লিহান লিমা: প্রথমবারের মত কংগ্রেসে দেয়া স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের ভাষণে ৭টি মিথ্যে তথ্য দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রথমত, ট্রাম্প তার ভাষণে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমরা এই পর্যন্ত ২৪ লাখ নতুন চাকরি খাত সৃষ্টি করেছি। ম্যানুফেকচার খাতে ২ লাখ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও লেবার ব্যুরোর মতে, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকেই কর্মসংস্থার হার বেড়ে চলছে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প আফ্রো-আমেরিকানদের কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গে বলেছেন, ইতিহাসে এই কালোদের বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম। যদিও প্রথম আফ্রো-আফ্রিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে কালোদের বেকারত্বের হার হ্রাস পাচ্ছে এবং অর্থনীতিবিদরা ট্রাম্পের সময়ে কালোদের বেকারত্বের নিন্মহারকে পূর্ববর্তী বছরের ধারা বলেই উল্লেখ করেছেন।
তৃতীয়ত, ট্রাম্প তার কর সংষ্কারকে আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কর ছাড় বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, এর আগে ২০১৩ এবং ২০১০ সালে বারাক ওবামার কর সংষ্কার এবং ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের কর সংষ্কার মার্কিন জিডিটিতে বৃহত্তর প্রভাব ফেলেছিল।
চতুর্থত, ট্রাম্প বলেছেন, কর ছাড়ের পর থেকে ৩০ লাখের মত কর্মী বোনাস পেয়েছে এবং দরিদ্র, মধ্যবিত্তদের অর্থনৈতিক উন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের কর ছাড়ের পরপরই কিছু কোম্পানি কর্মীদের জন্য বোনাসের ঘোষণা দেয়, যদিও বোনাস কোন দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে না। তাছাড়া কিছু কিছু কোম্পানি আগেই বোনাসের পরিকল্পনা করে রেখেছিল আর সেটির ক্রেডিট রিপাবলিকানরা নিতে পারে না। উপরন্তু ট্রাম্পের এই কর ছাড় শুধুমাত্র ধনীদেরই লাভবান করবে।
পঞ্চমত, ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ইতিহাসের যে কোন প্রশাসনের চেয়ে অনেক কম নীতিমালা বাতিল বা অগ্রাহ্য করেছেন। কিন্তু রেগুলেটরি অফিসের হিসেব মতে, ট্রাম্প প্রশাসন এই পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭৯ নীতিমালা পর্যবেক্ষণে ঢিলেমি করেছে এবং এর মধ্যে ৬৩৫টি বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ১৮১টি এবং বারাক ওবামা ১৫৬টি নীতিমালা বাতিল করেছিলেন।
ষষ্ঠত, ট্রাম্প বলেন, আমি গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি, ইরাক এবং সিরিয়াতে আইএসকে শত ভাগ পরাজিত করা করেছে এবং শতভাগ অঞ্চল আইএসমুক্ত। এর আগে ১ জানুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পল ই ফুঙ্ক জানান, মোট ৯৮ ভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ অঞ্চল সিরিয়ার সরকার রাশিয়া এবং ইরানের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের আগেই আইএস ওই অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব হারাতে থাকে।
সপ্তমত, ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি মার্কিন ভিসা লটারিতে অযোগ্য ব্যক্তিদের অর্ন্তভুক্তির বিষয় বাতিল করেছেন, এর আওতায় যোগ্য, মেধাবি ও নিরাপদ ব্যক্তিই আমেরিকাতে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। যদিও লটারি প্রবর্তনের সময় থেকেই নির্বাচিত ব্যক্তিদের অবশ্যই যোগ্য, শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ হতে হত। বিবিসি,সিএনএন।
আপনার মতামত লিখুন :