শিরোনাম
◈ রাতে বাংলামোটরে জুলাই পদযাত্রার গাড়িতে ককটেল হামলা (ভিডিও) ◈ যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক মোকাবেলায় বাংলাদেশের চার দফা কৌশল ◈ বিআরটিএর মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কঠোর নির্দেশনা ◈ সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে বাংলাদেশ হার‌লো ৭৭ রা‌নে ◈ ২০ বছরেও অধরা এমআই-৬'র ভেতরের রুশ গুপ্তচর! (ভিডিও) ◈ নারী ফুটবলের এই অর্জন গোটা জাতির জন্য গর্বের: প্রধান উপদেষ্টা ◈ প্রবাসীদের জন্য স্বস্তি: নতুন ব্যাগেজ রুলে মোবাইল ও স্বর্ণ আনার সুবিধা বাড়লো ◈ একযোগে ৩৩ ডেপুটি জেলারকে বদলি ◈ 'মধ্যপ্রাচ্যে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকেরা ঘোষণা দিয়ে মারামারি করে' (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারী, ২০১৮, ১১:১১ দুপুর
আপডেট : ০২ জানুয়ারী, ২০১৮, ১১:১১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভুলই থেকে গেল কবি জসীম উদ্দীনের নামের বানান

ডেস্ক রিপোর্ট : শুধু ভুল নয়, একেক শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে একেকভাবেই ছাপা হলো কবি জসীম উদ্দীনের নামের বানান। প্রথম শ্রেণী থেকে নবম-দশম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা পাঠ্যবইয়ে কোথাও খ্যাতিমান এই কবির নামের বানান লেখা হয়েছে ‘জসীম উদ্দীন’ আবার কোথাও লেখা হয়েছে ‘জসীমউদ্দীন’। ভুল আর গরমিলের এখানেই শেষ নয়, নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে কবিতার সূচিতে কবির নাম ছাপা হয়েছে ‘জসমীউদ্দীন’ আর ভেতরে কবিতার সাথে কবির নাম লেখা হয়েছে ‘জসীম উদ্দীন’। কবির নামের প্রকৃত বানান হলো দুই শব্দে তথা জসীম উদ্দীন। এ বিষয়টি গত বছরের শুরুর দিকে তুলে ধরা হলেও এ বছরও একেক শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে একেকভাবে দেখানো হয়েছে কবির নামের বানান। কোথাও ভুল কোথাও শুদ্ধ।

নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে ‘মামার বাড়ি’ কবিতায় কবি জসীম উদ্দীনের নাম লেখা হয়েছে এক শব্দে ‘জসীমউদ্দীন’। এ ছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘আসমানী’, অষ্টম শ্রেণীর ‘রূপাই’, নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের সূচিতে ‘পল্লিজননী’ কবিতায় এবং ষষ্ঠ শ্রেণীর আনন্দ পাঠ বইয়ের ‘আয়না’ নামক গল্পেও কবির নাম এক শব্দে লেখা হয়েছে জসীমউদ্দীন।

পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে ‘ফুটবল খেলোয়াড়’ ও সপ্তম শ্রেণীতে ‘আমার বাড়ি’ কবিতায় কবির নাম লেখা হয়েছে দুই শব্দে ‘জসীম উদ্দীন’। এ ছাড়া নবম দশম শ্রেণীর বইয়ে ২৪২ পৃষ্ঠায় পল্লিজননী কবিতায় কবির বানান দুই শব্দে লেখা হয়েছে, যদিও সূচিতে লেখা হয়েছে এক শব্দে।

প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছয় শ্রেণীতে কবি জসীম উদ্দীনের ছয়টি কবিতা এবং একটি গল্প মিলিয়ে মোট সাতটি লেখা পাঠ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন ক্ষেত্রে কবির নাম লেখা হয়েছে ‘জসীম উদ্দীন’ আর পাঁচ ক্ষেত্রে লেখা হয়েছে ‘জসীমউদ্দীন’।

কবি জসীম উদ্দীনের নামের বানান কমপক্ষে ছয়ভাবে দেখা যায় বিভিন্ন বই-পুস্তকে। সরকারি পাঠ্যবইয়ে কবির নামের বানানের উপরোক্ত দুই ধরন ছাড়া অপর যে চারভাবে বিভিন্ন বইয়ে দেখা যায় তা হলো ‘জসীমউদ্দীন’, ‘জসীমউদ্দিন’ ‘জসীম উদ্দীন’ এবং ‘জসীম উদ্ দীন’। জসীম উদ্দীনকে নিয়ে লেখা বই, এমনকি তার বিভিন্ন রচনা নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের প্রচ্ছদ বা কভার পৃষ্ঠায়ও তার নামের বানানের এ জাতীয় বিকৃতি দেখা যাচ্ছে।

কবির জীবদ্দশায় প্রকাশিত তার বইয়ের প্রচ্ছদে যেভাবে তার নামের বানান ছাপা হয়েছে পরে প্রকাশিত সেই একই বইয়ে তার নামের বানান বিকৃতভাবে ছাপা দেখা যাচ্ছে। এখন জাতীয় পাঠ্যপুস্তকেও তার নামের বানান বিভিন্ন বইয়ে বিভিন্নভাবে দেখা যাচ্ছে। অনেকের মনে তাই প্রশ্ন জেগেছে বাংলাদেশের খ্যাতিমান এ কবির নামের সঠিক বানান আসলে কোনটি। সরকারি পাঠ্যবইয়েই বা নানাভাবে কি করে তার নাম লেখা হচ্ছে?

