শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী 

প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারী, ২০১৮, ১০:১৪ দুপুর
আপডেট : ৩১ জানুয়ারী, ২০১৮, ১০:১৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকা-চট্টগ্রাম-নোয়াখালীর উদ্যোক্তা সবচেয়ে বেশি

ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা জেলার শিল্প ঐতিহ্য বেশ পুরনো। পূর্বাঞ্চলীয় গাঙ্গেয় নদীবন্দর হিসেবে বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী জেলাটি শিল্পসমৃদ্ধ স্থান হিসেবে প্রসিদ্ধি পায় বহু আগেই। সময়ের পরিক্রমায় বিকাশ হতে থাকে উদ্যোক্তা শ্রেণীর। বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে চট্টগ্রামের পরিচিতিও নতুন নয়। উদ্যোক্তা তৈরিতে বহু আগে থেকেই অগ্রভাগে ছিল জেলাটি। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নোয়াখালী। ষাটের দশকের মধ্যভাগ পর্যন্তও জেলার বাসিন্দাদের জীবিকা বলতে ছিল কৃষি। যদিও জনপ্রতি জমি ছিল বেশ কম। ক্ষুদ্র ও মাঝারি কিছু শিল্প থাকলেও জেলার অর্থনীতিতে এর ভূমিকা ছিল নগণ্য। সময়ের সঙ্গে এ পরিস্থিতিরও বদল হতে থাকে। জেলাটিতে গড়ে উঠতে থাকে একটি উদ্যোক্তা শ্রেণী। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত উৎপাদন খাতের কোম্পানিগুলোর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরই সবচেয়ে বেশি উদ্যোক্তা নোয়াখালীর।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত উৎপাদন খাতের কোম্পানি রয়েছে ২০২টি। সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাদ দিলে ২৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক ঢাকার। আর চট্টগ্রামের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের অধীন রয়েছে ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ কোম্পানি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে বেশি কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক নোয়াখালী জেলার। এ জেলার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানি বাদ দিলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালক রয়েছেন প্রায় ৬০০ জন। পরিচালকদের ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ ঢাকার। চট্টগ্রামের উদ্যোক্তা-পরিচালক রয়েছেন ১৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ঢাকা, চট্টগ্রামের পরই ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক রয়েছেন নোয়াখালী জেলার।

ঢাকার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের অন্যতম এপেক্সের উদ্যোক্তা মঞ্জুর-ই-এলাহী ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের আজিজ মোহাম্মদ ভাই। এ দুই উদ্যোক্তার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা পাঁচ। এখন ঢাকার বাসিন্দা হলেও তাদের আদি নিবাস ভারতে। দেশের আরেক বড় ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান পরিবারের আদি নিবাস ঢাকার দোহারে। এ পরিবারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে চারটি। যদিও ফার্মাসিউটিক্যাল, তৈরি পোশাক, বিদ্যুৎ, এলএনজিসহ বিভিন্ন খাতে বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের। এর বাইরে ঢাকার অন্য উদ্যোক্তাদের মধ্যে ইউনিক গ্রুপের কর্ণধার নুর আলীর হোটেল ওয়েস্টিন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। দেশে বিদ্যুৎ খাতে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের উদ্যোক্তাদের নিবাসও ঢাকাতেই। এর বাইরে শমরিতা হাসপাতাল, ন্যাশনাল পলিমার, রহিম টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, এনভয় টেক্সটাইল, রহিমা ফুড, মতিন স্পিনিং, সেন্ট্রাল ফার্মাসহ মোট ৪০টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন ঢাকার উদ্যোক্তারা।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে

মূলত কাঁচামাল প্রাপ্তি ও অবকাঠামো সুবিধার ওপর ভিত্তি করে। যেখানে এসব সুবিধা থাকে, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই উদ্যোক্তা গড়ে ওঠে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এসব কারণেই বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। নিজেদের ঐক্যের কারণে নোয়াখালীর ব্যবসায়ীরাও এগিয়েছেন। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে অন্য জেলায় আরো বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হলে দেশের সম্পদ ও শিল্প-বাণিজ্যে আরো ভারসাম্য আসবে বলে আমি মনে করি।

