তবে দেশ-কাল-পাত্র ভেদে উভয় পক্ষের আলোচনা সীমাবদ্ধ পর্যায়ে থাকলেও অভলিনো বিজনেস ইন্টিলিজেন্স যে থেমে নেই, তার বড় প্রমাণটি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কর্মধ্যক্ষ অমরিশ তায়াগি হচ্ছেন বিহার থেকে জনতা দল (সম্মিলিত) রাজ্যসভার এমপি কে সি তায়াগির পুত্র এবং ২০১০ সালে জনতা দল ও বিজেপির ঐক্যজোটের নির্বাচনি প্রচারণায় সিদ্ধহস্ত। এমনকী নিতিন গদকারী যখন ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশে বিজেপির সভাপতি তখনও তার জন্য কাজ করেছেন। পাশাপাশি ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের প্রচারণায় ভারতীয়-আমেরিকানদের মাঝেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এসব মিলিয়ে ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকার সহযোগী ‘অভলিনো বিজনেস ইন্টিলিজেন্স’ যথেষ্ট সফলতা, সামর্থ্য ও সক্ষমতার বাহন বটে।
সেই অপ্রতিরোধ্য সফলতার অতীত ও বর্তমান সহায়ক ভিত্তিমূল হচ্ছেনÑ স্ট্রেটেজিক কমিউনিকেশন লেবরেটরিজ (এসসিএল গ্রুপ) পরিচালক আলেকজান্ডার নিক্স (প্রধান কর্মধ্যক্ষ), বিনিয়োগকারী রবার্ট মার্শার ও রেবেকা মার্শার এবং পদত্যাগী হোয়াইট হাউজের প্রধান কৌশলী স্টিভ ব্যানন। আলেকজান্ডার নিক্সের ভাষ্যমতে, ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকা ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪টি নির্বাচনে সম্পৃক্ত হওয়া ছাড়াও ২০১৫ সালে টেড ক্রুজের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনে ‘ডাটা অ্যানালাইসিস’, পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা এবং একই বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের সম্পর্কচ্যুতিপূর্ণ ‘ব্রেক্সিট’ গণভোটে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। তবু ২০১৮ সালের মার্চে ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকার বিরুদ্ধে ‘ফেসবুক অ্যান্ড ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকা ডাটা ব্রিচ’ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ ও ব্রিটেনের রবিবাসরীয় পত্রিকা ‘দ্য অবজারভার’ সমালোচনাপূর্ণ প্রতিবেদন ছাপে। মুখ্য প্রতিপাদ্যটি ছিল, কী করে ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ওই প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করেছে। এরপরই ‘চ্যানেল ফোর’ তা ভিডিও সম্প্রচারে উন্মোচন করেছে। সর্বশেষ গত ২৩ মার্চ সিএনবিসির খবরে প্রকাশ, ব্রিটিশ হাই কোর্ট ‘ইনফরমেশন কমিশন’-কে ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকার লন্ডন অফিসের প্রমাণাদি সংগ্রহের আদেশ দিয়েছে।
এই যখন ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকার পরিণতি, তখন বাংলাদেশে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় ‘পার্টনার’ অভলিনো বিজনেস ইন্টিলিজেন্স কোনোভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে কী? কেননা হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া ভাষ্যে অমরিশ তায়াগি বলেছেন, ‘ক্যামব্রিজ ভারতে কোনো রাজনৈতিক প্রকল্প পরিচালনা করেনি’ ও ‘সোস্যাল মিডিয়া আইনে ভিন্নতা থাকায় বেআইনি ও অনৈতিক দিকটি ভারতে সমানভাবে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে, তবু সময়ই সেটা নির্ধারণ করবে’। তার গুরুত্ববহ বক্তব্যটি হচ্ছে, ‘ক্যামব্রিজের টার্গেট অনুসারে ২০১০ সালে বিহারের রাজ্যসভার নির্বাচনে আমাদের ৯০ ভাগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে’।
বাস্তবে ক্যামব্রিজ উদ্ভাবিত সফট্ওয়্যার বিভিন্ন উৎস থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও বিশেষ অ্যালগরিদম্ প্রক্রিয়ায় তা বিশ্লেষণ করে, যার ফলাফল পরবর্তীতে সরকারি, সামরিক, গোয়েন্দা সংস্থা ও রাজনৈতিক দল সামাজিক প্রচারণার লক্ষ্য সাধনে প্রতিরক্ষা কৌশল রপ্ত কিংবা পরিব্যপ্ত করায় ব্যবহার করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটেনের ‘ব্রেক্সিট’ গণভোটের সময় এই সফট্ওয়্যার ভোটারদের মনস্তাত্ত্বিক দিকটি বিশ্লেষণসহ পরবর্তীতে তা ব্রেক্সিটের পক্ষশক্তির মাঝে ইউরোপবিরোধী অবস্থানকে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেছে।
বলাবাহুল্য, ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকের কর্মধ্যক্ষ মূলত যে প্রতিষ্ঠানের, অর্থাৎ এসসিএল গ্রুপ, সেটি বিগত ২৫ বছরে বিশ্বের ৬০টি দেশের ‘বিহেভিওর্যাল চেঞ্জ’ বা মানসিক পরিবর্তনটি অনুধাবনপূর্বক প্রতিরক্ষা ও সামাজিক পরিবর্তনে কৃতিত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। এই ডিজিটাল বিশ্বায়নপূর্ণ যুগে নানা ডিভাইস ও সফট্ওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত আমাদের ডাটা বা ব্যক্তিগত তথ্য নানাভাবে প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে ও সংগৃহীত হচ্ছে, এমনকী সরকারি ভান্ডারে তা মজুদ রয়েছে। ফলে যুগপৎ ইন্টারনেট ও সেই ডাটা বিশেষ অ্যালগরিদম্ প্রক্রিয়ায় বিশ্লেষণের সহায়ক। এতে কোনো রাজনৈতিক দল চাইলে টেলিফোন কোম্পানি থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম ও সরকারি ভান্ডার ‘হ্যাক করে’ বা ‘হাতিয়ে নিয়ে’ জোগাড় এবং তা নিজেদের লক্ষ্য সাধনে ব্যবহার করতে পারে। আমাদের ‘প্রাইভেসি’ বা ‘ব্যক্তিগত তথ্যনিরাপত্তা’ কী আন্তর্জাতিক আইনের বিধিসম্মত উপায়ে বাংলাদেশে সংরক্ষিত, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাক হয়ে ডলার পাচার হয়ে যায়? আফটার অল, বিগ ডাটা সেটস আর ইন অ্যালগরিদম্ প্রসেস ইন এভ্রিহোয়ার!
ই-মেইল : bukhari.toronto@gmail.com
আপনার মতামত লিখুন :