ডা. জাকির হোসেন: চলছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। সুস্থ্য প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর জন্য এই মাসে রোজা রাখা ফরজ। এবারের রোযার শুরুতে গ্রীষ্মের উষ্ণতা অন্যান্য বছরের তুলনায় একেবারেই কম ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সূর্য্যরে তাপের প্রখরতা এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, একটু বেখেয়ালী হলেই এ সময়ে রোজা রাখা একটু বেশি কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। রোযাদার মুসলমানগণ সারাদিন সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকেন বলে এমনিতেই শরীর একটু পানিশূন্য হয়ে যায়। তারপর আবার চলছে গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপ। রাজধানীবাসীর রোজা আরেকটু বেশিই কষ্টসাধ্য হচ্ছে, কারণ শহরের প্রায় বেশিরভাগ মানুষই তাদের কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে পড়তে হচ্ছে তীব্র যানজটের মুখে পড়ে। এই যানজটের তীব্র গরমে শরীরের পানি দ্রুত ঘামের সাথে বের হয়ে যায়। যার ফলে রোজাদার মুসলমানগণ খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। সেই সাথে তাদের কর্মদক্ষতাও বহুলাংশে হ্রাস পাচ্ছে। ঘামের সাথে প্রচুর ইকেট্রোলাইট বের হয়ে যায় বলে অনেকের শরীরের ইকেট্রোলাইট ইমবেলেন্সে হয়ে নানা রকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন: মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা, কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ নষ্ট হওয়া ইত্যাদি।
ইলেকট্রোলাইট ইমবেলেন্স খুব দ্রুত বাড়তে থাকলে মৃত্যুঝুঁকিও হতে পারে। একটু সজাগ ও সচেতন হলেই আপনি খুব সুস্থ্যভাবে মাহে রমজানের সবক’টি রোজা পালন করতে পারবেন। রোদের তীব্রতা থেকে আপনি স্বস্তি পেতে একটা ছাতা নিয়ে বের হতে পারেন। কালো রঙের ছাতা ব্যবহার না করাই ভাল। তাছাড়া বাসায় ফিরে গোসল করে নিলে গরম থেকে অনেকটা স্বস্তি মিলবে। সারাদিন রোজা রাখার পর শহরের বেশিরভাগ মানুষই নিজ বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারেন না তীব্র যানজটের কারণে। অনেকেই গাড়িতে বসেই ইফতার করেন। বেশির ভাগ রোজাদার মানুষই রাস্তার পাশের দোকানগুলোর বাহারি ইফতার সামগ্রী ও পানীয় পান করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এটা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। চলার পথে ইফতারির সময় ঘনিয়ে আসার সম্ভাবনা থাকলে, আগে থেকেই একটা বিশুদ্ধ পানির বোতলসহ কিছু খেজুর ভাল করে ধুয়ে সাথে রাখতে পারেন। যথাসম্ভব রাস্তার পাশের নোংরা শরবত জাতীয় কোন কিছু পান করবেন না। কারণ এ সকল খাবার খেয়ে আপনি নানারকম পেটের পীড়ায় ভুগতে পারেন। সেই সাথে জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারেন। বাসায় ফেরার পরে, বাসার তৈরি পুষ্টিকর খাবার দিয়ে ভাল করে ইফতার করেন। ঘুমানোর আগ পর্যন্ত বিরতি দিয়ে দিয়ে পরিমিত বিশুদ্ধ পানি পান করুন। ইফতারির সময় ভাজাপোড়া বেশি না খেয়ে, পারলে চিড়া ভিজিয়ে দুধকলা একসাথে মিশিয়ে খেয়ে নিন। সেহরীর সময় পরিমিত খাবার খাবেন। সেই সাথে পরিমিত পানি পান করে নামাজ পড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। অনেকেই সেহরী খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। এটা মোটেই ঠিক নয়।
খেয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লে পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীদের বুকে জ্বালাপোড়া বাড়তে পারে। তাছাড়া পরিমিত পানি পান না করলেও এই সমস্যা বাড়তে পারে। পুরো রমজান মাসজুড়েই অতিরিক্ত চা-কফি পান থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। কারণ এ সকল পানীয় পেটে এসিড নির্গমন বাড়িয়ে দিয়ে আপনার পেপটিক আলসারের ক্ষতকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। ঈমানদার প্রত্যেক নর-নারীরই রোযার নিয়ম-কানুনের সাথে সাথে কিভাবে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে সুস্থ্যভাবে রমজানের সবক’টি রোজা পালন করা যায়; সে ব্যাপারে সজাগ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিচিতি: চিকিৎসক ও কলামিস্ট/ সম্পাদনা: জাফরুল আলম