শিরোনাম
◈ আবারও মে‌সির জোড়া গোলে ইন্টার মায়ামির জয় ◈ এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ ‘তুমি কেন ফুয়েল কেটে দিলে?’ ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের আগে পাইলটদের শেষ ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং ◈ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের জন্য সুখবর: মৃত্যু হলে লাশ দেশে পাঠাবে সরকার, ক্ষতিপূরণ মিলবে বীমার আওতায় (ভিডিও) ◈ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত: পিউ রিসার্চ ◈ বেপরোয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩ ◈ স্প‌্যা‌নিশ ক্যাবরেরাই থাক‌ছেন বাংলা‌দেশ ফুটবল দ‌লের কোচ ◈ সন্ধ‌্যায় নেপালের বিরু‌দ্ধে লড়াই‌য়ে নাম‌ছে বাংলা‌দে‌শের মে‌য়েরা ◈ ঢাকায় হবে এশিয়া কাপের সভা, ভারত অংশ নে‌বে না ◈ এবার যে কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন ড. ফয়জুল হক

প্রকাশিত : ২০ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৬:১৭ সকাল
আপডেট : ২০ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৬:১৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্বাক্ষর করে গরহাজির এমপিদের চিফ হুইপের চিঠি

ডেস্ক রিপোর্ট : মন্ত্রী ও এমপিদের নামে গোপনীয় চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংসদ সচিবালয় থেকে ওই চিঠি পাঠান সরকার দলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। চিঠিতে মন্ত্রী ও এমপিদের অধিবেশন চলাকালে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সংসদ অধিবেশনের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে উধাও হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এ অনুরোধ বলে জানিয়েছে চিফ হুইপের অফিস। চিঠিতে বলা হয়েছে, সংসদ কক্ষে আমাদের অনুপস্থিতি কিংবা অধিবেশন শেষ হওয়ার পূর্বে সংসদ কক্ষ ত্যাগ করা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। যা জনমনেও নেতিবাচক বার্তা দেয়।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজ নিজ ভোটারদের কাছেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। যা আমাদের কারো জন্যই কাম্য নয়। তাই সংসদীয় কার্যক্রমে আমাদের আরো বেশি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, প্রতিদিন কোরাম সংকটের প্রেক্ষিতে ওই চিঠি পাঠানো হয়। মন্ত্রী-এমপিদের নামে অতীতে এ ধরনের চিঠি পাঠানোর উদাহরণ নেই। সংসদ সচিবালয়ের মুখবন্ধ খামের ওপরে গোপনীয় ও জরুরি লিখে তা প্রত্যেকের বাসায় পাঠানো হয়। সঙ্গে কয়েকটি পত্রিকায় কোরাম সংকট নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট সংযুক্তি করে দেয়া হয়। প্রথমদিকে মন্ত্রী ও এমপিদের অফিসের ঠিকানায় ওই চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরে পরিবর্তন করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৯ই জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন কক্ষে মন্ত্রী ও এমপিদের অনুপস্থিতির কারণে স্পিকার তড়িঘড়ি অধিবেশন মূলতবি ঘোষনা করেন। অথচ ওইদিন হাজিরা খাতায় দুইশ’র বেশি মন্ত্রী ও এমপি’র উপস্থিতির স্বাক্ষর রয়েছে। যদিও মাগরিবের নামাজের বিরতির পর স্পিকারসহ উপস্থিত ছিলেন ৪৮ জন। সংবিধান অনুযায়ী উপস্থিত সদস্যের সংখ্যা ৬০ জনের কম হলে কোরাম সংকট হয়। তবে কোরাম সংকটের জন্য অধিবেশনে সভাপতিত্বকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়। যদি কোনও সদস্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তবে স্পিকার কোরাম পূর্ণ হওয়ার জন্য পাঁচ মিনিট ধরে ঘণ্টা বাজানোর নির্দেশ দেবেন। এর মধ্যে কোরাম না হলে স্পিকার অধিবেশন মুলতবি রাখবেন।

