শিরোনাম
◈ পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমাইরার ময়নাতদন্তে ভয়ঙ্কর সব তথ্য ◈ অর্থের বিনিময়ে ৬ বছরের শিশুকে বিয়ে: তালেবান প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আপাতত রক্ষা! ◈ আবারও মে‌সির জোড়া গোলে ইন্টার মায়ামির জয় ◈ এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ ‘তুমি কেন ফুয়েল কেটে দিলে?’ ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের আগে পাইলটদের শেষ ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং ◈ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের জন্য সুখবর: মৃত্যু হলে লাশ দেশে পাঠাবে সরকার, ক্ষতিপূরণ মিলবে বীমার আওতায় (ভিডিও) ◈ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত: পিউ রিসার্চ ◈ বেপরোয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩ ◈ স্প‌্যা‌নিশ ক্যাবরেরাই থাক‌ছেন বাংলা‌দেশ ফুটবল দ‌লের কোচ ◈ সন্ধ‌্যায় নেপালের বিরু‌দ্ধে লড়াই‌য়ে নাম‌ছে বাংলা‌দে‌শের মে‌য়েরা

প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:২২ সকাল
আপডেট : ২২ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশের সীমানা পেরিয়ে সমাদৃত সিরামিক পণ্য

অর্থ ডেস্ক : বিশ্বকে চমকে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। শিল্প-বাণিজ্য, প্রযুক্তি, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া। সমৃদ্ধির এই পথযাত্রায় বিভিন্ন খাতের সাফল্য নিয়ে আমাদের ৬ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন সম্ভাবনার বাংলাদেশ

মরিয়ম সেঁজুতি : আদি মৃৎশিল্পের পথ ধরে সিরামিক শিল্পের আবির্ভাব। হাজার বছরের পুরনো এ শিল্পের বহু প্রাচীন নিদর্শন ঠাঁই করে নিয়েছে দেশ-বিদেশের জাদুঘরে। এদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের তালিকায় সিরামিকের অবস্থান সপ্তম। বিদেশে সমাদৃত হচ্ছে বাংলাদেশের সিরামিক পণ্য। এ খাতে রপ্তানি আয় বাড়ছে। বাড়ছে বিনিয়োগও। এমন পরিস্থিতিতে সফলভাবে দেশে প্রথমবারের মতো সিরামিক সামগ্রীর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় গত ৩০ নভেম্বর।

মানব সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার পণ্য ব্যবহারেও বিবর্তন আসে। মাটির তৈজসপত্র, সৌখিন পণ্য তৈরিতে আধুনিক যন্ত্র যুক্ত হয়ে তার রূপ, মান ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায়। সেই ধারাবাহিকতায় এক সময় সিরামিক পণ্যের উদ্ভাবন করে মানুষ। বিবর্তনের ধারায় সিরামিক শিল্পে যুক্ত হতে থাকে মানুষের সৌন্দর্য্যবোধ জ্ঞান ও প্রযুক্তি। নতুন নতুন শিল্পনৈপুণ্যে বাড়ে মান, পাল্টায় রূপ। এ দেশে বাণিজ্যিকভাবে সিরামিকের যাত্রা শুরু হয় প্রায় ষাট বছরের অধিক সময় ধরে। এক সময় সৌখিনতা হলেও কালের পরিক্রমায় তা এখন নিত্যব্যবহার্য। এই শিল্পপণ্যে বাড়ছে বৈচিত্র্য, কমছে বিদেশি সিরামিক পণ্যের ওপর নির্ভরতা।

জানা যায়, আমদানি বিকল্প রপ্তানি খাত হিসেবে সিরামিক শিল্পের বিকাশ ঘটে আশির দশকে। শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ওয়্যারস ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) এর সর্বশেষ তথ্যমতে, ৬৫ শতাংশ ভেল্যু এডেড এই শিল্পে বর্তমান বিনিয়োগ ৮ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান ৪৫ হাজার এবং পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানে জড়িয়ে আছে ৫ লক্ষাধিক মানুষ। ৯৫ শতাংশ সিরামিকের কাঁচামাল আসে বাইরে থেকে। বিশেষ করে চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে। আর ৫ শতাংশ কাঁচামাল সিলেট অঞ্চল থেকে আসে।

বিসিএমইএ সভাপতি সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, এ খাতে তিন ক্যাটাগরিতে ৬২ শিল্পকারখানা আছে। সামনে আরো নতুন বিনিয়োগ আসছে। তবে কাঁচামালের অস্বাভাবিক দর এবং চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা এ খাতের এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এর সমাধান করা না গেলে মূল প্রতিযোগী ভারত ও চীনের কাছে মার খাবে সম্ভাবনাময় এ শিল্প। বিসিএমইএর সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন, ২০টি টেবিলওয়্যার উৎপাদনকারী থেকে এখন বছরে ২৫ কোটি পিস সিরামিক পণ্য তৈরি হচ্ছে। ২৬টি টাইলস প্ল্যান্ট থেকে ১২ কোটি বর্গমিটার টাইলস হচ্ছে। ১৬টি স্যানিটারিওয়্যার কোম্পানি বছরে ৭৫ কোটি পিস টাইলস তৈরি করছে। রপ্তানি হচ্ছে ৫০টির বেশি দেশে। বিদেশীদের কাছে দিন দিন এ পণ্যের সমাদর বাড়ছে। উদ্যোক্তারা বলেন, সিরামিক খাতে এখন বছরে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫ শতাংশ। প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দেন সিরামিক শিল্প মালিকরা।

