ডেস্ক রিপোর্ট : আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ধরা পড়েছে রাষ্ট্রের রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট'-এ। দেশে দুর্নীতি দমনে নিয়োজিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বিষয়টি ধরা পড়ে।
এই অবস্থার উন্নতিতে সরকারের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশও করেছে দুদক। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে সুপারিশ হস্ত্মান্ত্মর করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
দুদক বলছে, আমদানিকৃত পণ্যের নাম, বিবরণ, গুণগতমান, মূল্য, এইচ এস কোড ইত্যাদিতে মিথ্যা ঘোষণা দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। রাজস্ব-গুরম্নত্ব সম্পন্ন/ উচ্চ ট্যারিফ-হারযুক্ত/ বাণিজ্যিক পণ্যের ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা/অসম্পূর্ণ ঘোষণার প্রবণতা দেখা যায়। এটা দূর করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস অণুবিভাগের সদস্যের (কাস্টমস) নেতৃত্বে ও কাস্টমস বিষয়ে অভিজ্ঞ কর্মকর্তা এবং ফেডারেশন চেম্বারের একজন অভিজ্ঞ প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি সব কাস্টমস হাউস ও স্টেশন কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী সংস্থা, সি অ্যান্ড এফ এজেন্টের যথাযথ প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় দ্রম্নততম সময়ে এ সব অনিয়ম চিহ্নিত করে সে সব পণ্যের ঘোষণার যথাযথ তথ্য/বিবরণ নির্ধারণ করবেন।
চিহ্নিত পণ্য সংক্রান্ত্ম ঘোষণার কাঙ্ক্ষিত তথ্যাদি (পণ্যের নাম/ব্র্যান্ড/গুণগত মান/একক/এইচ এস কোড ইত্যাদি) এবং বিবরণ যথাযথভাবে নির্ধারিত হওয়ার পর তা সব চেম্বার, ব্যবসায়ী সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংক, সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্যশাখা, সব কাস্টমস হাউস ও স্টেশন, সব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট/সংস্থাকে দ্রম্নততম সময়ে অবহিত করতে হবে। এ সব পদক্ষেপ পণ্যের ঘোষণার যথার্থতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে যেমন আমদানিকারক প্রফরমা ইনভয়েস গ্রহণের সময়, সংশিস্নষ্ট ব্যাংক এলসি খোলা/চুক্তি সম্পাদনের সময় পণ্যের সরবরাহকারী/ রপ্তানিকারক ইনভয়েস ও প্যাকিং লিস্ট প্রস্ত্মুত করার সময় এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিল অব এন্ট্রি প্রণয়নের সময় যথাযথ ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে।
দুদক বলছে, যথাযথ ঘোষণাভুক্ত উপাত্তগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অন-লাইন সিস্টেমে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে অন্ত্মর্ভুক্ত করে রাখতে পারে। এতে সংশিস্নষ্ট সংস্থা/পক্ষ সে সবের বিষয়ে অবহিত হতে পারবে এবং অনুসরণে সক্রিয় থাকবে। তাছাড়া পরবর্তী সময়ে এসাইকুডা সিস্টেম এতে আগে সংযোজিত উপাত্তের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় তুলনা/যাচাই-এর ভিত্তিতে সংশিস্নষ্ট 'ঘোষণা' গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। এ লক্ষ্যে প্রত্যেক কাস্টমস হাউস স্টেশন সংশিস্নষ্ট বন্দরের প্রবেশ এবং নির্গমণ পয়েন্টে ওজন পরিমাপক যন্ত্র (যা খালি এবং মালবাহী গাড়ির ওজন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিমাপে সক্ষম) এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন (মনিটরিং সিস্টেম) সিসি ক্যামেরায় তা এসাইকুডা সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে।
এ জন্য কাস্টমস কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা বলছে দুদক। তারা বলছে, এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে যাতে তারা মনিটরিং সিস্টেমে ধারণকৃত উপাত্ত/প্রতিচ্ছবিগুলো বিশেস্নষণ করে সঠিক ফলাফল নির্ধারণ করতে পারেন। এ প্রক্রিয়ায় মিথ্যা ঘোষণাকেন্দ্রিক দুর্বৃত্তপনার অবসান এবং এ সংক্রান্ত্ম দুর্নীতি হ্রাস করা যেতে পারে।
দুদকের সুপারিশে বলা হয়েছে, আমদানি বা আমদানিকৃত পণ্যের বিধিসম্মত ঘোষণা দেয়ার সংস্কৃতি প্রচলন করা সম্ভব হলে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মূল্যায়ন-বিধিমালা বাস্ত্মবায়ন সহজতর হবে। অন্ত্মর্র্বর্তী সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এসাইকুডা সিস্টেমে মূল্যায়ন বিষয়ক মডিউল (ইভ্যালুয়েশন মডিউল) সংযোজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মূল্যায়ন চুক্তি ও মূল্যায়ন বিধিমালা অনুসরণ বিষয়ে কাস্টমসের শুল্ক নির্ধারণের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করা যেতে পারে। তাছাড়া আমদানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট/প্রতিনিধিদের মূল্যায়ন-বিধিমালা প্রতিপালনপূর্বক বিধিসম্মত ঘোষণা দিতে উদ্বুদ্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
দুদক তার সুপারিশে আরও বলেছে, এ সব পদক্ষেপ বাস্ত্মবায়ন করে অবমূল্যায়ন বা অতি মূল্যায়ন প্রবণতা দূর করতে হবে। এ জন্য 'মিনিমাম ভ্যালু' প্রজ্ঞাপন বাতিল করে পণ্যের মূল্য ও পরিমাণ গরমিলকারীদের বিরম্নদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য যে সব দেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানির প্রবণতা বেশি সেই সব দেশে কাস্টমসের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা বলেছে দুদক। একই সঙ্গে কাস্টমস ব- ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছ করতে, ব্যবসাবান্ধব করতে ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কাস্টমসের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মধ্য দিয়েই বন্ড লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, বাতিল, বন্ডেন্ড ব্যবস্থায় আমদানি, রপ্তানি, বন্ড লাইসেন্স খাত, বন্ড অডিট, বন্ড সংশিস্নষ্ট আন্ত্মসংস্থা তথ্য আদান-প্রদান, সমন্বয়, সহযোগিতা, বন্ড ব্যবস্থাপনার স্টান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম নির্ধারণ ও ডিজিটালাইজেশনের সুপারিশ করেছে দুদক।
দুর্নীতি প্রতিরোধে অভিযোগ ও বিরোধ নিষ্পত্তির বর্তমান সিস্টেম যেমন আপিল, ট্রাইবু্যনাল ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে কার্যকর করার কথা বলেছে দুদক।
তারা বলছে, আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস ডিউটি, সম্পুরক শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর মিলে যে বিশাল ট্যারিফ দেয়াল রয়েছে, তা দুর্নীতি প্রবণ হওয়ার বড় কারণ। এ জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলেও মনে করে দুদক। এ ছাড়া সোর্সমানি ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনতে রেজিস্ট্রার ব্যবহারের কথাও বলেছে সংস্থাটি। সূত্র :যায়যায়দিন