শিরোনাম
◈ রাতে বাংলামোটরে জুলাই পদযাত্রার গাড়িতে ককটেল হামলা (ভিডিও) ◈ যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক মোকাবেলায় বাংলাদেশের চার দফা কৌশল ◈ বিআরটিএর মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কঠোর নির্দেশনা ◈ সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে বাংলাদেশ হার‌লো ৭৭ রা‌নে ◈ ২০ বছরেও অধরা এমআই-৬'র ভেতরের রুশ গুপ্তচর! (ভিডিও) ◈ নারী ফুটবলের এই অর্জন গোটা জাতির জন্য গর্বের: প্রধান উপদেষ্টা ◈ প্রবাসীদের জন্য স্বস্তি: নতুন ব্যাগেজ রুলে মোবাইল ও স্বর্ণ আনার সুবিধা বাড়লো ◈ একযোগে ৩৩ ডেপুটি জেলারকে বদলি ◈ 'মধ্যপ্রাচ্যে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকেরা ঘোষণা দিয়ে মারামারি করে' (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮, ০১:২২ রাত
আপডেট : ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮, ০১:২২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বন্যার চোখে মিডিয়া ও যৌনতা

বিনোদন ডেস্ক: সম্প্রতি দেশে ফিরে এসে হঠাৎ করেই বিস্ফোরক হয়ে উঠেছেন লাক্স কন্যা ফারিয়া শাহরিন। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একের পর এক বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও হাটে-হাঁড়ি ভেঙে দিচ্ছেন তিনি। আর তাতে যেন ‘তেলে-বেগুনে’ রীতিমত জ্বলে উঠছেন অন্যান্য অভিনয়শিল্পীরা। এরইমধ্যে ফারিয়ার বক্তব্যর বিরুদ্ধে অনেক সেলেব্রেটিই নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আবার ফারিয়াকে সংযত হওয়ার কথা বলছেন।

কিন্তু সংযত হওয়ার বদলে ফারিয়া যেন ক্রমশ নিজের সাফাই গেয়ে চলেছেন। পাশাপাশি নিজেকে ‘ধোয়া তুলসী পাতা’ দাবি করে সহকর্মীদের ‘ধুয়ে’ দিচ্ছেন ফারিয়া। যদিও ফারিয়ার দাবিকে কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারছেন না, এমনকি ভেতরে ভেতরে অনেকেই ফারিয়ার এমন সাহস দেখানোর প্রশংসাও করেছেন, তারপরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফারিয়ার এমন কথাবার্তাকে লাগামহীন, অশালীন এবং বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন অনেক সিনিয়র তারকারা। রোববার দৈনিক সমকালের অনলাইন সংস্করণ-এ ফারিয়া শাহরিন প্রসঙ্গে নিজের খোলামেলা মতামত ব্যাখ্যা করেছেন অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। কেবল ফারিয়া শাহরিনই নয়, বন্যা মির্জার লম্বা এই বক্তব্যে উঠে এসেছে মিডিয়া, যৌনতা এবং পুরুষতান্ত্রিক মিডিয়ায় নারী-কর্মীদের নানান অসহায়ত্বের চিত্র। চলুন দেখা যাক, কি বললেন বন্যা মির্জা-

‘একজন কর্মজীবী নারী পেশাক্ষেত্রে যৌন উৎপীড়ন বা হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছেন- এ পরিস্থিতিতে এক সেকেন্ডও দেরি না করে নিজের পজিশন নেওয়ার কথা। যে যা-ই ভাবুন, আমার ওটাই কর্তব্য। তারপরও ফারিয়ার ক্ষেত্রে আমি যে পজিশন নিয়েছি, তা অতটা সরল না। সরল না বলেই ফেসবুক ও অন্যান্য জায়গায় একনাগাড়ে গালমন্দ আমার শুনতে হচ্ছে। অনেকেই আমাকে দেখানোর চেষ্টা করছেন মিডিয়ার কলঙ্ক ঢেকে রাখছি বলে। কিংবা নারী হয়ে নারীর বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছি হিসেবে। কিংবা আমি নিজে আমার ও অন্যদের 'খারাপ কাজ' ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আছি এভাবে। আমাকে সম্ভাব্য সব যৌনাত্মক নিন্দা-মন্দও করা হচ্ছে। কর্মজীবী নারী হিসেবে এবং বিশেষত 'মিডিয়ার মেয়ে' হিসেবে এসব অভিজ্ঞতা হতেই থাকে। ফলে আমার গালমন্দ খাওয়া নিয়ে মন খারাপ করে আমি লিখতে বসিনি। আমি লিখতে বসেছি ফারিয়ার বিপদ সত্ত্বেও কেন আমার পজিশন নিতে ডিলেমি হচ্ছে সেটা স্পষ্ট করতে।

