আশিক রহমান : বঙ্গবন্ধু একটি সাধারণ বাঙালি ঘরে জন্ম নেওয়া মানুষ। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসেছিলেন এই জাতিকে মুক্ত করার জন্য। বাঙালি জাতির অস্থিত্বকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। বঙ্গবন্ধু এমন একজন মানুষ যিনি এই জাতিকে সারাবিশ্বে পরিচিত করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এবং সফল ও সুন্দরভাবে তা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তার নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জীবনের বিনিময়ে।
জাতির জনক একজন অবিস্মরণীয় নেতা ও ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষা ও বাংলার মানচিত্রকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার পথ অনুসরণ করে তারই কন্যা শেখ হাসিনা এদেশেকে উন্নত করার প্রয়াসে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর রক্ত তার শরীরে প্রবাহিত। এই সত্যটা আমাদের বুঝতে হবে। একইসঙ্গে উপলব্ধিও করতে হবে।
পৃথিবীতে যত মহৎ কাজ সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু এমনি এমনি হয় না। সেসবের পেছনের কারিগর ছিলেন মহান সৃষ্টিকর্তা। আমরা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি। পৃথিবীর একজন মালিক আছেন। ওই মালিকের অঙ্গুলি নির্দেশ, স্বকীয়তা, সহযোগিতা ও শুভ ইচ্ছায় পৃথিবী চলে। আর বঙ্গবন্ধু এমন একজন মানুষ, এমন একজন ব্যক্তিত্ব, এমন একজন সৃর্ষ্টিকর্তা, যিনি বাংলাদেশের বাঙালি রূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন প্রত্যন্ত অঞ্চল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। এই মানুষটির জন্ম বাঙালির জাতির জন্য একটি অর্জন। তার জন্ম স্বাধীন-সার্বভৌম একটি বাংলাদেশ ও এই জাতিসত্ত্বার যে একটি ইতিহাস আছে, ঐহিত্য রয়েছে তা প্রস্ফুটিত করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বাংলাদেশের জন্ম পরস্পর পরিপূরক শক্তি। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন বাঙালির জাতির জন্য ছিল একটি শুভদিন। শুভ এই দিনটিকে বাঙালি জাতি অবশ্যই মনে রাখবে।
১৭ মার্চ, একাত্তর বিদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নে জন্মদিন পালন না করার কথা জানিয়ে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু আসলে সেদিন বলতে চেয়েছিলেন, পৃথিবীতে প্রেরিত সাধারণ একজন মানুষ আমি। যে মানুষটির জন্ম, যে মানুষটির অস্থিত্ব, যে মানুষটির বেড়ে উঠা একটি জাতিসত্ত্বাকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, সেজন্যই তিনি জন্মদিন পালন করতেন না, জন্মদিন গ্রহণও করতেন না। কারণ তিনি মনে করতেন, আমি মানেই বাংলাদেশ। আমার জন্মদিন পালন করার কিছু নেই। আমার জন্মদিন, আমার মৃত্যুদিন বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। নিশ্চয় সৃষ্টিকর্তার কোনো বাণী তার কাছে পৌঁছেনি। কিন্তু তিনি ভাবতেন বা বুঝতেনÑ নিশ্চয় আমার জন্ম হয়েছিল একটি শোষিত জাতিকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো তার ছিল, ফলে তিনি তার জন্মদিন পালন করতেন না। কাজ করতেন এদেশের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য।
পরিচিতি : সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন
আপনার মতামত লিখুন :