শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ২৮ মে, ২০১৮, ১১:০৯ দুপুর
আপডেট : ২৮ মে, ২০১৮, ১১:০৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বন্ধ কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে নকল ওষুধ

ডেস্ক রিপোর্ট : মানহীন ওষুধ তৈরির দায়ে এভার্ট ফার্মার উৎপাদন ২০১১ সালে বন্ধ করে দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করে উৎপাদন অনুমতি ফিরে পায় কোম্পানিটি। পরে সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে এভার্ট ফার্মার লাইসেন্সই বাতিল করে অধিদপ্তর। তার পরও বন্ধ হয়নি উৎপাদন। নকল ওষুধ তৈরির প্লান্ট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সাভারের এভার্ট ফার্মার কারখানাটি।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যেই দেদার বিক্রি হচ্ছে এসব নকল ওষুধ। রাজধানীতে ওষুধের বড় বাজার মিটফোর্ডও এর বাইরে নয়। প্রায় সব ধরনের নকল ওষুধই এখানকার বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে। তবে কাটতি বেশি থাকায় অ্যাসিডিটির ওষুধের আধিক্য বেশি। কারা কোথায় এ ওষুধ উৎপাদন করছে, বিপণনের কৌশলইবা কী— তা অনুসন্ধানে কয়েকদিন ধরে কথা হয় বাজারের একাধিক দোকানি ও সরবরাহকারীর সঙ্গে। নকল ওষুধের উৎপাদন ক্ষেত্র হিসেবে বিভিন্ন বন্ধ কারখানার নাম উল্লেখ করেন তারা। এভার্ট ফার্মা সেগুলোর একটি।

এর সত্যতা যাচাইয়ে গতকাল সরেজমিন পরিদর্শন করা হয় এভার্ট ফার্মার কারখানা। সাভার ব্যাংক কলোনি এলাকায় প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর ১০ ফুট উঁচু দেয়ালে ঘেরা তিনতলা ভবনটিই এভার্ট ফার্মার কারখানা। ভবনের বিশাল প্রবেশমুখই জানান দিচ্ছে, এলাকার অন্য সব ভবনের চেয়ে আলাদা এটি। উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ার পরও কারখানাটিতে চলছে তিনটি এসি।

ভবনের ভেতর থেকে কারো সাড়া না পেয়ে কথা হয় এলাকাবাসীর সঙ্গে। তারা জানান, বাড়ির ভেতরে মানুষ থাকলেও বাইরে থেকে আসা কারো সঙ্গে কথা বলেন না। মাসে দু-তিনবার বাড়িটিতে দুটি খালি ভ্যান আসে, কিছুক্ষণ পর কিছু একটা বোঝাই করে বেরিয়ে যায়।

মিনিট বিশেক চেষ্টার পর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন একজন। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পরিচয় দেন ষাটোর্ধ্ব তৌহিদুর রহমান। উঁকি দিয়ে দেখা যায় ভেতরে যাওয়ার মূল দরজাটি সিলগালা করা। এর পাশ দিয়েই তৈরি করা হয়েছে ভেতরে ঢোকার বিকল্প দরজা। ওই দরজার রহস্য জানতে চাইলে তৌহিদুর রহমান বলেন, মূলত বাড়ি দেখভালের জন্য এটি বানানো হয়েছে। তাছাড়া বাড়ির মালিক কবির হোসেন মাসে দু-তিনবার এখানে আসেন। বিকল্প এ দরজা দিয়েই ভেতরে ঢোকেন তিনি। কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম চলে কিনা জিজ্ঞেস করতেই দ্রুত ভেতরে চলে যান তৌহিদুর রহমান।

পরে কথা হয় এলাকার আরো কয়েকজনের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, এভার্ট ফার্মা বন্ধ হলেও নিয়মিতই ওষুধ উৎপাদন হয় এখানে। কারখানা থেকে এসব ওষুধ বের করা হয় গভীর রাতে। বাড়ির ভেতরে বেশ কয়েকজন থাকলেও নিয়মিত বের হন তিনজন। অন্যরা বের হন মাসে এক কি দুবার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এভার্ট কারখানার মালিক কবির হোসেন ১৯৯৬-১৯৯৭ সালের দিকে মিটফোর্ড এলাকার সর্দার মেডিসিন মার্কেটের ডিকে ড্রাগ হাউজে চাকরি করতেন। এরপর নকল ওষুধ বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার হন তিনি। এ ঘটনায় মিটফোর্ড থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে। পরের দিকে সাভারে এভার্ট ফার্মা নামে এ কোম্পানি খোলেন কবির হোসেন।

নকল ওষুধ তৈরির বিষয়ে জানতে কয়েক দিন ধরেই কবির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কারখানার কর্মরতদের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় গতকালও। কিন্তু কোনো মাধ্যমেই কবির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে

