আমিন মুনশি: শিশুদের প্রতি রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসা ছিলো অসীম। রহমতের নবীর প্রীতিময় সোহাগের প্রতিটি বিন্দু অবারিত ছিলো তাদের জন্যে। সীরাতের বইগুলোতে এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) কোনো শিশুকে দেখলে উচ্ছ্বল না হয়ে পারতেন না। স্নেহের আঁচল ছড়িয়ে কাছে টেনে নিতেন। বুকের মমতায় সিক্ত করতেন। ভালোবাসার প্রীতিময় বাহুডোরে জড়িয়ে রাখতেন।
নবীজির প্রতি মদীনার শিশুদের ভালোবাসাও ছিলো অন্য রকম। পথের মোড়ে, বাড়ির ধারে নবীজির প্রতি দৃষ্টি পড়লেই তারা ছুটে আসতো। কোলে ওঠার বায়না ধরতো। কতোরকম দুষ্টুমিতে মেতে ওঠতো। নবী করীম (সা.) বাড়িতে এসে হাসান ও হুসাইনের সঙ্গে খেলা করতেন। প্রিয় নানাজানকে ওরাও খেলায় শরিক করে নিতো। সেজদারত নবীজির পিঠে দু’ভাই এসে বসে যেতো। অশ্ব বানিয়ে দাপিয়ে বেড়াতো। নামাজরত নবীজি অপেক্ষা করতেন, সংযম প্রদর্শন করতেন। তাদের নিজ ইচ্ছায় পিঠ থেকে নেমে যাওয়ার অপেক্ষায় থেমে থাকতেন।
নামাজ শেষে নবীজিও তাদের সঙ্গে শিশুসুলভ খেলায় মেতে ওঠতেন। বালখিল্যতা করতেন। তাদের এই দুষ্টুমির জন্যে কখনো তিনি চোখ বড় করেননি। রুক্ষ শব্দ বলেননি। বরং তাদের প্রতিটি আচরণ উপভোগ করতেন। সব শিশুকেই তিনি সমান স্নেহের চোখে দেখতেন। আর ছেলেশিশু কি মেয়েশিশু- এ পার্থক্যের তো প্রশ্নই ওঠে না।
তাই তো হাদিস শরিফে দেখতে পাই, নবীজি (সা.) একদিন নামাজ শেষে উপস্থিত লোকদের বলছেন- ‘আমি অনেক সময় ছোট্ট শিশুর কান্নার কারণে নামাজ সংক্ষিপ্ত করে ফেলি’। কারণ, শিশুর কান্না নবীজির প্রাণে বিঁধতো। শিশুর কান্না শুনতেই অস্থির হয়ে ওঠতেন তিনি। কখন নামাজ শেষ করবেন, কখন শিশুটিকে জড়িয়ে ধরবেন, কখন তার চোখের পানি মুছে দেবেন সেই ব্যাকুলতায় প্রিয় নামাজকেও সংক্ষিপ্ত করে ফেলতেন।
আমাদের নবী (সা.) ছোট্ট শিশুকেও প্রাপ্য সম্মান জানাতে ভুলতেন না। হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন- নবী করীম (সা.) শিশুদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে সালাম দিতেন। তিনি বলেন- নবীজিকে আমি সবসময় শিশুদেরকে সালাম দিতে দেখেছি। কোনো দিন তার এ আচরণে ব্যত্যয় ঘটতে দেখিনি। তিনি তাদের সম্ভাষণ জানাতেন। এগিয়ে এসে জড়িয়ে নিতেন। তাদের ভালোবাসতেন।
শিশুদের প্রতি নবীজির অসাধারণ মমত্ববোধের কথা সাহাবায়ে কেরাম জানতেন। এ কারণে নবীজি যখন কোনো যুদ্ধ বা সফর শেষে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন তারা নবীজিকে অভ্যর্থনা জানাতে শিশুদের পাঠিয়ে দিতেন। বাড়ি ছেড়ে এতো দূর চলে আসা শিশুদের দেখে নবীজি স্থির থাকতে পারতেন না। নিজে বাহন থেকে নেমে আগত শিশুকে কোলে তুলে নিতেন। এরপর পেছনে বসিয়ে মদীনার দিকে যাত্রা করতেন।
শিশুদের প্রতি নবীজির ভালোবাসার উপমা বলে শেষ করা যাবেনা। শিশুদেরকে নবীজি ভালোবেসেছেন। সম্মান দিয়েছেন। হৃদয়ের কোমলতায় জড়িয়ে নিয়েছেন। নিজের বাহনে তুলে নিয়েছেন। গায়ের ধুলো-বালি ঝেড়ে দিয়েছেন। খেলা করেছেন। শিশুদেরকে তিনি সাত বছর বয়সে নামাজ পড়তে শিখিয়েছেন। ঈমানের আলোয় দীক্ষিত করেছেন। আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হতে শিখিয়েছেন। রহমতের নবী, মানবতার ছবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর এমন অসাধারণ ভালোবাসাই তো তাঁকে করে তুলেছে মহান। যেই শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায় দ্বিতীয় আর কেউ নেই।
আপনার মতামত লিখুন :