আমিন মুনশি : ‘বছর দশেক আগে প্রথমবার হজে এসেছিলাম। সেদিন আরাফাতের ময়দানে সবাই ছিল ইবাদতে মশগুল। কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, কলেমা, দরুদ পাঠ- একান্তভাবে আল্লাহর কাছে সারাজীবনের কৃতকর্মের জন্য মাফ চেয়ে মোনাজাতে দিন কেটে যেতো। কিন্তু দশ বছর পর এসে দেখলাম হজ ইবাদতের আগের সেই দৃশ্য আর নেই। অনেকেই কিছুক্ষণ পর পর ইবাদত রেখে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন, ভিডিও কল করছেন আবার কেউবা ছবি তুলছেন। অনেকেই ইবাদত ফেলে ঘুমিয়ে সময় পার করছেন। বিষয়টি আমাকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলছে। মনে হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি হজ ইবাদতের মনঃসংযোগ নষ্ট করছে।’
গতকাল (২৭ আগস্ট) সদ্য হজপালন শেষে দেশে ফিরে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার একটি মাদরাসার মুহাদ্দিস আবুল কাশেম ইয়াছিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের হজযাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করে আমার মনে হয়েছে- হজ করতে আসা অধিকাংশরাই হজ পালনের সঠিক নিয়ম-কানুন জানেন না। সরেজমিন আরাফা ঘুরে দেখেছি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন তাঁবুতে হাজিদের অনেকেই মোবাইল ফোনে অথবা ভিডিও কলে কথা বলছেন। অনেকে আবার বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন।’
ঢাকার ব্যবসায়ী হাজি আবু বকর সিদ্দীক বলেন, পরিবার ও সাথীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমি সাধারণ মোবাইল নিয়ে গেছি। আমি কখনও হজে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করি না। আমি হজে যাচ্ছি বন্ধু ও ব্যবসার খবর পেছনে রেখে যাব। পরিবারের সদস্যদের বলে দিয়েছি যেন আমাকে জরুরি বিষয় ছাড়া ফোন না দেয়। আমার প্রয়োজন হলে ফোন করব। মোবাইলে পরিবারের সঙ্গে কথপোকথন করতে তো হজে যাচ্ছি না।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলমান হজ পালন করতে যান সৌদি আরবে। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে কাবা প্রাঙ্গন মুখরিত করার স্বপ্ন দেখেন বহু আশেক। বিপরীতে কিছু মানুষ আছেন যারা ইদানিং হজ সফরে গিয়ে সেলফি তোলায় মগ্ন হয়ে পড়েন। ঘনঘন লাইভে এসে জানান দেন নিজের অবস্থান। তাদের কর্মকান্ডে অনেকের কাছে মনে হতে পারে- হজের অপার্থিব, আবেগঘন পরিবেশ যেন এক ধরণের আনুষ্ঠানিকতা।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রচারে এতোটাই মত্ত হয়ে পড়েন, যেন সেখানে কোনো পিকনিকের আয়োজন চলছে। যা কখনোই সচেতন মুসলমানের জন্য কাম্য হতে পারেনা।
আপনার মতামত লিখুন :