শিরোনাম
◈ ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় গভীর উদ্বেগ: সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে, সতর্ক করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব ◈ ইরানকে শান্তি স্থাপনের আহ্বান, হামলাকে বললেন ‘অসাধারণ সামরিক সাফল্য’: জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ট্রাম্প  ◈ ইরানের তিন পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার দাবি ট্রাম্পের ◈ হাজারীবাগে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট ◈ প্রশান্ত মহাসাগরের পথে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু: নিউইয়র্ক টাইমস ◈ ইসরায়েলকে থামাতে সম্মিলিত কূটনৈতিক পদক্ষেপ জরুরি: ওআইসি সম্মেলনে তৌহিদ হোসেন ◈ ইরানে ডজনখানেক সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের ◈ সাংবিধানিক কাউন্সিল : কিছু প্রশ্ন ও বিএনপির আপত্তি ◈ সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম চূড়ান্ত করেছেন খামেনি ◈ সাবেক সিইসি-ইসিদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএনপি: বিতর্কিত তিন নির্বাচন

প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর, ২০১৮, ০৪:১১ সকাল
আপডেট : ২৯ অক্টোবর, ২০১৮, ০৪:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কল্পনা

ড. এমদাদুল হক : স্মৃতি হলো অতীত, কল্পনা হলো ভবিষ্যৎ। স্মৃতি সীমিত, কল্পনা অসীম। স্মৃতির ঘটনাক্রম ইচ্ছেমতো সাজানোর সুযোগ নেই, কিন্তু কল্পনার জগতে সে সুযোগ অবারিত। স্মৃতিতে ঘটনার মৌলিক রূপ সংরক্ষিত থাকে। স্মৃতির ত্রুটির কারণে বিষয়বস্তু প্রকৃত হতে বিচ্যূত হতে পারে কিন্তু ঘটনা বিন্যাসের দিকে সচেতন দৃষ্টি দিলে তা উদ্ধার করা অসম্ভব নয়।

প্রত্যক্ষণের জন্য চক্ষু আছে, শ্রবণের জন্য কর্ণ। কিন্তু কল্পনা করার জন্য কোনো বিশেষ অঙ্গ নেই। চোখের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রত্যক্ষানুভূতি অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রত্যক্ষানুভূতির চেয়ে প্রবল। তাই শ্রবণকল্পনা, স্পর্শকল্পনা, ঘ্রাণকল্পনা ও স্বাদকল্পনার চেয়ে দর্শনকল্পনা অধিক শক্তিশালী। পর্যায়ক্রমিক দর্শনকল্পনা থেকে ঘটে অলীক প্রত্যক্ষণ। অলীক প্রত্যক্ষণকে সত্য মনে করে অনেক অধ্যাত্মবাদী আত্মপ্রতারণার শিকার হয়।

কল্পনা সত্য কেবল কল্পনার জগতেই। বাস্তব জগতে কল্পনা ও সত্যের মধ্যে পার্থক্য অনেক। কল্পনা আমাদেরকে সত্য থেকে দূরেও নিয়ে যেতে পারে। নদীর এপাড়ে বসে যদি আমরা কল্পনা করতে থাকি যেতো, ওপাড় বেশি সুন্দর, তবে এ পাড়ের উপর আমাদের বিতৃষ্ণা জন্মাতে পারে। অবস্থার আরও অবনতি ঘটার সম্ভাবনা থাকে যদি কল্পনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ওপাড়ের দিকে যাত্রা শুরু করে দেই।

কল্পনায় যদি চাঁদে যাই তবে চাঁদে কিছুই যায় না। গতি এবং চাঁদের উদ্ভব ঘটে কল্পনার জগতেই। যে যেখান থেকে চাঁদের কল্পনা করে সেখানেই তার চাঁদ।

কল্পনা বিন্দুকে সিন্ধুতে এবং সিন্ধুকে বিন্দুতে পরিণত করতে পারে। সিন্দাবাদের ভূত, হনুমানের পর্বত বহন, দৈত্যের বাড়ি, পঙ্খীরাজ ঘোড়া, মধুর নহর আমরা কল্পনা করতে পারি। এসব কল্পনায় দেখা ছবি আমরা এঁকেও দেখাতে পারি। কিন্তু পঙ্খীরাজ ঘোড়ার পিঠে বসে বাস্তবে আকাশে উড্ডয়ন করা যায় না।