নিয়োজিত একজন শুধু বলেন, কবির সাহেব ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে কারখানায় আসেন।

বন্ধ কারখানায় নকল ওষুধ উৎপাদনের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে বলে জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, যারা এ ধরনের কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই মধ্যে এমন বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আরো কিছু তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নকল ও ভেজাল ওষুধের উৎপাদন প্লান্ট হিসেবে এভার্ট ফার্মা ছাড়াও কিছু কারখানার নাম বলেন মিটফোর্ড এলাকায় নকল ওষুধের ওই কারবারি। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই কারবারি বলেন, যেসব কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল হয়েছে, তারাই মূলত নকল-ভেজাল ওষুধ তৈরি করছে। আমাদের সরবরাহের একটি অংশ আসে ইন্দো-বাংলা ফার্মার কারখানা থেকে।

এভার্ট ফার্মার মতো হাইকোর্টের নির্দেশনায় ইন্দো-বাংলার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। মানহীন ওষুধ উৎপাদনের দায়ে বন্ধ করে দেয়া অন্য কারখানাগুলোর মধ্যে আছে— টুডে ফার্মা, ন্যাশনাল ড্রাগ ফার্মা, সুনিপুণ ফার্মা, ইউনিভার্সেল ফার্মা, নর্থ বেঙ্গল ফার্মা, ড্রাগল্যান্ড লিমিটেড, ডলফিন ফার্মা, জালফা ল্যাবরেটরিজ, রিড ফার্মা, রেমো কেমিক্যালস (ফার্মা ডিভিশন), কাফমা ফার্মা, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, মেডিকো ফার্মা, এক্সিম ফার্মা, বিকল্প ফার্মা, স্পার্ক ফার্মা, স্টার ফার্মা, ট্রপিক্যাল ফার্মা ও স্কাইল্যাব ফার্মা। অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধেও নির্দেশনা রয়েছে আলকাদ, বেলসেন, বেঙ্গল ড্রাগস অ্যান্ড কেমিক্যালস, ব্রিস্টল, ক্রিস্টাল, ইন্দো-বাংলা, মিল্লাত, এমএসটি, অরবিট, ফার্মিক, ফিনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ও সেভ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ওপর।

লাইসেন্স বাতিল হওয়া কারখানায় নকল ওষুধ তৈরি হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য ও এমিকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুল ইসলাম পান্নাও বলেন, যেসব কারখানার উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল বা সাসপেন্ড রয়েছে, সেখানে নকল-ভেজাল ওষুধ তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও মিটফোর্ড এলাকার আশপাশের অনেকেই এসব ওষুধ তৈরি করছে। যেসব কারখানার উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, সেগুলোর মেশিনপত্র জব্দ করা যায় কিনা তা নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কম-বেশি নকল হলেও সবচেয়ে বেশি হচ্ছে অ্যাসিডিটির ওষুধ। এর মধ্যে আছে সেকলো, নিউটেক ও রেনিটিডিন। এর বাইরে নকল হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক, মাল্টিভিটামিন ও ব্যথানাশক ওষুধও।

উৎপাদিত এসব নকল ওষুধ বিপণনও হচ্ছে অত্যন্ত কৌশলে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সিগারেটের প্যাকেটে ভরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দোকানে দোকানে সরবরাহ করা হয় এগুলো। কখনো আবার মোটরসাইকেলে, কখনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা এমনকি রিকশায় করেও বাবুবাজার ও মিটফোর্ড এলাকায় এসব ওষুধ পৌঁছে দেয়া হয়।

গত ৩ এপ্রিল নোয়াখালী জেলার নোয়াখালী ড্রাগস সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানীর বাবুবাজারের রাজু নামে এক ওষুধ বিক্রেতার কাছে এক কার্টন ওষুধ পাঠায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরে ওষুধগুলো উদ্ধার করে। কার্টন খুলে দেখা যায়, ভেতরে স্কয়ার কোম্পানির বহুল প্রচলিত সেকলো ২০ মিলিগ্রামের নকল ওষুধ। ফয়েল পেপারটি প্লাস্টিকের তৈরি। ভেতরে কিছু সাগুদানা। তবে সাধারণ আসল সেকলো থেকে একে পার্থক্য করা সহজ নয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।

নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদন বন্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিয়মিত নজরদারি করছে বলে দাবি করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রুহুল আমিন বলেন, নকল-ভেজাল ওষুধ তৈরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সেখানে রাখা হয়েছে। কীভাবে এসব ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত হচ্ছে, তা শনাক্তে কাজ করছে এ টাস্কফোর্স।বণিকবার্তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়