শিরোনাম
◈ রাতে বাংলামোটরে জুলাই পদযাত্রার গাড়িতে ককটেল হামলা (ভিডিও) ◈ যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক মোকাবেলায় বাংলাদেশের চার দফা কৌশল ◈ বিআরটিএর মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কঠোর নির্দেশনা ◈ সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে বাংলাদেশ হার‌লো ৭৭ রা‌নে ◈ ২০ বছরেও অধরা এমআই-৬'র ভেতরের রুশ গুপ্তচর! (ভিডিও) ◈ নারী ফুটবলের এই অর্জন গোটা জাতির জন্য গর্বের: প্রধান উপদেষ্টা ◈ প্রবাসীদের জন্য স্বস্তি: নতুন ব্যাগেজ রুলে মোবাইল ও স্বর্ণ আনার সুবিধা বাড়লো ◈ একযোগে ৩৩ ডেপুটি জেলারকে বদলি ◈ 'মধ্যপ্রাচ্যে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকেরা ঘোষণা দিয়ে মারামারি করে' (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ০৭:৫৮ সকাল
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ০৭:৫৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আইনে শাস্তি অপ্রতুল, নেই প্রয়োগও

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এআরসি) গবেষণা মতে, দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার লোক নিহত হচ্ছে। শতকরা ৮০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য গাড়ির চালকদের দায়ী করা হয় বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায়।

চালকের দোষে কারো প্রাণহানি ঘটলেও সে জন্য তার মাত্র তিন থেকে সাত বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। আইনজ্ঞরা বলেছেন, এই শাস্তি একেবারেই কম, তারও বাস্তবায়ন খুবই কম। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলার রায়ে নিহত ব্যক্তির পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয় না।

দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট বিধান সংশোধন করে শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে তা কার্যকর করা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে চালক-মালিকদের প্রতি আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করেন আইনজ্ঞ ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে জড়িত বিশিষ্টজনরা।

দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায়, তবে তার তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা দুই-ই হবে। একসময় এ সাজার মেয়াদ সাত বছর ছিল। পরে তা সংশোধন করে তিন বছর করা হয়। ২০১৪ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে সাজা তিন বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়। আইনজ্ঞরা বলেছেন, এই ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য। ফলে একজন গাড়িচালক ঠিকই জানেন যে তাঁকে এ আইনের আওতায় আটকে রাখা যায় না।

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, এখন সড়কে যা-তা অবস্থা। সড়কে আইনের কোনো প্রয়োগ আছে বলে মনে হয় না। আবার যুগোপযোগী আইনও নেই। যুগোপযোগী আইন করতে হবে, সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। সড়কে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে তার বেশির ভাগ চালকের লাইসেন্স নেই। নেই কোনো অভিজ্ঞতা। ফলে যেখানে-সেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। কালের কণ্ঠ

এইচআরপিবির পক্ষে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৪ সালে দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারা অবৈধ ঘোষণা করে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দোষী চালকের সাজার মেয়াদ সাত বছর করা হয়। এইচআরপিবির পক্ষে রিট আবেদনটি করেছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আইনে দোষী ব্যক্তির সাজার পরিমাণ কম থাকায় চালকরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায়। ফলে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন ১০ বছর সাজার বিধান আছে। অনেক দেশে এই সাজার পরিমাণ আরো বেশি। ২০১৪ সালে হাইকোর্টের আদেশের ফলে সাজার পরিমাণ এখন সর্বোচ্চ সাত বছর হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এই সাজা আদৌ কার্যকর হচ্ছে কি না, তা নিয়ে কোনো ভালো খবর নেই। সাত বছর সাজা যে খুব একটা বেশি তা নয়।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, দণ্ডবিধিতে সড়ক দুর্ঘটনার দায়ে চালককে যে পরিমাণ শাস্তির বিধান দেওয়া আছে, সেটি কোনোভাবেই উপযুক্ত বলে মনে হয় না। এটি বেশ পুরনো আইন। প্রায় দেড় শ বছর আগের এই বিধান এখনো বলবৎ। তিনি বলেন, ‘দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায় চালকের অবহেলার কারণে দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে তাকে তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। হাইকোর্টের আদেশের ফলে সাত বছর পর্যন্ত এই সাজা দিতে পারেন আদালত। আবার চালক ইচ্ছাকৃতভাকে কাউকে হত্যা করলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান প্রযোজ্য। কিন্তু আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মামলায় সাধারণত ৩০৪ (খ)-এর প্রয়োগটাই বেশি। ৩০২ ধারা আনলেও তা কোনোভাবেই প্রমাণ করা সম্ভব হয় না। এসব মামলায় বছরের পর বছর বিচার চলে। সাক্ষী আদালতে আসে না, মামলার তদন্তে বিলম্বসহ নানা কারণে বিচার শেষ করতে বিলম্ব হয়। ফলে অনেক দেরিতে মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। বিচারে দোষীকে সঠিকভাবে প্রমাণিত না করতে পারায় খালাস পায় বা অনুল্লেখযোগ্য শাস্তি হয়।’

শাহদীন মালিক আরো বলেন, ৩০৪ (খ) ধারায় যে শাস্তি তা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এটি বাড়ানো উচিত। এই শাস্তি সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন করা উচিত। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার শুধু কঠোর শাস্তির বিধান করলেই হবে না। আইন প্রয়োগের আগে চালক ও পরিবহন মালিকদের প্রতি সরকারের কিছু দায়িত্ব আছে। সেগুলোও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

নিরাপদ সড়কের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, এখন রাস্তাঘাটে যে পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটছে, পরিবহন বিভাগের জন্য দেশে কোনো আইন আছে কি নেই, তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ হচ্ছে। প্রয়োগ না থাকলে ওই সব আইন দিয়ে কী হবে! তিনি বলেন, আইনের প্রয়োগ নেই। অপরাধীরা হত্যা করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। সড়কে গাড়ির আঘাতে জীবন নিয়েছে, এ রকম কোনো গাড়ির চালকের এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই বললেই চলে। শাস্তির বিধানসংবলিত আইনটি আরো কঠোর করতে হবে। একই সঙ্গে যথাযথ প্রয়োগের দিকে জোর দিতে হবে।

ক্ষতিপূরণের আদেশ বাস্তবায়ন হয় না : ২৮ বছর আগে দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মন্টু ট্রাকচাপায় নিহত হন। এসংক্রান্ত মামলায় ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওই রায় এখনো কার্যকর হয়নি।

মোজাম্মেল হোসেন মন্টুর স্ত্রী রওশন আক্তার গত শনিবার বলেন, ‘২৬ বছর আইনি লড়াই শেষে আপিল বিভাগ এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য বাংলাদেশ বেভারেজ কম্পানিকে নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগের ওই রায় কার্যকর করতে ঢাকা জজ আদালতে মামলা করি। প্রায় এক বছর পর আদালত বাংলাদেশ বেভারেজের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন। ওই আদেশে কাজ হয়নি। এরপর আদালত তেজগাঁও শিল্প এলাকার ৮০ শহীদ তাজউদ্দীন সড়কের সম্পত্তি নিলামে তোলার আদেশ দেন। দুইবার নিলামপ্রক্রিয়া বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। দুই দফায় নিলাম ডাকার কর্তৃপক্ষকে আসতে দেওয়া হয়নি।’ তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমার লড়াউ যেন বাঘের সঙ্গে বিড়ালের লড়াইয়ের মতো।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়