রবিন আকরাম : বৃষ্টিতে রিক্সায় অফিসে আসার সময় একটা গল্প মনে পড়ে গেল। তাই লিখে রাখছি আবার ভুলে যাবার আগেই। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছুটিতে বগুড়ায়। এরকম একটা বর্ষার দিনে রিক্সা করে ফিরছি, হঠাৎ আমার এক স্কুলের বন্ধুকে ছাতা মাথায় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রিক্সাটা থামালাম। অনেকদিন পরে দেখা তাই মহানন্দে গল্প শুরু করলাম, কিন্তু দেখলাম আমার প্রতি ওর খুব একটা খেয়াল নেই। মনোযোগ দিয়ে চলন্ত রিক্সা দেখে যাচ্ছে।
জিজ্ঞাসা করলাম, কিরে কি হল, কেউ কি আসার কথা? ভাবছিলাম নিশ্চই ওর কোন প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করছে। বন্ধুটির চেহারা বেশ রসগোল্লার মত ছিল, ফর্সা, সুন্দর মায়াবী চেহারা। কিন্তু উচ্চতা একটু কম হওয়াতে আমার প্রতি একটা চাপা রাগও ছিল। কিন্তু তবুও কখনই প্রেমিকার অভাব ছিল না। আমার প্রশ্ন শুনে নির্লিপ্ত উত্তর- রিক্সা খুজছি। অনেক খালি রিক্সাই তো আছে, একটা নিয়ে নে। উত্তরে যা বলল তাতে ওর প্রশংসা না করে পারলাম না।
একটা বিশেষ ধরণের রিক্সা খুজছি দোস্ত, যে রিক্সার পর্দাটা দড়ি দিয়ে বাঁধা আছে আর যার হুডটা একটু ছোট (আগে রিক্সার পর্দাটা অনেক সময় দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকত, হাত দিয়ে ধরে থাকতে হত না)। রিক্সার পর্দা ধরে থাকতে যে পরিমাণ মনোযোগ দিতে হয় প্রেম করব কখন। আর তুই তো জানিস আমি একটু ছোট খাটো মানুষ, রিক্সার হুড বড় হলে মনে হয় রিক্সাআলা চালাতে চালাতে আমাদের মাঝখানে বসে পরবে। তাছাড়া অন্য সুবিধা তো আছেই। আমি নিজের রিক্সার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলাম এ দুটো বৈশিষ্ট্যের কোনটাই আমারটাতে নেই। মনে মনে খুশী হয়ে আর কিছুক্ষণ গল্প চালালাম কিন্তু ভাল সাড়া না পেয়ে বন্ধুটির বুদ্ধির প্রশংসা করে কেটে পড়লাম। জানিনা শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত রিক্সাটা ও পেয়েছিল কিনা।
আমার এই প্রেমিক বন্ধুটি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। অকালেই চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। সময় গড়িয়েছে অনেক, কিন্তু মাঝে মাঝে বুকের এক কোনায় এখনো হাহাকার শুনতে পাই। ভাল থাকিস সিমবিল, ভাল থাকিস বন্ধু আমার।
(লেখাটি অভ্র ভট্টাচার্য এর ফেসবুক থেকে নেয়া)
আপনার মতামত লিখুন :