সিরামিক খাত সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সিরামিকের ভবিষ্যৎ অনেক সম্ভাবনাময়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সিরামিককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ শিল্পের বিকাশের পথে সব বাধা দূর করা হবে। এফবিসিসিআইর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, এখন সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি ‘লেভেল-১’ এ আছে। সিরামিকের উন্নয়নে এফবিসিসিআই সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে সিরামিক পণ্যের মধ্যে টেবল পণ্যের এখন বিদেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। এসব টেবল পণ্যের মধ্যে রয়েছে ১৫০ থেকে ২৫০টি ধরন। পাশাপাশি এইচএন্ডএম ও মার্কসের মতো নামিদামি বিদেশি ব্র্যান্ডের অর্ডারও নেয়া হচ্ছে দেশীয় সিরামিকস কারখানায়। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্তত ৫০টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি এসব সিরামিক পণ্য। বিশেষ করে চীনের দখলে থাকা বিশ্ববাজারে এখন বাংলাদেশি সিরামিকস পণ্য প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। তৈজসপত্র, স্যানিটারি পণ্য আর টাইলস এই তিন ধরনের পণ্য সিরামিক কারখানায় উৎপাদিত হয়। টাইলস, বেসিন, কমোড, কিচেন ওয়্যার, স্যানেটারি ওয়্যার, টেবিল ওয়্যার, মাটির জার, কলস, ফুলের টব,

মটকা, টেবিল ওয়্যার, স্যানেটারি ওয়্যার, গার্ডেন পট, ভেজ, কিচেন ওয়্যার, ডিনার সেট, টি সেট, কফি মগ, প্লেট, বাটি থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিসপত্র সিরামিক দ্বারা তৈরি করা হচ্ছে। শাইনপুকুর, মুন্নু, বেঙ্গল ফাইন, স্ট্যান্ডার্ড, পিপলস এবং ন্যাশনাল সিরামিক কারখানা বাংলাদেশের সিরামিক তৈজসপত্রের উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। আবার আরএকে, ফুয়াং, চায়না-বাংলা, ফার, মধুমতি, এটিআই, সানফ্লাওয়ার, গ্রেটওয়াল, ঢাকা-সাংহাই এবং মীর কোম্পানি টাইলস ও স্যানেটারি পণ্য উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।

বিসিএমইএ তথ্যমতে, তৈজসপত্র উৎপাদনকারী ২৬ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ কোটি পিস। তারাই তৈজসপত্রের দেশীয় চাহিদার ৮৮.৫৫ শতাংশ পূরণ করে। ২৬টি টাইলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দেশীয় চাহিদার ৭২.২৯ শতাংশ জোগান দেয়। তাদের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১২ কোটি বর্গমিটার টাইলস। স্যানিটারি পণ্যের দেশীয় চাহিদার ৮৩.৪৩ শতাংশ পূরণ করছে ১৬টি স্যানিটারি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বাকিটা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চার কোটি ১৮ লাখ কোটি ডলার বা ৩৩৮ কোটি টাকার সিরামিক পণ্য রপ্তানি করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এই আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ১৪ শতাংশ বেশি। সিরামিক পণ্যের মধ্যে তৈজসপত্র বেশি রপ্তানি হচ্ছে।

সিরামিক শিল্প এ দেশে নতুন নয়। ষাটের দশকে এমসিআই ও ন্যাশনাল সিরামিক নামের দুটি সিরামিক কারখানা পাকিস্তানি এক শিল্পপতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়া ওই দশকে ঢাকা সিরামিক ও তাজমা সিরামিক নামে আরো দুটি ব্যক্তি মালিকানাধীন সিরামিক কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ নামক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা স্থাপিত হয়- যা পরবর্তী সময়ে পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামে স্বাধীন বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশ ইন্স্যুলেটর এন্ড স্যানিটারি ওয়্যার ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয়। স্বাধীনতার পর প্রথম ব্যক্তি মালিকানাধীন মুন্নু সিরামিক কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। নব্বইয়ের দশকে সিরামিক শিল্পের বেশ বিস্তার ঘটে। তবে অন্যান্য শিল্পের মতো সিরামিক শিল্পও প্রথমে ধীরগতিতে এগিয়েছে। গত দুদশকে দ্রুত এর বিকাশ লাভ করেছে। এখন বছরে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫ শতাংশ। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজার প্রসার লাভ করেছে প্রধানত মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাত ধরেই। আর সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, তুলনামূলকভাবে সুলভ মূল্যের গ্যাস এবং শ্রমের কারণে সিরামিক শিল্প বিকাশ লাভ করেছে।ভোরের কাগজ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়