আবুল খায়ের গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, পিএইচপি পরিবার, কবির গ্রুপ, হাবিব গ্রুপ, বিএসআরএম, প্যাসিফিক জিন্স, ইস্পাহানি গ্রুপসহ দেশসেরা শিল্পপতিদের আদি ভূমি চট্টগ্রাম হলেও এদের অনেকেই নেই শেয়ারবাজারে। যদিও চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাত ধরে গড়ে উঠেছে তালিকাভুক্ত ৩৫টি কোম্পানি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আলীহোসাইন আকবরআলী পরিবারের বিএসআরএম লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিলস। চট্টগ্রামের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আমরা নেটওয়ার্ক, আমরা টেকনোলজিস, বিডি কম, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, কনফিডেন্স সিমেন্ট, সিভিও পেট্রোকেমিক্যালস, ঢাকা ডায়িং, দেশ গার্মেন্টস, ফ্যামিলিটেক্স, ফার কেমিক্যালস, গোল্ডেন সন, জিপিএস ইস্পাত, ফরচুন সুজ, ফার ইস্ট নিটিং, হাক্কানী পাম্প, ইমাম বাটন, কেডিএস অ্যাকসেসরিজ, শাহজিবাজার পাওয়ার, ওয়েস্টার্ন মেরিন ও এস আলম স্টিলস অন্যতম।

ঢাকা-চট্টগ্রামের পরই সবচেয়ে বেশি কোম্পানির উদ্যোক্তা নোয়াখালীর। জেলার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের অধীন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে অন্যতম বেঙ্গল গ্রুপের বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিক লিমিটেড। সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের বেঙ্গল গ্রুপের ১২টির অধীন প্রতিষ্ঠান থাকলেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি একটি। অন্যদিকে বিবিএস গ্রুপের বদরুল হাসান শেয়ারবাজারে বিবিএস, বিবিএস কেবলস ও নাহী অ্যালুমিনিয়ামসহ তিনটি কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক। তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে আর্গন ডেনিমস ও ইভিন্স টেক্সটাইলের একাধিক উদ্যোক্তা-পরিচালকের বাড়িও নোয়াখালী জেলায়। অটোমোবাইল শিল্পে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ইফাদ অটোস ও ইফাদ গ্রুপের স্বত্বাধিকারী ইফতেখার আহমেদ টিপুর বাড়িও নোয়াখালীতে। ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের ইবনে সিনা ও জেএমআই সিরিঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নোয়াখালীর উদ্যোক্তাদের হাত ধরে। এর বাইরে জেনারেশন নেক্সট, নূরানী ডায়িং, সেন্ট্রাল ফার্মা, সমতা লেদার, ইউনাইটেড পাওয়ার, জাহিন টেক্সটাইল, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ও কনফিডেন্স সিমেন্টের মালিকানায় রয়েছে নোয়াখালীর উদ্যোক্তা-পরিচালক। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ছাড়াও নোয়াখালীর উদ্যোক্তাদের হাতে গড়ে উঠেছে পারটেক্স গ্রুপ, গ্লোব গ্রুপ অব কোম্পানিজ, সানজি গ্রুপ, আজিম গ্রুপ, সজীব গ্রুপ, কল্লোল গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ ও পূর্বাচল রিজেন্ট টাউনের মতো বড় প্রতিষ্ঠান।

কঠোর পরিশ্রম ও নিজ জেলার বাইরে গিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চিন্তা নোয়াখালীতে উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, নোয়াখালীতে জনবসতির তুলনায় কৃষিজমি কম হওয়া ও নদীভাঙনের কারণে এখানকার মানুষ একসময় ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী হয়। পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম ও একে অন্যকে সহায়তা করায় অন্য জেলার তুলনায় নোয়াখালীতে অনেক বেশি শিল্পোদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে।

শিল্পোদ্যোগে এগিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এ জেলার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে তালিকাভুক্ত ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ কোম্পানি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সবচেয়ে বড় উদ্যোক্তা ওবায়দুল করিম পরিবারের ওরিয়ন গ্রুপ ও কোহিনুর গ্রুপ। এছাড়া আরএকে সিরামিকস, প্যাসিফিক ডেনিমস, লিব্রা ইনফিউশন ও ইভিন্স টেক্সটাইলসের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এ জেলার উদ্যোক্তাদের হাত ধরে।

কুমিল্লার শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম আ হ ম মুস্তফা কামাল মন্ত্রী হওয়ায় বর্তমানে উদ্যোক্তা-পরিচালকের খাতায় নাম নেই তার। তবে টেক্সটাইল, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ওষুধ-রসায়নসহ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা জেলার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে।

মেঘনা ও সিটি গ্রুপের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের আদি নিবাস নারায়ণগঞ্জ হলেও এখানকার খুব বেশি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়ায় কিছুটা পিছিয়ে এ জেলা। নারায়ণগঞ্জের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নিয়ন্ত্রণে আছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।

বেশকিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বরিশাল, গাজীপুর, সিলেট ও কুষ্টিয়া জেলার উদ্যোক্তাদের হাতেও। বরিশালের আজিজুল ইসলাম পরিবারের আলিফ গ্রুপ বর্তমানে দেশের বৃহৎ শিল্প পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। লকপুর গ্রুপের কর্ণধার আমজাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বড় শিল্পোদ্যোক্তার নিবাস খুলনায় হলেও শীর্ষ দশে নেই তারা। সূত্র : বণিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়