কবি জসীম উদ্দীনের নামের সঠিক বানান কোনটি তা জানার জন্য প্রথমে খোঁজ করা হয় তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত পুরনো কিছু বই। কবির জীবদ্দশায় প্রকাশিত বেশ পুরনো অনেক বইয়ের প্রচ্ছদে দেখা গেছে কবির নামের বানান ছাপা হয়েছে ‘জসীম উদ্দীন’। নকশী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, রঙ্গিলা নায়ের মাঝি, আসমান সিংহ, মাটির কান্না, ধান খেত, রাখালী, জারীগান, পদ্মা পার, চলো মুসাফির, বালৈ প্রভৃতি বইয়ের প্রচ্ছদে কবির নাম ‘জসীম উদ্দীন’ দেখা গেছে। এমনকি ‘ধান খেত’ নামক বইয়ের প্রচ্ছদেও কবির হাতে লেখা নাম ‘জসীম উদ্দীন’ হিসেবে দেখা গেছে।

এরপর কবির জন্মস্থান, বাড়ি, কবরের সামনে তার নাম কিভাবে লেখা রয়েছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয়। তাতে দেখা যায় ফরিদপুরে কবির বাড়ি অম্বিকাপুরে কবি যে ঘরে বাস করতেন সেই স্মৃতিজড়ানো ঘরের লাল দেয়ালে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘কবি জসীম উদ্দীনের অম্বিকাপুর (গোবিন্দপুর) অবস্থান বিশেষ ঘটনা।’ এখানেও কবির নামের বানান দেখা যাচ্ছে ‘জসীম উদ্দীন’। কবির বাড়ির সামনে বড় একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘পল্লী কবি জসীম উদ্দীন এর বাস ভবন’। বাড়ির সামনে কবির বিশাল বড় একটি ম্যুরালের নিচে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘কবি জসীম উদ্দীন’। নামের নিচে লেখা রয়েছে কবির জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ। কবির কবরের সামনে লেখা রয়েছে ‘কবি জসীম উদ্দীন’। অম্বিকাপুরে জসীম জাদুঘরে অসংখ্য ছবির নিচে কবির নাম লেখা রয়েছে ‘জসীম উদ্দীন’। কবির বাড়িতে বিভিন্ন গাছের সাথে, ঘরের দেয়ালে, প্ল্যাকার্ডে কবির বিভিন্ন কথা, কবিতার লাইন যেমন, ‘আমার বাড়ী যাইও ভোমর/বসতে দিব পিঁড়ে, তুমি যাবে ভাই-যাবে মোর সাথে/ আমাদের ছোট গাঁয়...প্রভৃতি লেখা রয়েছে। প্রতিটি লেখার নিচে কবির নাম লেখা রয়েছে ‘জসীম উদ্দীন। একটি দেয়ালে ‘মামার বাড়ি’ ছড়াটি পুরো লেখা রয়েছে। সেখানেও কবির নাম দুই শব্দে ‘জসীম উদ্দীন’ লেখা রয়েছে।

এসব থেকে এটি স্পষ্ট যে, ‘জসীম উদ্দীন’ই হলো কবির নামের সঠিক বানান। তাই ‘জসীমউদ্দীন’, ‘জসীমউদ্দীন’, ‘জসীমউদ্দিন’ ‘জসীম উদ্দীন’ এবং ‘জসীম উদ্ দীন’ সব বানান কবির নামের বিকৃতি। জসীম উদ্দীনের মত বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কবির নামের বানানের এ ধরনের বিকৃতি কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। বিশেষ করে সরকারি পাঠ্যবইয়ে যখন ভিন্ন ভিন্ন বইয়ে তার নাম ভিন্ন ভিন্ন ভাবে লেখা হয় সেটা তখন আরো দুঃখজনক ঘটনায় পরিণত হয়। এমনকি প্রথম শ্রেণীতে পাঠ্যবইয়ে এ কবিতায় কবির নাম লেখা হয়েছে এক শব্দে জসীমউদ্দীন।

প্রথম শ্রেণীর বাংলা বইটি ২০১৩ সাল থেকে পাঠ্যবই হিসেবে নির্ধারিত। এটি সঙ্কলন, রচনা ও সম্পাদনা করেছেন শফিউল আলম, মাহবুবুল হক, সৈয়দ আজিজুল হক ও নূরজাহান বেগম।
ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা চারুপাঠ এবং অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সাহিত্য-কণিকা বই দু’টি ২০১৫ সাল থেকে পাঠ্যবই হিসেবে নির্ধারিত। বই দু’টি সঙ্কলন, রচনা ও সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক, অধ্যাপক শ্যামলী আকবর, অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, ড. সরকার আবদুল মান্নান, ড. শোয়াইব জিবরান ও শামীম জাহান আহসান।

নবম-দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য বইটি ২০১৫ সাল থেকে পাঠ্য। এটির লেখক ও সঙ্কলক হলেন, অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান, অধ্যাপক নূরজাহান বেগম, অধ্যাপক শ্যামলী আকবর, অধ্যাপক ড. মাসুদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, ও ড. শোয়াইব জিবরান। প্রথম সংস্করণ সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক।

ষষ্ঠ শ্রেণীর আনন্দপাঠ বইটি ২০০৭ সাল থেকে সহপাঠ্য হিসেবে নির্ধারিত। বইটি সঙ্কলন ও সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক ফাতেমা চৌধুরী, ড. সরকার আবদুল মান্নান, জিয়াউল হাসান, নুরুন নাহার ও মো: মতিউর রহমান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়