সুশান্ত সাহা : রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া ১৩/১ রুবি ভিলা নামের ওই বাড়িতে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা বলে জানিয়েছেন র্যাব। ৬ তলা বাড়ির ৫ তলার ওই ফ্ল্যাটে কক্ষ মোট তিনটি, সেখানে থাকতেন সাতজন। ফ্ল্যাটে ঢোকার পর পূর্বে পাশের কক্ষটিতে তিন জঙ্গি থাকত।
র্যাব জানায়, অভিযানের পর বাসার ভেতর থেকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করে র্যাব। পরিচয়পত্রে সজিব লেখা থাকলেও যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেই ছবির সঙ্গে জাহিদ নামে আরেকটি পরিচয়পত্র জমা দিয়ে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা। এ কারণে র্যাব সন্দেহ করছে তারা ভুয়া এনআইডি দিয়ে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল।
জঙ্গি আস্তানার ওই বাড়ির ৬ তলার বাসিন্দা মো. পারভেজ জানান, আমি রুবি ভিলার ছয় তলাতে থাকি। বাড়ির পাঁচ তলার যে ফ্ল্যাটটিতে জঙ্গিরা থাকতো সেটা খুব নিরব ছিল। আসা-যাওয়া করলে বোঝা যেতনা ভেতরে কেউ আছে। রাত ৩টার দিকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। তারপর বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বাইরে থেকে তালা দেয়া পাই। তখন আমি ভয় পেয়ে বাবাকে কল দেই। পরে টিভিতে দেখে নিশ্চিত হই, এই বাসায় জঙ্গি আস্তানা পাওয়া গেছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রটি আসল কিনা নিশ্চিত না। একই জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিতে অন্য নাম। ফটোকপিতে লেখা সজীব। তাই আমরা ধারণা করছি জাতীয় পরিচয়পত্রটি ফেক (ভুয়া)। তবে পরিচয়পত্র দুটিই ভুয়া কিনা তদন্ত শেষে জানা যাবে। তিনি বলেন, এ মাসের ৪ তারিখ তারা রুমটি ভাড়া নেয়। কিন্তু বাড়িওয়ালা জানেই না তার বাড়িতে নতুন মেম্বার উঠেছে। তিনি তার বাড়িটি ভাড়া দেওয়ার জন্য রুবেল নামে একজনকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। রুবেলই মেস ভাড়া দিয়ে থাকে। র্যাবের ডিজি বলেন, নিহত জঙ্গিদের পরিচয় এখনই পাওয়া যায়নি। তাদের বিষয় তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। নিহতদের বয়স বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
তিনি বলেন, অভিযান চলাকালে ওই বাসায় ‘জঙ্গিরা’ বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে। বাসার ভেতরে পাওয়ার জেল, সুইসাইড ভেস্ট ও বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে। অবিস্ফোরিত আইডিও আছে।
শুক্রবার দুপুুর ২টা ২০ মিনিটে রুবি ভিলা জঙ্গি আস্তানার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে র্যাব। অভিযান শেষ হয়েছে বলে জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন,বাড়িটি এখন ঝুঁকিমুক্ত। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে অভিযান শুরু হয় । নিহত তিন জনই জেএমবির সদস্য ছিল। আমরা গোপন সূত্রে খবর পাই, রাজধানীতে একটি সেল গঠন করে বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে। সেই সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে এই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।
বাড়িটির ম্যানেজার রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, গত ২৮ ডিসেম্বর এই জাহিদ রুবেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটের এক কক্ষে ভাড়ায় ওঠে। সেই ফ্ল্যাটের ৩টি কক্ষের একটি কক্ষে থাকতো জাহিদসহ ওই তিন জন। বাকি দু’টি কক্ষে থাকতেন আরও চার জন। যখন বাসা ভাড়া নেয়, তখন জাহিদ ম্যানেজার রুবেলকে বলে যে, তার সঙ্গে দুই ভাই থাকবে। সে কারখানায় কাজ করে। ২ হাজার টাকা প্রাথমিকভাবে দিয়ে বাসায় উঠলেও মাসিক ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল ৫ হাজার ৫শ’ টাকা।
ওই ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জাহিদ ভোরে বের হয়ে যেতো, রাতে ফিরতো। বাকি দু’জন বাসায় থাকতো, তাদের কেউ বের হতে দেখেনি। ফ্ল্যাটের চুলার গ্যাস পুরোপুরি জ্বালিয়ে সেখানে গ্রেনেড রেখে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু আমরা এ ধরনের পরিকল্পনা ঠেকাতে পেরেছি। ভবনটির বাকি ৬০ জনই নিরাপদ আছেন। ভবনটিও পুরোপুরি নিরাপদ বলা যায়। অভিযানের পর ঘটনাস্থল থেকে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট, মরদেহের পাশে দু’টি পিস্তল, অবিস্ফোরিত তিনটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), ১৪টি ডেটোনেটর, চারটি পাওয়ার জেল, অন্যান্য বিস্ফোরক ও কিছু বাল্ব পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক দ্ইুটার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাড়িটি ঘিরে রাখে র্যাবের একটি দল। শুক্রবার ভোরের দিকে ভবনটির পাঁচ তলায় অবস্থানরত জঙ্গিরা র্যাবের সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পাল্টা জবাব দেয় র্যাব। অভিযান শেষে তিন জঙ্গির লাশ পাওয়া যায়। এর আগেই ভবনের নিবাসীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। আর অভিযানে র্যাবের দুই সদস্য সামান্য আহত হয়েছে বলে জানান র্যাব ।