শিরোনাম
◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা

প্রকাশিত : ২২ মে, ২০১৮, ০৯:৪২ সকাল
আপডেট : ২২ মে, ২০১৮, ০৯:৪২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যা পড়া হবে

রাশিদুল ইসলাম: আজ ষষ্ঠ তারাবিতে সূরা আনআমের (১৫৮-১৬৫) আয়াত, সূরা আরাফ পুরোটা এবং সূরা আনফালের (১-৪০) আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে অষ্টম পারার শেষার্ধ এবং নবম পারা। পাঠকের জন্য আজকের তারাবিতে পঠিত অংশের আলোচ্য বিষয় তুলে ধরা হলো। সূরা আনআমে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের কৃত অসিয়তগুলো বর্ণনার পর নবীজিকে বলা হয়েছে, আপনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দিন, আমাকে আমার রব হক পথের সন্ধান দিয়েছেন। আমার নামাজ, আমার ইবাদত-বন্দেগি, আমার জীবন ও মরণ শুধুই আল্লাহর জন্য। আমার তামান্না শুধু আল্লাহর রেজা ও সন্তুষ্টি অর্জন। (১৬১-১৬২)।

সূরাটির ইতি ঘটছে এই বার্তা দিয়ে যে, দুনিয়া ও এর মাঝে যা কিছু আছে সবই পরীক্ষার উপলক্ষ, যেন মোমিন ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য হয়ে যায়। (১৬৫)।

(সূরা আরাফ মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত দুইশত ছয়, রুকু চব্বিশ) অন্যান্য মক্কি সূরার মতো এ সূরাতেও তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাত- আকিদার এই তিনটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। সূরাটির প্রথম পর্বে নবী করিম (সা.) এর চিরন্তন মোজেজা কোরআনের আলোচনা রয়েছে। আদম-হাওয়া সৃষ্টির আদি ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা আমাদের শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার নির্দেশ দিয়েছেন। আদমকে সিজদার নির্দেশ অমান্য করে ইবলিস মানুষের সঙ্গে শত্রুতার যে ধারা চালু করেছিল কেয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।

সূরা আরাফের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এই সূরায় আল্লাহ মানবজাতিকে চার-চারবার ‘হে আদম সন্তান!’ বলে সম্বোধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম তিনটি সম্বোধনই পরিধেয় বস্ত্র সম্পর্কে। এ থেকে পরিধেয় বস্ত্রের গুরুত্ব অনুমেয়। ইবলিসের একটা বড় টার্গেট হলো, আদম সন্তানকে লজ্জাশরমের পথ থেকে বঞ্চিত করে উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনায় লিপ্ত করা। এছাড়াও সূরা আরাফের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলো ১. মুশরেকরা বায়তুল্লাহর তওয়াফ করত উলঙ্গ হয়ে। তারা তাদের এই ধরনের নিকৃষ্ট কাজের দলিল দিতে গিয়ে বলত, আমাদের বাপ-দাদাদেরও আমরা এমন করতে দেখেছি, অথচ ‘আল্লাহ কখনও বেহায়াপনার নির্দেশ দেন না।’ (২৮-৩৩)।

২. জান্নাত-জাহান্নামিদের বিশেষ কথোপকথন প্রসঙ্গটি এখানে এসেছে। তৃতীয় আরেকটি দলের বিবরণও এখানে এসেছে, তারা হলো ‘আরাফবাসী’। এরা মূলত মোমিন; কিন্তু নেক আমলে তারা অন্যান্য জান্নাতির চেয়ে পিছিয়ে ছিল। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে একটু বিলম্বে। (৩৮-৫১)। আল্লাহর অসীম কুদরত ও একত্ববাদের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো স্তরে স্তরে সাজানো খুঁটিবিহীন আকাশ, চাঁদ, তারা, সূর্য। (৫৪)।
এই দলিলগুলো বর্ণনার পর ছয়জন নবীÑ নুহ (আ.), হুদ, সালেহ, লুত, শুআইব ও মুসা (আ.) এর ঘটনা সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হয়েছে। (৫৯-১৭১)।
সূরা আরাফের ৮৮নং আয়াত থেকে শুরু হয়েছে নবম পারা। অষ্টম পারার শেষে শুআইব (আ.) ও তার জাতির যে আলোচনা চলছিল এ অংশেও রয়েছে সে আলোচনা। (৮৮-৮৯)। বিভিন্ন নবী-রাসুলের কাহিনি বর্ণনার পর বলা হয়েছে, অবিশ্বাসী লোকদের আল্লাহ তায়ালা দীর্ঘ সুযোগ দেওয়ার পর হঠাৎ করেই ধরে বসেন। (৯৭-১০০)। মূলত নবীদের এসব ঘটনা-কাহিনি নবীজীকে শুনিয়ে সান্ত¡না দেওয়া হয়েছে। (১০১)।