চোখ বন্ধ করে কল্পনায় এখনই আমরা চাঁদে চলে যেতে পারি। কল্পনায় যেহেতু চাঁদে চলে গেছি বাস্তবে আর যাওয়ার প্রয়োজন নেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া বৈধ নয়।কল্পনার শক্তি আছে কিন্তু কল্পনা দ্বারা সত্য জানা যায় না। সত্য আর কল্পনা নয়। কল্পনাও সত্য নয়। কিন্তু মানুষ কল্পনাকেই সত্য বলে বিশ্বাস করতে ভালোবাসে, তাও নিজের কল্পনা না, অন্যের কল্পনা। অনেক কল্পকাহিনী আক্ষরিক অর্থেই লোকে বিশ্বাস করে এবং এগুলোকে ধর্মশাস্ত্রের মর্যাদা দেয়। কল্পনার অন্তরালে বুদ্ধির দীপ্তি দেখার সামর্থ্য কম মানুষেরই থাকে।

কল্পনার সঙ্গে বুদ্ধি যুক্ত হলে কল্পনা সৃজনশীল হয়। বুদ্ধি কল্পনাকে থামতে দেয় না, দিক পরিবর্তন করতে দেয় না। চাঁদে যাওয়ার কল্পনা বুদ্ধিকে একটা উপায় বের করার কাজে চালনা করতে পারে। পক্ষান্তরে, কল্পনার সঙ্গে যদি বুদ্ধির সংযোগ না হয় তবে কল্পনা আমাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে।

ডন কুইকসোটের মতো অনেকেই কল্পনার অলীক জগতে বিচরণ করে এবং বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনা ও চরিত্র তৈরি করে আক্রমণ চালায়, হত্যা করে নিরীহ মানুষ। কল্পনাকে সত্য মনে করে জীবনও বিসর্জন দেয় কেউ কেউ। অনেকেরই ধর্মবিশ্বাস হলো, কল্পনাবিশ্বাস। ধর্মবিশ্বাসে আঘাত কথাটির সরল অনুবাদ হলো, কল্পনাবিশ্বাসে আঘাত। এটি মস্তিষ্কে আঘাত করার সমান্তরাল। তাই কল্পনা সত্য নয় জেনেও কল্পনাবিশ্বাসে আঘাত না করা বুদ্ধিমানের কাজ।

কল্পনা যেমন সৃজনশীল হতে পারে, তেমনি হতে পারে ধ্বংসাত্মক। অতীত ফিরিয়ে আনার অবাস্তব কল্পনা সর্বদা ধ্বংসাত্মক হয়। যা গেছে তা চিরদিনের জন্যই গেছে, রাম রাজত্ব হোক কিংবা ওমর রাজত্ব কোনোটিই আর ফিরে আসবে না। যদি কেউ তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে তবে বর্বরতা ছাড়া ভালো কিছুই উৎপন্ন হবে না।

যদি একই কল্পনার পুনরাবৃত্তি হয়, তবে তাকে কল্পনা না বলে ‘কল্পনার স্মৃতি’ বলাই উত্তম। পুনরাবৃত্ত ‘কল্পনার স্মৃতি’ মানবজমিন পতিত করে দেয়।

নতুন নতুন কল্পনা সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু একই কল্পনা যদি কেউ বারবার করতে থাকে তবে তার কল্পনার ক্ষেত্রটি দূষিত হয়ে যায়। একই জমিতে বছরের পর বছর যদি একইরকম ফসলের চাষ করা হয় তবে জমিনটি পতিত হয়ে যায়। আমরা প্রেমের কল্পনা যেমন করতে পারি, তেমনি করতে পারি ভয়ের কল্পনা। ভয়ের কল্পনা যদিও কল্পনাই কিন্তু তা কীভাবে আমাদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা ও অস্থিরতার সৃষ্টি করে, তা সকলেই উপলব্ধি করতে সক্ষম। কল্পনা করি, বাঘ আসছে। আমি ভয়ে দৌড়াচ্ছি। বাঘ আমাকে ধরে ফেলেছে। কোথায় বাঘ? আমার কল্পনা থেকে উৎপন্ন ভয়ংকর বাঘ আর আমিÑদুটি পৃথক অহং, দুটি পৃথক অস্তিত্ব উৎপন্ন করে আমাকে কষ্টের অনুভূতি দিচ্ছে। কল্পনায় যদি কোনো বাঘকে হত্যা করি, তাহলে কল্পনা দ্বারাই কল্পনাকেই হত্যা করি।

সুতরাং কল্পনা যদি করতেই হয়, ভয়ের কল্পনা নয়, প্রেমের কল্পনা করি। লেখক : সভাপতি, জীবনযোগ ফাউন্ডেশন। সম্পাদনা : ফাহিম আহমাদ বিজয়, রেআ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়