'আমার সমস্যা হচ্ছে, আমি এই-সেই করি না' এটা বলা আর 'আমি এই-সেই করি না, অন্যেরা করে বেড়ায়'- এই দুই কথার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ আছে; সেটা বোঝা প্রত্যেকের অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশে এবং সারাবিশ্বে বিভিন্ন পেশাতে নারীর কী সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তা জানার জন্য ইন্টারনেটের যুগে বিশেষ কষ্ট করতে হবে না। 'মি টু' হ্যাশট্যাগের কথা অনেকেই জানেন। এটা হয়েছে পারিবারিক পর্যায়ে যৌন নিপীড়ন নিয়ে। ইতালিতে আইনজীবী নারীদের পোশাক পরার বিধিনিষেধ থেকে শুরু করে দিল্লিতে পাবলিক বাসে (এখন তো বাংলাদেশেও) ধর্ষণ পর্যন্ত সবই আপনাদের জানা থাকার কথা। সবারই জানা থাকার কথা। কেবল কল সেন্টারে রাতের ডিউটি দিতে গিয়েই নারীদের চাকরি ছাড়ার পরিস্থিতি হয়, তাই নয়। বরং হাসপাতালে ডাক্তার বা পাঁচ তারকা হোটেলের ক্ষেত্রেও হয়। চারপাশে তাকালেই তা বোঝা যায়। তাহলে 'মিডিয়ার নারী'দের সমস্যাটাকে অনন্য করে দেখানোর পলিটিক্সটা কী? মিডিয়ায় যৌনাত্মক পরিবেশ থাকলে সেটা নারীর বিরুদ্ধে অনাচার নয়; নারীর নিজের 'চরিত্রগত সমস্যা'- এটা কোন ধরনের বিচার? এই বিচার সমাজে পাঁচজন হিংসাত্মক পুরুষের রয়েছে, তা জানি। নারীদের তা জানতেই হয়। মিডিয়ায় কর্মরত নারীরা জানেনই। কিন্তু ফারিয়া বা একজন নারী কর্মীর কেন থাকবে? বিশেষত যিনি নিজেও নিজেকে 'মিডিয়া' জগতেরই ভাবেন।

এই পলিটিক্সটা বুঝতে গেলে 'মিডিয়ার নারী' দিয়ে সমাজ তথা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কী বোঝে, কীভাবে বোঝে তা আলাপ করা দরকার। এখানে পুরুষের লোভ-লালসার কী প্রক্রিয়া কাজ করে তা বোঝা দরকার। 'মিডিয়ার মেয়ে' নিয়ে সমাজে কতগুলো ধারণা চালু আছে। সেই স্টিগমার কারণে প্রত্যেক মেয়েই এখানে পেশা বাছাই করলে তার নিজের পরিবারেও সংঘর্ষ করতে হয়। আর পাঁচটা পেশায় যাওয়ার তুলনায় সেই সংঘর্ষটা কঠিনই। কেন 'মিডিয়ার মেয়ে' নিয়ে উদ্ভট সব ভাবনা চালু আছে, তারও ব্যাখ্যা করা যায়। আর সেই উদ্ভট ভাবনাগুলো থেকে সমাজের পুরুষদের একাংশকে সরানোর দায়িত্বটা বরং প্রেস বা সংবাদপত্র নিতে পারত। সেটা অনেক সংবাদকর্মীই করেন না। ঠিক আছে, তারা তাদের কর্তব্য নির্ধারণ করুন। কিন্তু একজন মিডিয়া কর্মী 'অমুকেরা এসব করে কাজ পান' বলে যখন ঢালাও অসত্য বলেন এবং আর পাঁচটা কর্মক্ষেত্রে নারীর সংগ্রামকে উধাও করে দেন, তখন আপত্তি আছে। আরও জরুরি মিডিয়া নিয়ে পুরুষদের কারও কারও লোভ-লালসা থেকে যেসব মনগড়া চিত্র বানানো চলছে, সেসব নিয়ে পরিস্কার আপত্তি করা। আমি সেটাই করেছি। কিন্তু ঘটনাচক্রে মনে হয়, অভিযোগকারী কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার চেয়েও পত্রিকা ও ফেসবুকের বাহবা নিয়ে বেশি উৎসাহী।