যে ছয় নবীর কাহিনি সূরা আরাফে বলা হয়েছে তাদের মধ্যে মুসা (আ.) এর কাহিনিটি সবচেয়ে বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। মুসা নবীকে প্রদত্ত মুজেজাগুলোও ছিল সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট। বিশেষ করে লাঠি ও শুভ্র হাতের মোজেজা দুটি। এগুলোকে ফেরাউন ও তার লোকরা জাদু মনে করত। মুসার মোকাবিলার জন্য জাদুকররা এসেছিল সাপ নিয়ে। মুসা (আ.) এর লাঠি সাপ হয়ে সেগুলো খেয়ে ফেলে। এতে জাদুকররা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ঈমান আনে। ফেরাউন ঈমানের অপরাধে এদের শূলে চড়ায়। (১০৫-১৩৬)।

ফেরাউন ও তার জাতি বনি ইসরাইলকে দাস বানিয়ে রেখেছিল। মুসা নবী এদের দাসত্বমুক্ত করেন। (১২৭-১২৯, ১৩৭-১৪১)।
মুসা (আ.) এর দাওয়াতের প্রত্যুত্তরে ফেরাউন ও তার জাতি অহংকারের পথ বেছে নিয়েছিল। একপর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা তাদের আজাব দ্বারা পাকড়াও করেন এবং শাস্তিতে নিপতিত করেন। তুফান, দলে দলে পঙ্গপাল উকুনের উপদ্রবে এবং যাবতীয় পানিকে রক্তে পরিণত করে আল্লাহ এদের শাস্তি দেন। আজাব দেখলে এরা তওবা করত; কিন্তু আবার হঠকারী হয়ে যেত। (১৩০-১৩৬)।
বনি ইসরাইল ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা তাদের তাওরাত কিতাব দান করেন। কিন্তু মুসা (আ.) তাওরাত আনতে তুর পাহাড়ে গেলে সামেরি এদের গো-পূজায় লিপ্ত করে। এদের শনিবারে মাছ ধরতে নিষেধ করা হলেও এরা হিলা বাহানায় মাছ ধরত। এ কারণে তারা শাস্তি পেয়েছিল। (১৪২-১৭১)। রুহের জগতে সব মানুষ থেকে আল্লাহর বিধান পালনের ওয়াদা নেওয়া হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে সূরার ২১তম রুকুতে। এরপর সূরার শেষ পর্যন্ত যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে, তা হলো,

১. বালআম বিন বাওরার ঘটনা, তাকে ইলম দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছিল; কিন্তু এই বদবখত আল্লাহ প্রদত্ত ইলমকে দুনিয়ার দু-পয়সার বিনিময়ে লুটিয়ে দেয়। (১৭৫-১৭৬)।
২. কাফেররা চতুষ্পদ জন্তুর মতো, কেননা তারা নিজেদের দিল এবং চোখ-কান দিয়ে কোনো ফায়দা অর্জন করে না, ফলে তারা ঈমান থেকে বঞ্চিতই থেকে যায়। (১৭৯ ও ১৯৪-১৯৫)।
৩. আল্লাহ তায়লা কাফেরদের এই দুনিয়ায় ছাড় দিতে থাকেন, এমনকি একটা সময় এমন চলে আসে, যখন তাদের হঠাৎ ধরে বসেন। (১৮২)।

৪. কেয়ামতের নির্দিষ্ট জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া কারও কাছেই নেই। (১৮৭)।
৫. আল্লাহ তায়ালা নবীজিকে সৎচরিত্র অবলম্বনের নির্দেশ প্রদান করেছেন। (১৯৯)। সূরা আরাফের সূচনা হয়েছিল কোরআনের আলোচনা দিয়ে, শেষও হয়েছে কোরআনের আজমত, বড়ত্ব এবং আদব ও সম্মানের আলোচনার মাধ্যমে। (২০৪)।
(সূরা আনফাল, মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ৭৫, রুকু ১০)
অন্যান্য মাদানি সূরার মতো এই সূরাটিতেও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে শরিয়তের বিধিবিধানসংক্রান্ত আলোচনা। বিশেষ করে জিহাদ ফি সাবিলিল্লিাহর প্রসঙ্গটি এখানে মুখ্য।

প্রথম আয়াতে গনিমতের সম্পদ বণ্টননীতি প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। ঈমানদারের কিছু বৈশিষ্ট্যের আলোচনার (২-৪) পর পরবর্তী আয়াতগুলোয় বদর যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হয়েছে। (৫-২৮)।

তৃতীয় রুকুতে নবীজির বিরুদ্ধে কাফেরদের ষড়যন্ত্র ও ঈমানের পথে বাধাদানের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আল্লাহই তাদের চক্রান্তের সমুচিত জবাব দেন। আর তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করার জন্য কেতাল ও জিহাদের নির্দেশনার মাধ্যমে নবম পারার সমাপ্তি হয়েছে। (৩৯-৪০)। সূত্র: আলোকিত বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়