ফারমিনা তাসলিম : বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি সাবেক গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দেশের আর্থিক উন্নতি হলেও সেটা নৈতিকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি। ব্যাংকের এমডিরা পেশাগত কাজ করতে চাইলেও তারা কাজ করতে পারেন না, অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
বাংলাদেশে ব্যাংক কোম্পানি আইনে বিতর্কিত এক সংশোধনী এনে মঙ্গলবারে সংসদে একটি বিল পাস করা হয়েছে। যেখানে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের এক সঙ্গে একই পরিবারের চারজন সদস্যকে থাকার অনুমতি পেয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর ওপরে মালিক পরিচালকদের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে এবং জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রশ্নের মুখে পড়বে। এমন একটা আশঙ্কা ঘিরে বিলটি নিয়ে ব্যাংঙ্কার এবং অর্থনীতিবিদরা আপত্তি জানিয়েছেন।
নতুন আইনের বিষয়ে আপত্তির জায়গাটা কোথায় ?
এ প্রসঙ্গে খন্দকার ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি নৈতিক সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যেমন আমাদের প্রচুর জাতীয় আয় বেড়েছে, কিন্তু সেটার ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে খুব একটা কথা হয়েছে। আমরা এটাকে ক্যালকুলেট করে দেখেছি, টাকাগুলোর অর্থনৈতিক পুঞ্জীভূত হচ্ছে ওপরের দিকে কিন্তু নিচের দিকে নয়। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে যে অসমতাটাকে আরো বৃদ্ধি করে দিবে। অর্থাৎ একটা পরিবারের হাতে একটা ব্যাংকের কর্তৃত্ব চলে যাবে, শেয়ার হোল্ডারদের হাতে সাময়িকভাবে থাকবে না। তাদের ভিতরে যেটা হবে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ হলে এমনি অন্যকোন কোম্পানি হলে কোন আপত্তি নাই। কিন্তু যে ওয়ার্ক ক্যাপিটল দিয়ে ব্যাংক চলে, সেটা টাকার মাত্র শতকরা দশভাগেরও কম শেয়ার হোল্ডাররা দিয়ে থাকে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে বড় বড় দুর্নীতি এবং অনেক অনিয়মও ঘটেছে। এর ফলে অনেক ব্যাংক সংকটেও পড়েছে। নতুন এ আইনের পরিণাম কী দাঁড়াতে পারে ?
জবাবে খোন্দকার ইব্রাহিম বলেন, আমি ভবিষ্যতবাণী না করে, যা ঘটেছে সেটাই শোনাই। ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড এদেশের একটি বড় ব্যাংক এবং যাতে এ ব্যাংকে এক পরিবারে সদস্য দুজনের কম ছিল। এ ব্যাংকটি ছিল দেশের সবচেয়ে ভালো চারটি ব্যাংকের একটি। আর যখন এ ব্যাংকটিতে এক পরিবার থেকে ব্যাংকিং কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে ৮ জন ডিরেক্টর হলেন, তখন উচিত ছিল এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বাংলাদেশ তাদের নোটিশ করেছিল। কিন্তু আমরা জানি না কেন আরো অগ্রসর হতে পারেনি। ব্যাংকটিতে ওইসবের পরে এক পরিবার থেকে ৫ জন সদস্য হওয়ার পর, এটির অবস্থা খুব খারাপ। এটা প্রাইভেট সেক্টরে বড় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। খারাপ অবস্থাটা হলো শ্রেণিবিন্যস্ত বিল, ঋণ বা খেলাপি ঋণ এটি সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ওপরে নজরদারি বা সংস্কারের ব্যবস্থা আছে। সেটা কে আপনি কতটা বলিষ্ঠ মনে করেন ?
জবাবে খন্দকার ইব্রাহিম বলেন, এটা একেবারে বলিষ্ঠ না। সরকার তো একটা সংস্থা। সরকার কিছু বললে বা এর কোন শক্তিশালী ব্যক্তি কিছু বললে সে কাজটা আর করা হয় না। এটা তো কেউ বলবে না, বরং এটা স্বীকার করতে পারবে না। ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যে অনেক এমডি যারা একটু পেশাগতভাবে কাজ করতে চায়, তাদের চাকরি চলে যায়। বর্তমানে সেদিন কাগজে দেখলাম ১৩ জন এমডি বসে আছেন, তাদের চাকরি হয় না। ন্যাশনাল ব্যাংকের এমন অবস্থা হয়ে গেছে গত একবছরের ওপরে সেখানে কোন এমডি নাই। এমডি ছাড়া সেখানে কাজ চলছে। অথচ আইনে রয়েছে, কোন ব্যাংক এমডি ছাড়া তিন মাসের বেশি এক সেকেন্ডও থাকতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক সেক্ষেত্রে কিছু করতে পারছে না।