এ বিষয়টা বুঝতে আমি মনোযোগ দেব ফারিহা শাহরীন বা যে কোনো মিডিয়া কর্মীর 'অ্যামেচারত্ব' ঘোষণার দিকে। তিনি বলুন বা যে কেউ 'এই কাজ আমার না করলেও চলে' বা 'আমি এইটা দিয়ে জীবন চালাই না'- এসব বলাবলি যে দাম্ভিকতা, তা বোঝার জন্য কমন সেন্সই যথেষ্ট। আমি বা কোনো অভিনেতা যিনি এটা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি বলতে পারবেন না। বলতে চাইবেন না। তা তিনি নারী হোন বা পুরুষ। অন্যের দাম্ভিকতা নিয়ে আমার সমস্যা হয় না। কিন্তু সমস্যা হলো যখন এই দাম্ভিকতা জীবিকা নির্বাহকারীদের প্রতি তুলনা করে তাদেরকে ছোট দেখাতে করা হয়। 'অ্যামেচার' হওয়াও কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যে কোনো পেশাই অনেক লোকের জন্য জীবিকা নির্বাহের উপায়। আর সে জন্যই পেশার পেশাদারিত্ব নির্ধারণের জন্য তাদের দায়-দায়িত্ব নিতে হয়। ঢালাও হওয়ার কোনো সুযোগ বা কারণ থাকে না তাদের জন্য। যে কোনো কর্মী যখন বলেন, 'এটা আমার না করলেও চলে' তখন এটা তার অভিমান হলে আমি একভাবে দেখব। এটা তার তুচ্ছার্থে বলা কথা হলে আমি আরেকভাবে দেখব। আমার অভিনয় থেকে আয় না করলে চলত না।

এটাও পরিস্কার হওয়া দরকার, যে কোনো পেশাতে কে কোনভাবে কাজ করবেন, কাজ পাবেন তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। নেই কারণ, আমার ভাবনা দিয়ে একজন কাজ নেওয়ার উপায় বের করবেন না। এখন কেউ ঘনিষ্ঠ হয়ে অভিনয়ের কাজ পান কি-না গবেষণা করা যেতে পারে। আমার কোনো উৎসাহ নেই। কারণ অভিনেত্রী ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ পেলে তা মন্দ; পুরুষ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার পুকুরের ইলিশ দিয়ে কন্ট্রাক্ট পেলে তা প্রশংসনীয়- এসব বিচার করার মতো নির্বোধ জায়গায় গিয়ে পৌঁছাতে হবে। সমাজে যদি চালিয়াতির ব্যবস্থা থাকে তা পুরুষ ও নারী নানান জন নানান কর্মক্ষেত্রে নানান ভাবে নিয়ে থাকতে পারেন। একজনের সঙ্গে অন্যজনের যোগাযোগের মধ্যে ঢুকে এসব উদ্ধার করা আমাদের কাজ বলে আমি বিবেচনা করি না। আমার বিবেচনাটা তাহলে কী? আমার বিবেচনা হলো, 'অন্যেরা সম্মানহানি ঘটিয়ে কাজ করে'- এমন কোনো পেশাবিরোধী ঢালাও কথা বলার আপত্তি করা। এই ঢালাও কথা অসত্য; কেবল হাততালি পাইয়ে দিতে পারে। কিন্তু পেশাটার নিজস্ব সংগ্রামকে খুব খাটো করা হয়।

অনেক বছর আগে আমি 'সা¤্রাজ্যবাদী নারীবাদ' শুনেছিলাম। বুঝতে ঝামেলা হয়েছিল। এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, 'পুরুষতান্ত্রিক নারীবাদ' বলেও একটা জিনিস আবিস্কার করছি। একজন নারী অভিনেতার উত্থাপিত অভিযোগ ভাসাভাসা ও ঢালাও। কেবল ভাসাভাসাই নয় বরং নিজের সহকর্মী অন্য নারীদের অসম্মান করে উত্থাপন। আর কতিপয় পুরুষ যা শুনতে চায় ('মিডিয়ায় মন্দ মেয়েরা কাজ করে') ঠিক সেই ভার্সনটাই শোনানো। তার পরও এক দল 'নারীর নিরাপত্তা', 'নারীর অধিকার' হিসেবে ওই অসম্মানকে মাথায় তুলে রাখছেন। ওই নারীর অভিজ্ঞতা হাজির করার জন্য তিনি সস্তা চটুল পুরুষতন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছেন। 'মন্দ মেয়েরা ফায়দা নিয়ে কাজ করে'- একদম পুরুষতান্ত্রিক বিচার, কিন্তু যেনবা নারীর পাশে দাঁড়ানোর ভঙ ধরছেন লোকজন।

নারীর পাশে দাঁড়ানোর কাজটা করতে চাইলে কোনো পেশাক্ষেত্র নিয়ে ঢালাও ভাবনা আগে বন্ধ করুন। বোঝার চেষ্টা করুন আর পাঁচটা কর্মক্ষেত্রের মতোই মিডিয়ার পরিবেশ। আর মিডিয়াও একটা বিশেষ এলাকা নয়। বিজ্ঞাপন থেকে সংবাদ পাঠ- সবই মিডিয়া। আর প্রত্যেক জায়গাতেই নারী পুরুষতন্ত্র ও যৌনাত্মক বিদ্বেষী কাঠামোকে মোকাবেলা করেই কাজ করেন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়