মতিনুজ্জামান মিটু: দেশে বেড়েছে ধানের একর প্রতি ফলন ও উৎপাদন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে ধানের গড় ফলন হেক্টরে ২.৭৮ থেকে ৩.২০ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এসময় চালের উৎপাদন ২০০৯ সালের ৩১.৩২ মিলিয়ন টন থেকে ৩৬.২০ মিলিয়ন মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) উদ্ভাবিত আধুনিক জাত ও চাষাবাদ পদ্ধতি প্যাকেজ আকারে কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে চালের উৎপাদন বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও কৃষি মন্ত্রীর সময়োচিত পদক্ষেপে প্রতি বছর চালের উৎপাদন ৪লাখ ৮০ হাজার টন হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ব্রি’র পরিচালক(প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আনছার আলী জানান, বিগত ১০ বছরে ব্রি’র বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল মোট ৪২টি আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে লবণাক্ততা সহনশীল ৭টি, জলমগ্নতা ও জলাবদ্ধতা সহনশীল ৩টি, খরা সহনশীল ৪টি, জোয়ার ভাটা সহনশীল ২টি, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ৫টি, জিংক সমৃদ্ধ ৬টি, হাইব্রিড ধান ৪টি, আউশ মওসুমের ৪টি এবং অনুকুল পরিবেশের ৭টি জাত উদ্ভাবন করে ব্রি। এ ছাড়া এসময় বিশ্বের সর্বপ্রথম জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত, ডায়াবেটিক ধানের জাত উদ্ভাবন এবং প্রো-ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইসের জাত উন্নয়ন করে ব্রি’র বিজ্ঞানীরা।
ব্রি প্রতিবছর ১৫০ মেট্রিক টনের অধিক ব্রিডার বীজ উৎপাদন এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকের কাছে পোঁছানোর মাধ্যমে মানসম্মত বীজ সরবরাহে অবদান রেখেছে। আধুনিক ধান চাষের জন্য মাটি, পানি, বালাই ও সার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ৫০টির বেশি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করেছে।
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরি ও ট্রান্সজেনিক গ্রিনহাউজ স্থাপন এবং ট্রান্সজেনিক ধান উদ্ভাবনের জন্য জিন স্থানান্তরের উপযোগী প্রোটোকল উন্নয়ন করা। ব্রি উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে ৫০টি জাতের ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্টিং ও মলিকুলার লেভেলে ৭৫টি জার্মপ্লাজম এবং ১২৭টি আউশ জাতের ডাইভারসিটি এনালাইসিস সম্পন্ন করা হয়েছে। ব্রি রাইস নলেজ ব্যাংকের তথ্যাদি হালনাগাদকরণ ও মোবাইল অ্যাপস তৈরীর মাধ্যমে আধুনিক ধান চাষ প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানো হচ্ছে।
আধুনিক ধানের জাত ও চাষাবাদ; কৌশল বিষয়ে ২৭৫টির বেশি বই-পত্র প্রকাশ এবং ১,২৪,৩৫৯টি প্রকাশনা বিতরণ করা হয়েছে। এএসআর মার্কারের মাধ্যমে ৫০০ ধানের জার্মপ্লাজমের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রায় ৫০,০০০ কৃষক, বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তাকে আধুনিক ধানের জাত ও চাষাবাদ কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিগত ১০ বছরে বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ২৬৫ জনের অধিক জনবল নিয়োগ ও ১৪৭টি নতুন পদ সৃজন হয়েছে।
ব্রি এসময় বিজ্ঞান ও কৃষি উন্নয়নে অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার, আইসিটি পদক, কেআইবি কৃষি পদক, জাতীয় পরিবেশ পদক, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স পদকসহ ১০টি পুরস্কার পেয়েছে।
বিগত ১০ বছরে ব্রি’র ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ২টি প্রকল্প চলমান থাকায় কৃষকরা সুবিধা ভোগ করছেন। ব্রি’র বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে; মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, ব্রি ভৌত সুবিধাদি ও গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, হাইব্রিড ধান গবেষণা দক্ষতা বৃদ্ধি প্রকল্প, মান সম্মত বীজ সরবরাহ বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল প্রডাকটিভিটি প্রকল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প, ধান ফসলের ফলন পার্থক্য কমানো, বায়োটেকনোলজি রিসার্চ সিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট, ব্রি গবেষণা দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প, ক্রপিং সিস্টেম ইনটেনসিফিকেশন ইন দি সল্ট-এফেক্টেড কোস্টাল জোনস অফ বাংলাদেশ এন্ড ওয়েস্ট বেঙ্গল, ইন্ডিয়া ও পরিবর্তিত জলবায়ু উপযোগী ধান ভিত্তিক শস্যবিন্যাস প্রকল্প। চলমান রয়েছে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রোজেক্ট এর আওতায় মুহুরি প্রকল্প ও ব্রি-ইরি এর সহযোগীতায় এসটিআরএএসএ, সিএসআইএসএ, সিইউআরই প্রকল্প।