বাংলাদেশের সাংষ্কৃতিক অঙ্গনে একটি বন্ধ্যাকাল বা দাহকাল চলছে। দাহকাল এজন্যই বলছি কারণ, আমরা একটি রূপান্তরের মধ্যদিয়ে এ সময়টি অতিক্রম করছি। এটা হোক গানের, চলচ্চিত্রের বা অন্য কোন সংষ্কৃতিক মাধ্যমের ক্ষেত্রে। সব ক্ষেত্রেই একটি বন্ধ্যাত্ব দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে যে সংখ্যক তরুণ এসব কজে নিয়োজিত আছেন, তাদের যেমন পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ঠিক তেমনি সাংষ্কৃতিক ধারণার ব্যাপারেও সংকট আছে। তরুণরা অনেক কাজ করছে, কাজও ভালো হচ্ছে। আবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যারা সৃজনশীল, যারা যথার্থ কাজটি করছে তাদের কাছে হয়তো রাষ্ট্রীও পৃষ্ঠপোষকতা পৌছাচ্ছে না। সুতারাং একটি দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। কিছু সংখ্যক তরুণ যারা পাশ্চাত্বের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে বা অন্য দেশের সংষ্কৃতিকে প্রমোট করছে। সেই সংষ্কৃতির আদলে তারা সংষ্কৃতি চর্চা করছে।
আবার কিছু সংখ্যক তরুণ দেশীয় সক্রীয়তাকে ধরে রাখতে চেষ্টা করছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে না। একটা স্বার্থপর সময়, যে সময়ে তরুণরা পৃষ্ঠপোষকতা চায় এবং সেটি যদি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা হয় তাহলেই তরুণরা এগিয়ে যেতে পারবে। সংগীতের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি আমাদের মধ্যে হঠাৎ করে জনপ্রিয়তা পাবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন রিয়েলিটি-শো নতুন শিল্প-সংষ্কৃতিকে প্রমোট করছে এবং সংষ্কৃতিতে নতুনদের আগমন ঘটাচ্ছে। কিন্তু তাদের মধ্যে এ বোধটা তৈরি হচ্ছে না যে, শিল্প-সংষ্কৃতি দিয়ে দেশ প্রেমের চর্চা করতে হবে। স্বার্থবাদীতা বা জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে এ জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে অর্থবিত্তের মালিক হয়ে যাওয়া এ ধরণের একটি লক্ষণ তরুণদের মাঝে দেখা যাচ্ছে। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে যদি আমরা দেখি তাহলে, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময় নিয়ে অনেক কিছুই হয়ে গেছে, অনেক জরঘোলা হয়েছে।
কিন্তু এর জন্য স্পষ্ট কোন বিধান তৈরি হয়নি। ফলে এর যথার্থ বিকাশ ব্যহত হচ্ছে। গানের ক্ষেত্রে পরিচর্যা ও পৃষ্ঠপোষকতার ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্র শিল্পকলা একাডেমি যে ভূমিকা নেয়ার কথা ছিল তা তারা নানা কারণে নিতে পারছে না। আমাদের যে ঐতিহ্যি সংষ্কৃতি তা হাজার বছরের। কিন্তু এটিকে চর্চা করার তরুণ ও লোকের সংখ্যা কম। এখন শুধু সংষ্কৃতির ক্ষেত্রে নয়, অন্য সব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের অবস্থান ঠিক রাখা। তা যদি অন্যের ক্ষতি করেও হয় তাও আমাদের করতে হবে।এ ধরণের একটি অনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে। একজন অভিবাবক তার সন্তানকে যে কোন ভাবেই হোক এ প্লাস পাইয়ে দিতে চাচ্ছেন। সে কারণে, তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তা উচ্চমূল্য দিয়ে কিনে আনতেও দ্বিধা করছেন না।
এটা আমাদের বড় ধরণের অধঃপতন। আমরা শুধু সন্তানের উন্নতির কথাই ভাবছি। কিন্তু দেশের উন্নতির কথা একদমই ভাবছিনা। আমারা নিজের জন্য সবকিছু করে যাচ্ছি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে কোন নীতিমালা না থাকা এবং অবিভাকত্ব হীনতা। সুতারাং তরুণদের যথার্থ নির্দেশনার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে। যারা নিজের ইচ্ছায় ভালো কিছু করছে তাদের পাশে দাড়াতে হবে। রাষ্ট্র যদি না দাঁড়াতে পারে তাহলে, সমাজের যারা শুভ চিন্তা করেন তারা যদি পাশে দাড়ান তাহলে আমাদের বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে সুন্দর ও সমৃদ্ধির পথে। আমারা সেটিই চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে একদল তরুণ তৈরি হবে। যারা হাজার বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে।
পরিচয় : সঙ্গীতশিল্পী ও সাংবাদিক/ মতামত গ্রহণ : রাশিদুল ইসলাম মাহিন/ সম্পাদনা : মেহেদী হাসান