ডেস্ক রিপোর্ট : টিএসসিতে হট্টগোল, রিকশা, গাড়ি, হকারের হাঁকাহাকি ঠেলে, পুলিশের ব্যারিকেড পেরিয়ে বইমেলা চত্বরে ঢুকলেই মন ভালো হয়ে যায়। কানে ভেসে আসে আবদুল গাফফার চৌধুরীর সেই অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। এ গানের মাঝে কী এক ম্যাজিক আছে। শরীরে মনে এমন এক আবেগ সঞ্চার করে যা ঠিক বলে বোঝানোর নয়। আজ বাদে কাল একুশে ফেব্রুয়ারি। শহীদদের স্মরণ করে বইমেলায় বিরাজ করছিল একুশের আবহ। তরুণ-তরুণীর গালে-কপালে শহীদ মিনার আঁকা, বর্ণমালার একেকটি অক্ষর মনে করিয়ে দেয় বায়ান্নোর রক্তঝরা দিনগুলির কথা। অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাদাকালো পোশাকে এসেছিল বইপ্রেমীরা।
ভাষা সংগ্রামী, প্রাবন্ধিক আহমদ রফিক বললেন, যে চেতনায় বাংলা ভাষার দাবি সেদিন পূরণ হয়েছিল, সেই চেতনা বাঙালি পুরোপুরি ধারণ করছে না। সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্বায়নের প্রভাবে আলোড়িত হচ্ছে তরুণরা। স্বকীয়তা ভুলে অনুকরণ প্রিয়তা গ্রাস করছে তাদের। বইমেলা বই কেনা-বেচার মেলা শুধু নয়- এর সঙ্গে মিশে রয়েছে বাঙালির বেদনা ও গৌরবগাঁথা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, একুশ নিয়ে বাঙালির আবেগ, আগ্রহ, উচ্ছ্বাস অনেক বেশি। কিন্তু সেই আবেগের গভীরতা অনেক কম। ভাষা আন্দোলন বিষয়ে সাহিত্য রচনা বা গবেষণায় নতুন পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষণা এটি চলমান প্রক্রিয়া। নতুন প্রজন্মের সদস্যরাও একদিন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গবেষণা করবে।
এবার বইমেলায় ভাষা আন্দোলনের বই: কথাপ্রকাশ এনেছে আহমদ রফিকের প্রবন্ধ সংকলন ‘ভাষা আন্দোলন : সংক্ষিপ্ত ভাষ্যে’, অন্যপ্রকাশ থেকে এসেছে গোলাম কুদ্দুছের শিশু-কিশোরভিত্তিক বই ‘ভাষা আন্দোলন: সহজপাঠ’, য়ারোয়া থেকে এসেছে গোলাম কুদ্দুছের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ’, নালন্দা থেকে এসেছে ‘ভাষা আন্দোলন বায়ান্ন পূর্ব’ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে খোরশেদ শফিউল হাসানের ইতিহাসভিত্তিক বই ‘ভাষা সংগ্রামী নাঈমউদ্দীন আহমদ’ ও ‘একুশে ফেব্রুয়ারির ষাট বছর’, সাহিত্যপ্রকাশ থেকে এসেছে রাফিউর রাব্বীর গবেষণা গ্রন্থ ‘নারায়ণগঞ্জের ভাষা আন্দোলন’, বিভাস থেকে এসেছে গোলাম সারোয়ার মালেকের ‘আমাদের ভাষা শহীদ’, প্রথমা থেকে এসেছে আহমদ রফিকের ‘একুশের মুহূর্তগুলো’, সাহিত্যমালা প্রকাশনী থেকে এসেছে এস এম শাওয়ান মনিরের ‘অনেক ঝড়ে অমর একুশ’, বাঁধন থেকে এসেছে খান শাহিনের উপন্যাস ‘শিশির ভেজা একুশ’, সিসটেক পাবলিকেশন্স থেকে এসেছে আবদুল্লাহ সিদ্দিকের কবিতার বই ‘একুশের স্মৃতি’, নন্দিতা প্রকাশ থেকে এসেছে মো. আসকর আলী ফকিরের কবিতার বই ‘রক্তে লেখা একুশে ফেব্রুয়ারি’, নবরাগ প্রকাশনী থেকে এসেছে জহিরুল হক বাপ্পীর কিশোর উপন্যাস ‘ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তি সংগ্রাম’, রাবেয়া বুক হাউজ থেকে এসেছে সাইফ আবেদীনের শিশুতোষ বই ‘ভাষা আন্দোলনের গল্প’, ভাষা প্রকাশ এনেছে মিজান রহমানের ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’।
এদিকে, গতকাল ১৯তম দিনে নতুন বই এসেছে ১২৯টি। এগুলোর মধ্যে গল্প ২২টি, উপন্যাস ২৪টি, প্রবন্ধ ১১টি, কবিতা ৫৩টি, ছড়া ৩টি, শিশু সাহিত্য ৩টি, জীবনী-২টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই ৩টি, বিজ্ঞান ১টি, ভ্রমণ-২টি, রম্য/ধাঁধাঁ-১টি, অনুবাদ -৩টি, সায়েন্স ফিকশন-১টি, অন্যান্য বিষয়ে ১২টি বই এসেছে।
মেলামঞ্চে অনুষ্ঠান
গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের অর্থনীতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সেলিম জাহান এবং ফাহমিদা খাতুন। সভাপতিত্ব করেন হাসনাত আবদুল হাই। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে কল্যাণ রাষ্ট্র সোনার বাংলা গড়ার সম্ভাবনা বাংলার দিগন্তে উঁকি দিচ্ছে। বাংলাদেশ আজ আর্থসামাজিক উন্নয়নের দোরগোড়ায়।’ সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় সামিউন জাহান দোলার একক অভিনয়ে ধ্রুপদী অ্যাক্টিং স্পেস-এর নাটক নভেরা। সূত্র : ইত্তেফাক