দেবব্রত দত্ত : কোরবানির পবিত্রতা রক্ষা ও তাকওয়া অর্জনের লক্ষ্যে কোরবানির ঈদে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ পশু কোরবানি করেন। এই ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছর পার্ক, মাঠ, রাস্তাসহ যত্রতত্র কোরবানির পশুর হাট বসে। পশুর হাটে পশুকে খুঁটিতে বেঁধে রাখার জন্য এসব জায়গায় গর্ত করা হয়। কাদা না হওয়ার জন্য হাটে ইট, পাথর, আবর্জনাসহ ইট-পাথরের গুড়া ইত্যাদি ফেলানো হয়। হাট শেষে খুঁটি, পশুরখাবার ও মল সরানো গেলেও গর্ত, ইট, পাথর, আবর্জনসমূহ রয়েই যায়। তদূপরী পশুরমূত্র মাটিতে লেগে থাকায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত দূর্গন্ধ ছড়ায় ফলে শুধু হাট চলাকালীন সময়েই জনদূর্ভোগের সৃষ্টি হয় না বরং হাট শেষেও অনেক দিন পর্যন্ত এর প্রকোপ থেকে যায়। সর্বোপরি পার্ক ও খেলার মাঠের পরিবেশ চরমভাবে নষ্ট হয় এবং অনেক দিন পর্যন্ত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরে। তাই কোনভাবেই যাতে পার্ক ও খেলার মাঠে পশুর হাট না বসে সেদিকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ব্যব¯’া নিতে হবে। অন্যদিকে মক্কা-মদিনার আদলে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসহ নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানির ব্যবস্থা করতে হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-সহ ১৪ টি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মক্কা-মদিনার আদলে কোরবানি; পার্ক ও খেলার মাঠে পশুর হাট নয়’-দাবীতে এক মানববন্ধনে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না-এর সভপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আব্দুস সোবহান, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, নাসফের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক ক্যামেলিয়া চৌধুরী, সাংগাঠনিক সম্পাদক অহিদুর রহমান, ইয়ুথ সান-এর সভাপতি মাকিবুল হাসান বাপ্পী, বাংলাদেশ সাইক্লিং ও হাঁটা জোট-এর নির্বাহী সদস্য নিশু, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সমন্বয়কারী মেনন চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, খেলার মাঠ, পার্ক বা উদ্যান পরিবেশের অন্যতম আবশ্যিক অনুসঙ্গ। মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে এবং জীবন ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে এসকল পার্ক ও খেলার মাঠ বিশেষ ভূমিকা রাখে। শিশু-কিশোরদের শারীরিক, মানসিক বিকাশসহ সর্বস্তরের জনগণের সুস্বাস্থ্য ও প্রশান্তির জন্যই পার্ক ও খেলার মাঠ। ঘনবসতিপূর্ণ এ নগরীতে জনগণের জন্য পার্ক, খেলার মাঠের সংখ্যা খুবই নগণ্য। নাগরিকের দূর্ভোগের কথা ভেবে এবার থেকেই পশুর হাট যেন কোনভাবেই এসব পার্ক, খেলার মাঠসহ রাস্তাঘাটে না বসে সেদিকে প্রশাসনকে মনোযোগী হতে হবে। জনগণের বিচরণ তুলনামূলকভাবে কম এরকম ফাঁকা জায়গায় পশুর হাটের ব্যবস্থা করতে হবে।
ঢাকায় একমাত্র স্থায়ী পশুরহাট গাবতলী ছাড়াও দুই সিটি করপোরেশন মিলে প্রায় ২৫টি স্থানে অস্থায়ীভাবে বসবে কোরবানির পশুর হাট। সিটি করপোরেশন ইজারাদারদের পার্ক, খেলার মাঠ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর কথা বলে থাকে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় পার্ক, খেলার মাঠ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই। বিকল্প জায়গায় পশুর হাটের ব্যবস্থা করার মানসিকতা যেন তাদের নেই। গত কয়েক বছরের হিসাব অনুযায়ী পশু কোরবানি প্রতি বছর প্রায় ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবছর প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ পশু কোরবানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ হলেও বিপুল সংখ্যক ঘাটতি পূরণে সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে অনতিবিলম্বে এ বছরের কোরবানির পশুর চাহিদা নিরুপণ করে উপযুক্ত জায়গায় পশুর হাটের ব্যবস্থা করতে হবে।
বক্তারা বলেন, প্রতি বছর দেখছি যত্রতত্র পশু জবাই করায় পশুর রক্ত ও আবর্জনায় রাস্তাঘাট সয়লাব হচ্ছে। ড্রেনে পানির প্রবাহ আটকে যাচ্ছে, উপচে পড়া নোংরা পানি চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামাঞ্চলে কোরবানির বর্জ্য খোলা স্থান, ঝোপঝাড়ের পাশে, খালে-বিলে বা নদীতে ফেলা হয়। অনেক সময় ফাংগাস বা ছত্রাক পড়া চাটাই ভালোভাবে পরিষ্কার না করেই মাংস রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়। অপরিষ্কার হাতেই মাংস প্রস্তুতসহ অস্বাস্থ্যকরভাবে মাংস বন্টন করা হয়। সব মিলিয়ে পরিবেশের দূষণসহ জনস্বাস্ব্যে হুমকীতে থাকে। পশুর রক্ত, শিং, নাড়ি-ভূড়ি, মূত্রথলি ইত্যাদি যত্রতত্র ফেলে রাখায় ঈদের বেশ কয়েকদিন পর পর্যন্ত দূর্গন্ধে নগর-জনপদের বাতাস ভারী থাকে। ফলে আনন্দের ঈদ মুহুর্তেই ফিকে হয়ে যেতে পারে