ডেস্ক রিপোর্ট : নিজের পরিচয় গোপন রেখে অপর একজন ব্যবহারকারীর কাছে কোন বার্তা পাঠানোর অ্যাপ স্টুলিশ। এটি বর্তমান সময়ে বাংলাদেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় অ্যাপগুলোর একটি।
শুধু এই অ্যাপ নয়, এর আগে এরই মতো ‘সারাহাহ’ অ্যাপটি জনপ্রিয় হয়েছিল দেশের বহু তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। সেই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রথম সাড়া ফেলে অ্যাপটি। এর বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ ওঠায় তা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্লে-স্টোর ও অ্যাপ-স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তবে এখনো গুগল প্লে-স্টোরে রয়ে গেছে স্টুলিশ অ্যাপটি।
এই জাতীয় অ্যাপগুলো দেশের তরুণ-তরুণীরা মধ্যে কেন এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এ নিয়ে প্রিয়.কম কথা বলেছে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ জাতীয় অ্যাপগুলোর জনপ্রিয়তার কারণ বা কেন তরুণ-তরুণীরা এই অ্যাপগুলো ব্যবহারে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সুস্থ বা মানসিকভাবে অসুস্থ সবার মাঝেই অ্যাপটি ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে। তবে এই জাতীয় (সঠিক নিরাপত্তাসম্পন্ন) অ্যাপ সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ব্যবহার করা গেলে সুফল পাওয়া সম্ভব, যেখানে ব্যক্তি পর্যায়ে এর বিপরীত হতে পারে।
এ বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা.তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যে এই অ্যাপ ব্যবহার করে বার্তা পাওয়ার অপেক্ষায়, সে চাচ্ছে কনসেনট্রেশন বা মনোযোগ আকর্ষণ করতে। এটি তার এক ধরনের মানসিক ক্ষুধা। তার এত অ্যাটেনশন পাওয়ার দরকার কী?
যে নিজে নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ, তার তো কারো অ্যাটেনশন পাওয়ার দরকার নেই। আর যাদের মধ্যে অ্যাটেনশন সিকিং বিষয়টি আছে, তারা এই কাজটি করে থাকে। তারা মনে করে, এসবের মাধ্যমে আমার কাছে খারাপের পাশাপাশি অনেক ভালো মন্তব্যও তো আসতে পারে। সে নিজেকে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার জন্য এই কাজটি করে থাকে।’
যারা অ্যাপের মাধ্যমে বার্তা পাঠান তারা প্যাথলজিক্যাল বলে মনে করেন এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। এই ভাষাটির বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, যারা অস্বাভাবিক আচরণ করেন।
এই বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিকে প্যাথলজিক্যাল বা অস্বাভাবিক বলার অন্যতম কারণ হলো, অনেক মানুষ তার মনের কথা অনেককেই বলতে চায়। ভালো কথাগুলো বলা কোনো ব্যপার নয়। তবে যারা প্যাথলজিক্যাল, তারা এই মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে কাউকে গালি দিয়ে থাকেন বা কারো মধ্যে নানা কথার দ্বারা স্ট্রেস তৈরি করতে চান।
তবে এই অ্যাপগুলোর ভালো দিকও রয়েছে বলেও জানান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তাজুল ইসলাম। তার মতে, এই জাতীয় মাধ্যম প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে। এটি অনেকটা অভিযোগ বক্সের মতো কাজ করবে। এতে করে যারা ভয়ে বা কোনো বিষয়ের কথা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জানাতে পারেন না, তারা জানাতে পারবেন।
এদিকে এই অ্যাপগুলোর দীর্ঘ ব্যবহার মানসিক চাপ সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলেও মনে করেন বিষেশজ্ঞরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান বলেন, ‘এটিকে বলা যায় মানসিক প্রেসার। এই অ্যাপগুলো মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। সবার চাপ গ্রহণের ক্ষমতা এক রকম নয়। ফলে টানা চাপ গ্রহণ করতে থাকলে ভবিষ্যতে ওই ব্যবহারকারীর মানসিক সমস্যাও হতে পারে।’
অপরদিকে কয়েকজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, সুস্থ মাথার মানুষই এই অ্যাপ ব্যবহার করছে। তারা এটিকে বিনোদনের খোরাক হিসেবে ব্যবহার করছে।
তবে এ বিষয়ে শেখ মুজিব মেডিকেল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কায়সার বিপ্লব বলেন, ‘অসুস্থ কোনো ব্যক্তি এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবে না। তার মানে এই অ্যাপ সুস্থ ব্যক্তিরাই ব্যবহার করে থাকে। হয়তো কেউ খারাপ কাজেও এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে, আবার কেউ দুষ্টুমির জন্যও করতে পারে।’ সূত্র : প্রিয়.কম