত্রটি হলো : যে সিদ্ধান্ত লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা সঠিক; যে সিদ্ধান্ত লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তা বেঠিক। যার লক্ষ্য নেই তাকে সিদ্ধান্তের জন্য অন্যের দ্বারস্থ হতেই হয়Ñএকটা জামা কিনতেও সে আরেকজনের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। আরেকজনের সিদ্ধান্তে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যায় না। অবশ্য লক্ষ্যহীন জীবনে অগ্রসর হওয়া যা, থেমে থাকাও তা-ই।

প্রায় সব উপসর্গই মূল শব্দের অর্থ পাল্টে দেয়। ‘পরি’ উপসর্গও পাল্টে দেয় কল্পনার অর্থ। পরিকল্পনা শুরু করার মানেই হলো কল্পনাটি আর কল্পলোকে নেই; তার অবতরণ ঘটেছে মর্তলোকের স্থান-কাল-পাত্রে। স্থানের ভিত্তিতে তাই পরিকল্পনা হয়ে যায়Ñস্থানিক, কালের ভিত্তিতে মেয়াদী, পাত্রের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট।

পরিকল্পনায় ত্রিমাত্রিক নির্মাণের নকশা থাকলেও পরিকল্পনা ত্রিমাত্রিক নয়Ñদ্বিমাত্রিক। বাস্তব অট্টালিকা ত্রিমাত্রিক। কাগজে আঁকা অট্টালিকার নকশা (পরিকল্পনা) যত নিখুঁতই হোক, তা দ্বিমাত্রিক। ত্রিমাত্রিক ছবিগুলোও দ্বিমাত্রিক অধ্যাস। দ্বিমাত্রিক পাপ-পুণ্যের শাস্তি কিংবা পুরস্কারও দ্বিমাত্রিক। অর্থাৎ, পরিকল্পনা দ্বিমাত্রিক স্তরে থাকা পর্যন্ত পর বা পরিধি থেকে শাস্তি কিংবা পুরস্কার প্রাপ্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ।

নিশ্চয়ই উৎপাদনশীলতা নির্ভর করে পরিকল্পনার উপর। প্রযুক্তির এই চরম বিকাশের যুগে উৎপাদন বেড়ে গেছে বহুগুণÑআগে মানুষ পায়ে হেঁটে যে-পথ ১ বছরেও অতিক্রম করতে পারতো না, এখন অনায়াসে সে-পথ অতিক্রম করতে পারে ১ ঘণ্টায়। আগে ২৪ ঘণ্টায়ও ১ জন মানুষ যে বস্ত্র বয়ন করতে পারত না, এখন যন্ত্র তা করতে পারে ১ মিনিটে। কী হয়েছে তাতে? মানুষের ব্যস্ততা কি কমেছে? সংগীত কি বেড়েছে? আনন্দ কি বেড়েছে? না। তাহলে, কী অর্থ আছে উৎপাদন বৃদ্ধির? কী অর্থ আছে এই উন্নতির? যে উন্নতি মানুষকে অধিক প্রশান্তি দিতে পারে না, কী মূল্য আছে তার? এখনো মানুষের অনুক্ষণের চিন্তা আরো উৎপাদন, আরো টাকা, আরো বাড়ি, আরো গাড়ি। কী মূল্য আছে এই অনাসৃষ্টির? উৎপাদশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে যদি চাপ, উদ্বেগ, অস্থিরতা, অসুখ, লোভ-লালসাও বৃদ্ধি পায় তবে কী মূল্য আছে উৎপাদন বৃদ্ধির?

উৎপাদন বেড়েছে বিস্ময়করভাবে তবু কেন মানুষের অভাব দূর হলো না? কেন এখনো কোটি কোটি মানুষকে অনাহারে থাকতে হয়? কারণ, এটিই ছিলো এবং এখনও এটিই আছে মূল পরিকল্পনায়। প্রতি বছর বিশ্বের সামরিক বাজেটের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। পরিকল্পনা করেই মানবজাতি এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে। মানবজাতির সব বড় বড় পরিকল্পনাই পরিধি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা, জীবনের বিকাশ থামিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা।

ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা। তাই বিত্ত আছেÑদীপ্তি নাই; ধূর্ততা আছেÑজ্ঞান নাই; খ্যাতি আছে প্রীতি নাই।

যে পরিকল্পনায় শুধু ব্যস্ততা, ব্যস্ততা আর ব্যস্ততার কথা লেখা আছে, কী হবে যদি এখনই তা ডাস্টবিনে ফেলে কবিতা, সংগীত, নৃত্য, প্রশান্তি ও আনন্দের পরিকল্পনা করি? যদি বিলাসিতার ক্ষেত্রে সরলতার, ব্যাংক-ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে সততার, খ্যাতির ক্ষেত্রে প্রেমের পরিকল্পনা করি তাহলে কী হবে? জীবন ওড়ার পাখা পাবে, সৃষ্টি হবে উৎপাদনশীলতার নতুন পরিভাষাÑআয় কম, সুখ বেশি; খ্যাতি কম প্রীতি বেশি, ধূর্ততা কমÑজ্ঞান বেশি। নতুন এই পরিকল্পনাকে ‘মহাপরিকল্পনা’ বলাই সঙ্গত।

লেখক : সভাপতি, জীবনযোগ ফাউন্ডেশন। সম্পাদনা : রেআ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়