তবে ওইদিন উপস্থিতির হার দেখে আগেভাগেই সংসদ মুলতবি করা হয়। ওইদিনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী ও এমপিদের চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে বুধ ও বৃহস্পতিবার কয়েক এমপি’র সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সংসদ অধিবেশনে দিন দিন অনুপস্থিতির হার বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বাসার ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। খুব জরুরি কাজ না থাকলে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করি না। বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক এমপি সংসদ থেকে বের হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানান, কয়েক দিন ধরে স্ত্রী বাণিজ্যমেলায় যেতে বলছে। কিন্তু সময় পাইনি। তাই আজ বাণিজ্যমেলায় যাচ্ছি। তিনি বলেন, জানেনই তো সংসদ ঠিক রাখতে হবে আবার সংসারও তো ঠিক রাখতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঝে মধ্যে মন্ত্রী ও এমপিদের হাজিরা খাতা চেক করেন। বিষয়টি জানার পর মন্ত্রী ও এমপিরা সংসদে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই উধাও হয়ে যান। এ কারণে স্বাক্ষর থাকলেও মন্ত্রী ও এমপিদের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে সংসদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গোপন চিঠিতে নয়, এটা আসলে প্রকাশ্যেই বলা উচিত। আর স্বাক্ষর করে মন্ত্রী ও এমপিদের উধাও হয়ে যাওয়া দায়িত্বহীনতা। জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্বের যে অবহেলা এটাই তার প্রখর দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, এসবের মাধ্যমে তারা নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। এটাকে ক্রমাগতভাবে অব্যাহত রেখে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত করছেন। এতে তারা প্রমাণ করছেন, সংসদ সদস্য হলেই চলবে কাজ করার ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধের কোনো প্রয়োজন নেই। এটা তো সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। তিনি বলেন, বিষয়টিতে চিফ হুইপ নিজেও হয়তো বিব্রত। এ কারণে বিষয়টি গোপন রাখতে গোপনীয় শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কারা কারা স্বাক্ষর করে সংসদ থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করা উচিত। প্রসঙ্গত সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শ করে চিফ হুইপ সংসদ পরিচালনা করেন। তাকে সহযোগিতা করেন সরকারি ও বিরোধী দলের হুইপরা।
চিঠিতে যা আছে-

চিফ হুইপের পাঠানো দুই প্যারার চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ। আস্‌সালামু আলাইকুম। সংসদীয় গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে প্রাণবন্ত সংসদ। আমরা সংসদ-সদস্যবৃন্দ এই সৌন্দর্য্যের অলংকার। সংসদ কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংসদ কক্ষে আপনাদের উপস্থিতি সংসদ কার্যক্রমকে যেমনি প্রাণবন্ত করে, সংসদীয় গণতন্ত্রকে তেমনি অনেক বেশি গৌরবান্বিত ও সৌন্দর্য্যমণ্ডিত করে। আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর চলমান আলোচনা ২৬-০২-২০১৮ খ্রি: পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি কার্যদিবসের আলোচনায়ই আপনারা পর্যাক্রমে অংশ নিচ্ছেন। অধিবেশন চলমান সময়কালীন অন্য কোনো সরকারি/বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত কোনো ধরনের কার্য সিডিউলে রাখা সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের জন্য বাঞ্ছনীয় নয়। সংসদ কক্ষে আমাদের অনুপস্থিতি কিংবা অধিবেশন শেষ হওয়ার পূর্বে সংসদ কক্ষ ত্যাগ করা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু, যা জনমনেও নেতিবাচক বার্তা দেয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজ নিজ ভোটারদের কাছেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, যা আমাদের কারো জন্যই কাম্য নয়। তাই সংসদীয় কার্যক্রমে আমাদের আরো বেশি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, সকল মাননীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীবর্গকে যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে অধিবেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অধিবেশন কক্ষে অবস্থান করে সংসদীয় কার্যক্রমকে অধিকতর সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে অবদান রাখার জন্য অনুরোধ করছি। কারো বিশেষ কোনো প্রয়োজনে সাময়িক অনুপস্থিতির প্রয়োজন হলে সে ব্যাপারে নিম্নস্বাক্ষরকারীকে অবহিত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

কোরাম নিয়ে যে পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত
৯ই জানুয়ারি মাগরিবের নামাজের বিরতির পর স্পিকারের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ৭১ বিধিতে জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ বিধির নোটিশগুলো নিষ্পত্তি করেন। ওই সময় নোটিশ দেয়া বেশির ভাগ এমপিই অনুপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব চলাকালীন অধিবেশন কক্ষে এক পর্যায়ে উপস্থিত সদস্য সংখ্যা স্পিকারসহ ৪৮ জনে নেমে আসে। মন্ত্রীদের মধ্যে ওইসময় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত ছিলেন। এর বাইরে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব জমা দেন পাবনার সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু, চট্টগ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও দিদারুল আলম, ঢাকার এমএ মালেক এবং ফেনীর রহিম উল্লাহ। এর মধ্যে প্রথম তিনজনই অধিবেশন কক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন।

প্রশ্নোত্তর পর্বেও প্রশ্নকারী একাধিক এমপি অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে শুরুর প্রশ্নকারী মৌলভীবাজারের আবদুল মতিন অনুপস্থিত ছিলেন। তিন নম্বর প্রশ্নকারী আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনও অনুপস্থিত ছিলেন। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, কোরাম সংকটের বিষয়টি বুঝতে পেরে স্পিকার আগেভাগেই অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন। একইদিন অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর একাধিক এমপি’র বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র একজন সংসদ সদস্য বক্তব্য শেষ করার পরই স্পিকার অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন। মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়