ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর সড়কে পরিবহন নৈরাজ্য যেন জেঁকে বসেছে। সড়ক দানবের নির্মমতায় একের পর এক ঝরছে প্রাণ, ঘটছে অঙ্গহানির ঘটনা। রাজিব, রোজিনা, রুনি, রাসেলের পর এবার রাজধানীর শনিরআখড়ায় বেপরোয়া চালকের ভুলের কারণে প্রাণ ঝরল ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ঝুমার (১৯)। লেগুনা থেকে নামার সময় স্পিডব্রেকারের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগায় ছিটকে পড়ে প্রাণ হারান তিনি। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ওই দুর্ঘটনার পর ঝুমাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ঝুমা কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মৃত আবুল হোসেনের মেয়ে। ইডেন কলেজের অর্নাস প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি। ১ ভাই ২ বোনের মধ্যে ঝুমা ছিল সবার ছোট। পরিবারের সঙ্গে কদমতলীর ধনিয়ার নূরপুরের ৮২৯/৮ নম্বর বাড়িতে থাকতেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে নিহত ঝুমার বড় বোন জেবুন্নেসা জানান, ইডেন কলেজ থেকে বের হয়ে লেগুনায় করে দনিয়ার বাসায় ফিরছিলেন ঝুমা। শনিরআখড়ার কাছে লেগুনাটি পৌঁছানোর পর স্পিডব্রেকার দেখে লেগুনা থেকে নামার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু লেগুনা না থামিয়ে প্রচণ্ড গতি নিয়ে স্পিডব্রেকারে উঠে পড়লে তা সজোরে ধাক্কা খায়। ওই ঝাঁকুনিতে তাল সামলাতে না পেরে ঝুমা লেগুনা থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে যান। এতে তার মাথায় আঘাত লাগে। ঝুমাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে খবর পেয়ে সেখানে তাকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পাই। তারা সেখানে ভর্তি না নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। দুপুর ১টার দিকে ঢামেক হাসপাতাল নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঝুমাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ঝুমার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢামেক মর্গে ভিড় করেন তার স্বজন ও সহপাঠীরা। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ। নিহত ঝুমার বড় বোন জেবুন্নেসা জাহান বিলাপ করে বারবার বলছিলেন, ‘আমি সবাইকে ছেড়ে থাকতে পারব, কিন্তু ঝুমারে ছাড়া থাকতে পারব না। ও আল্লাহ তুমি আমাকেও নিয়ে যাও’।
ইডেন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া জানান, লেগুনা থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে মাথায় আঘাত পাওয়ায় ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আজিজুর রহমান জানান, যে লেগুনা থেকে ছিটকে পড়ে মেয়েটি মারা গেছে সেটি এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। আমাদের টিম খুঁজে বের করে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই রুবেল বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। সূত্র : ভোরের কাগজ